ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬, নভেম্বর ২০২৪ ১৪:৫৩:০৯ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

সাহিত্যে নোবেলজয়ী প্রথম নারী সেলমা রাগেরলফ

ট্রেস জফি

উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত : ০২:৪৫ পিএম, ১২ নভেম্বর ২০১৭ রবিবার | আপডেট: ০৯:৩১ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ মঙ্গলবার

নোবেল পুরস্কার প্রচলন করেন সুইডিশ বিজ্ঞানী এবং ধনকুবের আলফ্রেড নোবেল। মৃত্যুর আগে এই শিল্পপতি তার স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি উইল করে গেছেন এই পুরস্কারের জন্য। সাহিত্যে নোবেল দেয়া সম্পর্কে আলফ্রেড নোবেলের কথা হচ্ছে- “তাদেরই সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেয়া হবে যারা একটি আদর্শগত প্রবণতার মাধ্যমে কোন অনন্য সাধারণ কাজ প্রদর্শন করতে পারবেন।”


১৯০১ সালে সুলি প্রুধোমকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেয়ার মাধ্যমে “সাহিত্যে নোবেল” পুরস্কারের প্রদচারণা শুরু হয়।


নারী হিসেবে সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন সেলমা রাগেরলফ। তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে। এই সুইডিয় সাহিত্যিক আদর্শগত সাহিত্যের পাশাপাশি তার লেখায় তুলে ধরেছেন সাহিত্যের এক অনন্য সাধারণ অধ্যায়। যা মানুষের মন ও মননে অতুলনীয় কল্পনার জন্ম দিতে পারে অতি সহজে। এছাড়াও তার লেখায় রয়েছে আধ্যাত্মিকতার সুনিপুন বুনন।


সেলমা রাগেরলফ-এর পুরো নাম সেলমা ওতিলিয়ানা লভিসিয়া রাগেরলফ। তিনি ১৮৫৮ সালের ২০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৪০ সালের ১৬ মার্চ চিরনিদ্রায় শায়িত হন।


উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম :
সেলমা ওতিলিয়ানা লভিসিয়া রাগেরলফ মূলত সুইডিয় ভাষায় সাহিত্য রচনা করতেন। যদিও বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত হয়েছে। তার লেখা বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- উপন্যাস: অদৃশ্য সংযোগ, জেরুসালেম, লিল জেক্রোনার বাড়ি, নির্বান্ধব মানুষেরা, লোয়েনসকোল্ডদের আংটি ইত্যাদি। গল্প সংকলণ বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- এক সুয়েডিয় বাস্তুভিটা থেকে, নীল নদের চমৎকার রোমাঞ্চ অভিযান বা এডভেঞ্চার অব নিলস ইত্যাদি। চিরায়ত শিশুদের নিয়ে সেলমা ওতিলিয়ানা লভিসিয়া রাগেরলফ-এর একমাত্র বই মানব ও দানবেরা। এয়াড়াও তিনি বেশ কিছু আত্মজীবনী রচনা করছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- মারবাকা, আমার বাল্যস্মৃতি, সেলমা রাগেরলফের ডায়েরি ইত্যাদি।


সংক্ষিপ্ত জীবনী :
জন্ম ১৮৫৮ সালের ২০ নভেম্বর সুইডেনের মারবাকা অঞ্চলের ভার্মল্যান্ড শহরে। বাবা এরিখ গুস্তাফ রাগেরলফ। তিনি সেনাবাহিনী একজন কর্মকর্তা ছিলেন। মাত্র তিন বছর বয়সে পক্ষঘাতগত কারণে সেলমা ওতিলিয়ানা লভিসিয়া রাগেরলফ পঙ্গুত্বের শীকার হন। পরবর্তীতে তিনি আর কখনো নিজে নিজে চলাফেরা করতে পারতেন না। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণ থেকে তিনি বঞ্চিত হন। পঙ্গুত্বের ফলে তার পড়ালেখার জগত কিংবা সার্বিক বিষয়ের জগৎ স্থির হয়ে গেলেও তিনি মানসিকভাবে কখনো ভেঙ্গে পড়েননি। মানসিক শক্তিতে তিনি ছিলেন বলিয়ান। পরবর্তীতে তিনি অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। ছোটবেলায় দাদি, মায়ের কাছে শোনা বিভিন্ন কাহিনীকা, গল্প তার লেখায় চমৎকারভাবে উপস্থাপিত হয়েছে পরবর্তীতে। সেসব তিনি লেখায় তুলে এনেছেন অকল্পনীয় কল্পনা শক্তির প্রভাবে।


সেলমা রাগেরলফ-এর উত্থান :
তিনি কখনো ভেঙ্গে পড়েননি। কখনো পিছু ফিরে তাকাননি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না পেলেও তিনি অনেক বিষয়ে পড়াশোনা করার ফলে প্রভুত জ্ঞানের অধিকারী হয়েছিলেন। তাই পরবর্তীতে ১৮৮২ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমের “রয়েল উইমেনস সুপিরিয়র ট্রেনিং একাডেমি” থেকে শিক্ষকতা করার প্রশিক্ষণ নেন। কিন্তু সেই বছরই তার বাবা মারা গেলে তিনি পরিবারের হাল ধরেন। কিন্তু ১৮৮৫ সালে তিনি ঠিকই শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন।


১৮৯৫ সালে সুইডিয় পত্রিকা ইডান-এ গল্পলেখা প্রতিযোগিতায় গল্প লিখে প্রথম স্থান অধিকার করার মাধ্যমে লেখালেখির জগতে সেলমা ওতিলিয়ানা লভিসিয়া রাগেরলফ-এর প্রবেশ। তখন থেকেই তিনি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন। এক সময় শিক্ষকতা ছেড়ে তিনি লেখালেখির জগতে সম্পূর্ণভাবে মনোনিবেশ করেন।


জীবনাবসান :
মানুষকে কল্পনার জগতে ভাসিয়েছেন অজস্রবার। কিন্তু বাস্তব জীবনে সেলমা রাগেরলফ-এর কোনো পারিবারিক জীবন ছিলো না। জীবনের শুরুর লগ্নে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সারাজীবন একাকিই থেকেছেন। দীর্ঘ রোগ-শোক বহন করার পর ১৯৪০ সালের ১৬ মার্চ এই মহান নারী সাহিত্যিকের জীবনাবসান হয়।