আন্তন চেখভ একা এবং তার লিলিপুট মানুষেরা
ফারহিম ভীনা
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০২:০১ পিএম, ২৫ জুলাই ২০২১ রবিবার
আন্তন চেখভ
আধুনিক পৃথিবীর দিকে তাকালে আসলে চেখভের চোখ দিয়ে তাকাতে হয়। তখন দেখতে হয় কি লিলিপুট সব মানুষ দাঁড়িয়ে আছে বিশাল এক আন্তন চেথভের সামনে। আন্তন চেখভ একা হয়েও তিনি তখন পৃথিবী হয়ে যান বিশাল ও বৈচিত্রময়। চেখভের ভূবন পাঠ করতে হলে প্রথমে পড়তে হবে অসাধারণ সব ছোট গল্প। আন্তন চেখভ বিশ্বখ্যাত ছোট গল্পকার, নাট্যকার ও চিকিৎসক। তবে চেখভ আমার চোখে সেরা ছোটগল্পকার।
গল্পের জগত তার বিচিত্র। একজন কেরানীর প্রশাসনিক শৃঙ্খলে জীবন আচার আনুষ্ঠনিকতার কঠিন বেড়াজালে নিশেষ হয়ে যাবার গল্পটি বিশ্বদরবারে নন্দিত হয়ে ওঠে। ছোট সরকারি কর্মচারী ‘কেরানির মৃত্যু’ নামের বিশ্বখ্যাত এই গল্পে তুচ্ছ হাস্যকর ঘটনার আড়ালে ভীতসন্ত্রস্ত দাস মনোবৃত্তিকে তুলে ধরেন চেখভ।
মঞ্চে নাটক দেখতে গিয়ে যে আমলার মনে হয়েছিল জগতে তার মত সুখি কেউ নেই। সেই আপাত: সুখ ও অহংকারবোধের ইতি ঘটে এক জেনারেলের মাথায় হাচি দেয়ার দুর্ঘটনায়। মেরুদন্ডহীনতা, দাসত্ব জীবনের পরিণতিতে আসে আকস্মিক মৃত্যু। ‘বহুরুপী’ আর একটি বিখ্যাত গল্প, এখানেও মনুষ্যজীবনের দাসত্বকে তুলে ধরেন লেখক। মালিকবিহীন এক কুকুরকে নিয়ে পুলিশ ইন্সপেক্টরের কাহিনী। রাস্তার কুকুর মনে করে পুলিশ কেমন নির্দয় হয়ে ওঠে আবার যখন কুকুরের মালিক জনৈক জেনারেল পুলিশের স্বর বদলে যায়, রাস্তার কুকুরটি তখন হয়ে ওঠে ‘খাসা কুকুর’। পরে জানা যায়, না জেনারেলের কুকুর নয়, ওমনি পুলিশ স্বমূর্তি ধারণ করে। পরক্ষণেই খবর আসে কুকুরটি জেনারেলের নয় বটে, তবে তার ভাইয়ের। পুলিশ বদলে ফেলে স্বর, এই ভাবে ক্ষমতার সাথে, কর্তৃত্বের সাথে সম্পর্ক রেখে একই জিনিষের প্রতি ভিন্ন আচরণ ও বিচার তুলে ধরেন-উদঘাটন করেন মানুষের ক্ষুদ্র চরিত্র। ‘মুখোশ’ গল্পটির মূল সুরও তেমনি। ধনী ও নামকরা শিল্পপতি ক্লাবে মাতলামি করলে সবাই প্রতিবাদ করে। কিন্তু যখন ধনী মাতালের পরিচয় জানা যায়, তখন প্রতিবাদকারীদের চেহারা পাল্টে যায়। তার সাথে হ্যান্ডশেক করে কৃতার্থ ও আহ্লাদে আটখানা হয়ে যায় প্রতিবাদকারীরা। ধনী মাতালের নয়, তিনি মুখোশ উন্মোচন করেন সমাজের মানুষদের। উহ্ কি অসহ্য মেরুদন্ডহীন ও নতজানু আমরা।
টলস্টলের মহৎ ছোট গল্প মানুষের কতটুকু জমি দরকার। কিন্তু এই গল্পে তিনি স্বয়ং তলস্তয়কে চ্যালেঞ্জ করেছেন। তিনি বলেছেন কাঁধ ঝাকিয়ে মানুষের দরকার তিনহাত জমি? কখনো নয়। সেতো মৃত মানুষের জন্য। জীবিত ও পূর্ণ মানুষের জন্য তিন হাত জমি নয়, কোন নিছক তালুক নয় , তাঁর চাই পুরো পৃথিবীও প্রকৃতি যেখানে মানুষ হিসেবে পূর্ণ চরিত্র ও গুনাবলীর বিকাশ ও স্ফুরণ ঘটা সম্ভব।
তৎকালীন রুশ সামন্ততন্ত্র ও আমলাতন্ত্রের করুণ চিত্র পাওয়া যায় ‘ছয় নাম্বার ওয়ার্ড’ নামের গল্পে। মফঃস্বল শহরের উপকন্ঠে উপেক্ষিত এক হাসপাতাল, চারপাশে সেখানে আবর্জনার গন্ধ-এরকমই অনাদৃত, অবহেলিত ও উপেক্ষিত এই হাসপাতালের চিত্র আঁকতে গিয়ে চেখভ দেখিয়েছেন পৃথিবীর সুস্থ মানুষগুলোকে মানসিক হাসপাতালে রাখার জন্য একটি দুর্নীতিবাজ, হৃদয়হীন সমাজ দাঁড়িয়ে আছে। মানুষের অসহায় দুর্বল অস্তিত্ব ফুটে ওঠে তখন যখন সৎ ও সংবেদনশীল ডাক্তার আন্দ্রেইকে পুরে দেওয়া হয় ওই হাসপাতালেই। মানুষ বড় ক্ষুদ্র, নগণ্য ও অর্থহীন জীবনের পেছনে ছুটতে ছুটতে হারিয়ে ফেলে মানসিক সুস্থতা।
চেখভের গল্পের চরিত্ররা বাঁকাচোরা রাস্তার ভাঙ্গা ঘর বাড়িতে একঘেয়েমি ও আলস্যের মধ্যে-হাঁপাতে হাঁপাতে পার করে বিষাদঘন দিন-তাদের জীবন বিষণ্ণ, স্থির, নিঃসঙ্গঁ। তাই লেখকের ছোটগল্প ‘কনে’র প্রধান চরিত্র ক্ষয়রোগী যুবক সাশা স্বপ্ন দেখে অন্য জীবনের। সে যেন দিব্যচোখে দেখে মফঃস্বলের এই হতশ্রী জীবনের ইতি ঘটবে-ওলটপালট হবে যাদুবলে, বিশাল সব বাড়ি হবে মফঃস্বলে, থাকবে ফোয়ারা ও পার্ক আর স্বপ্নবান মানুষেরা। একটা অন্য জীবনের স্বপ্ন দেখে চেখভের ক্ষুদ্র মানুষেরা। চেখভ নিজেই তার লেখা সম্পর্কে বলেছেন, আমি মানুষকে বলতে চেয়েছি নিজেদের দিকে তাকান-কি বিশ্রী আর বিরস জীবন যাপন করে চলেছেন আপনারা।
‘চমৎকার লোকজন’ গল্পে চমৎকার লোকজন নেই, আছে আত্মপ্রেমিক মানুষের জীবন ট্র্যাজিডি। গল্পের সাহিত্যকর্মী ভ্লাদিমির ও বোন ডেরার জীবন ভিন্নধর্মী ট্র্যাজিডি লিখলেন, এত ট্র্যাজিডি চিহ্নিত হয়েছে নতুনভাবে। বোন ডেরার বিয়ের একমাস পর স্বামী মারা যায়। না, চেখভ দেখালেন এটা ট্র্যাজিডি নয়। এরপর ডেরা আত্মহত্যার ব্যর্থ চেষ্টা করলেন, লেখক বললেন না, এটাও ট্র্যাজিডি নয়। ভাইয়ের সাহিত্যকর্মে বোন ডেরার উৎসাহ অনুপ্রেরণা ছিল, তাও বিলীন হয়ে গেল, দুজনের সম্পর্কে চিড় ধরলো। বোন ভাইকে ছেড়ে চলে যায়, তাও ভাই ভ্লাদিমির সাহিত্য চর্চ্চা করে যায় ক্লান্তিহীন। নিজের সাহিত্য নিয়ে সে খুব তৃপ্ত, অহংকারী। একদিন দুম করে এই লেখক মারা গেলে তার সমাধি হয় সাহিত্যিকদের সাথে। একটা জীবন ও সম্পর্ক সাহিত্যের পেছনে উৎসর্গ করার পরও সাহিত্যিক হিসেবে তাকে কেউ মনে রাখে না। লেখক কি নিদারুনভাবে দেখিয়েছেন সাহিত্যিক ভ্লাদিমির জীবনের ক্ষুদ্রতা আর সাধারণ মানুষের ক্ষুদ্রতা, সাহিত্যিকদের প্রস্থান কাউকে স্পর্শ করে না।
চেখভের অসাধারণ গল্প ‘গুজবেরি’ নির্মোহভাবে তুলে ধরে শ্রেণি বৈষম্য, ধনী তালুকদারের অমানবিক আচরণ মানুষের জীবনে সুখের অনুসন্ধান করতে গিয়ে চমকে উঠতে হয়-পৃথিবীতে সুখ আসলে দুঃখের চেয়েও হীন, তুচ্ছ ও গ্লানিকর। স্বপ্নের পেছনে ছুটি চলা মানুষ কি স্বপ্নের বাস্তবায়নে পূর্ণ হয়ে ওঠে? মহিয়ান হয়ে ওঠে? রাশিয়ার কোন এক গ্রামে দুই ভাই ইভান ইভানিচ আর নিকোলাই ইভানিচের রেড়ে ওঠা–এক পরিবারের দুইটি ভিন্ন বাস্তব ও ভিন্ন জীবনের জন্ম হয়।
বড় ভাই ইভান পড়াশোনা শেষ করে পশু চিকিৎসক হয়ে ওঠেন আর ছোটভাই নিকোলাই হয়ে ওঠেন সরকারি অফিসের চাকুরে। ছোট ভাইয়ের স্বপ্ন বেড়ে ওঠে গ্রাম জীবন থেকে। সে চায় জমি-উদার ও বিস্তীর্ণ, চাষযোগ্য জমি, সাথে লাগোয়া বসতবাটী, ফলবাগান তাতে ঝোঁপের পর ঝোঁপ গুজবেরি ফল, হাওয়াফল, ঝরণা থেকে আসা জল, টুইটুম্বুর পুকুর। নিকোলাই-এর স্বপ্ন মানে বাগান, গুজবেরি ফল, হাওয়াফল আর পুকুরের জন্য সে শুরু করে কৃচ্ছতাসাধন। বেতনের সব টাকা জমিয়ে প্রায় অর্ধাহারে দিন কাটায়, ভাই ইভান উপহারে টাকা পাঠালে তাও সে সঞ্চয় করে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য। বিয়ে করে এক ধনী বিধবাকে, সে টাকাও নিয়ে নেয়-স্বপ্নের চেয়ে নাকি বড় কিছু নেই। অবশেষে স্বপ্ন ধরা দেয় বাস্তবে-ভাই ইভান দেখতে চায় ছোট ভাইকে, ততদিনে ছোটভাই বিশাল মোটাসোটা কদাকার হয়ে উঠেছে-চালচলন তার জমিদারের। ছোটভাই ভুলে গেছে তার বাবা ছিলেন সিপাহী আর দাদা চাষী। চাষীদের সামনে সে বংশের মহিমা প্রকাশ করে নিজ বাগানের গুজবেরি খাওয়ার স্বপ্নে বিভোর মানুষটি প্রায় জীবনের শেষ সময়ে সেই ফল খেল-লোভীর মত বিস্বাদ সে ফল খেয়ে বলল, দারুন তার স্বাদ। ফলটা স্বাদু নয়, ইভানের কাছে তা দারুন।
পুশকিন বলেছেন যে মিথ্যে আমাদের আনন্দ দেয় তা হাজারো সত্যের চেয়ে প্রিয়তর হয়ে ওঠে। ইভান দেখল চারপাশে অন্ধকার অসততা, অসহ্য দারিদ্র, ক্ষুদ্র দীন বাড়িঘর, মাতলামো আর ভন্ডামোর মধ্যে বড় হয়ে উঠেছে তার ভাই, জীবনের সর্বস্ব দিয়ে জমি-জমা কিনে সে জাতে উঠেছে। বড় হয়ে উঠতে গিয়ে সে আরো ক্ষুদ্র, হ্রস্ব, তুচ্ছ ও মলিন হয়ে উঠেছে। একটা জীবন গড়ে তুলেছে সে যেখানে ধনীরা উপভোগ করবে তাড়িয়ে তাড়িয়ে জীবন, গুজবেরি ফলের মত-আর চারপাশে দুখীরা দরিদ্ররা নীরবে দাঁড়িয়ে আছে। চেখভ বলেন, তার সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বলেন, একটি সুখি পরিবার দেখার চেয়ে আজকাল বিষণ্ণ কোন বিষয় নেই। আহ্ চেখভ তোমায় সালাম।
চেখভ বারবার বলেছেন তুচ্ছ ও গ্লানিময় ও ক্লান্তিকর জীবনের কথা। লেখক বিপন্ন মনে প্রশ্ন করেন কেন জীবনের দীন মানচিত্র অলৌকিক আনন্দে হেসে ওঠে না। পৃথিবীর মানুষের দিকে তাকিয়ে তিনিই বলতে পারেন অবলীলায়, আপনারা ভারি বিশ্রী জীবন যাপন করলেন মশাই। চেখভের গল্প কোন আদর্শ ও নৈতিকতার শিক্ষার কথা বলে না-কিন্তু দারুনভাবে তুলে ধরেন আপাত ও প্রকাশ্য জীবনের অন্তরালে গভীর এক জীবন। তাঁর গল্পে ছোট শহর ও গ্রামের মানুষের নিস্তরঙ্গঁ জীবন, খাঁচাবন্দি হাপিয়ে ওঠা মানুষের বিবর্ণ দিনচিত্র ফুটে ওঠে। তার গল্পের চরিত্র সব সাধারণ মানুষ, ছাত্র, চাষী, ছোট ব্যবসায়ী, খ্যাতি প্রত্যাশী লেখক, ডাক্তার, সরকারি কর্মচারী সবাই তার নায়ক। তিনি এসব চরিত্রের ভেতরের লুকানো মানুষটাকে টেনে সামনে আনেন, পাঠক বিস্মিত হলে তিনি যেন শিস বাজাতে বাজাতে চলে যান। লুকিয়ে ফেলেন গভীর মনোবেদনা।
চেখভের চরিত্রগুলো সব রুশি আত্ম-বিপ্লব পূর্ব অদ্ভুত অন্যায় সমাজ চিত্র পাওয়া যায় তার লেখার পাতায় পাতায়। তিনি অভিজাত শ্রেণির দম্ভ ও ক্ষমতা নিয়ে তুমুল হাস্য পরিহাস করেছেন। দেখিয়েছেন বিত্ত ও বৈভবের মুখোশের আড়ালে তারা কত মলিন, তুচ্ছ ও ক্ষুদ্র। নিঃস্ব ও দরিদ্র মানুষের জীবনের বেদনা তিনি তুলে ধরেছেন, কিন্তু সেখানেও পেয়েছেন অসততা, কুটিলতা আর অলসতার চিত্র। দারিদ্রকে মহান করে তোলেননি বরং বলেছেন দুঃখিত স্বরে, পৃথিবী ছেয়ে গেছে অদ্ভুত শঠতায়। দোষেগুণে মনুষ্য চরিত্র তাই সৎ মানুষ মুক্তোর মত সুন্দর হলেও সাহিত্যে তুলে ধরতে হয় সত্য, শুধু নিরেট সত্যকে। তাই চেখভের বেশিরভাগ চরিত্র দুর্বল, মেরুদন্ডহীন, ক্ষমতালিপ্সু, লোলুপ ও সুবিধাবাদী শ্রেণির। ‘খোলসের লোক’ গল্পে তাই নায়ক বেলিয়াকভ মিথ্যে ভয়ে সদা আতংক-ইয়োনিচ গল্পের ডাক্তার মফঃস্বলে কাজ করতে এসে স্বার্থপর, নীচ ও অলস হয়ে ওঠে।
কুকুরসঙ্গী নারী গল্পটি চেখভের বিখ্যাত গল্প–এটি প্রেমের গল্প, আমার কেন মনে হয় এটা নতুন বাস্তবতা নির্মাণের গল্প। অপাত দৃষ্টিতে গল্পটি বৈবাহিক খাঁচায় দুই নারী পুরুর্শের প্রেমের গল্প।দুজনের রয়েছে দুই জগতের প্রীতি দায়বদ্ধতা। কিন্তু একটি ঝড়ো ও অসম প্রেম তাদের সামনে দাঁড়ায় নতুন পৃথিবীর সামনে। শুদ্ধ ও পবিত্র জীবনে বিশ্বাসী আন্নার জীবনে তোলপাড় ঘটে গেছে–অনুশোচনায় সে ম্রিয়মান হয়ে আছে। কিন্তু সব কিছুর পর সত্য এই যে নতুন সম্পর্ককে সে অস্বীকার করতে পারে না। আর প্রেমিল গুরভ, মাঝ বয়সী, মানুষ সে-সুখি ছিল, অভিজাত ছিল–কিন্তু আন্নার সাথে দেখা হওয়ার পর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়, ছেলে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে আসছে, স্ত্রীর সাথে ডিনারে বসেছে–কিন্তু তার জীবন থেকে সব যেন হারিয়ে গেছে। একটা হাহাকার তাকে গ্রাস করে ফেলে–একটা সত্য জীবন মিথ্যা হয়ে যায় মুহুর্তেই। কোথাও তার পালিয়ে যাবার জায়গা নেই–জেলখানা হয়ে গেছে তার চেনা পরিবার।
আন্নার শহরে ছুটে যায় গুরভ, অবশেষে সিনেমা হলে দেখা হয় তার–ছোট সুন্দর মুখটি দেখে গুরভের মনে হয় বিশ্বসংসারে এর চেয়ে অপ কেউ নেই। এই তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে, এই তার সুখ ও দুঃখ, এই তার কামনা ও ভালবাসা জীবনের। এই পরকিয়া একটি নতুন বাস্তব দৃশ্য় তৈরি করে তাতে ভালো নেই, মন্দ নেই-নেই সামাজিক বিচার। এই নতুন বাস্তব লেখক্ন নির্মাণ করেন না- এইবার পাঠকের হাতে তুলে দিল গুরভ মাঝবয়সী সফল মানুষ, বহু নারী সঙ্গের পর যে পেয়েছে প্রেম আর আন্না শুদ্ধ জীবনে বিশ্বাসী নারী স্বামীকে ভালবাসতে না পেরে নতুন এক পৃথিবীর সামনে দাঁড়িয়েছে—দাঁড়াক , দাঁড়াক পৃথিবী এইখানে। পাঠক নয়া দুনিয়ায় নিজেকে চিনে নিক।
এবার এক নজরে লেখকের জীবনটা দেখে নেই–আন্তন চেখভের জন্ম ১৮৬০ সালে রাশিয়ার আজভ সাগরের তীরে। ছোট নগরীর এক মুদি দোকানির ছেলে আন্তন চেখভ–বাবা কট্টর ধার্মিক আবার মদ্যপ আর সন্তান পেটানোতে সে ছিল অত্যাচারী শাসক। প্রকৃতি ভারসাম্য ভালবাসে, চেখভের মা ছিলেন মামাময়, সংবেদনশীল আর গল্প কথক। রাশিয়ার চাশিজিবনে চেকভ মায়ের কাছেই পেয়েছিলেন গল্পের অমৃত সম্ভার। বাবার কঠোর ও দ্বৈত চরিত্র তার লেখার এসেছে–দরিদ্র পরিবারে লিখে টাকা আয় করে পেছেন চেখভ। তাই বড় হয়ে বলেছেন, শৈশবে আমার কোন শৈশব ছিল না। চেখভ পড়ে আমি জগত বিস্মৃত হই, না, না, জগত চিনি নতুন করে। শেষ জীবনে মানুষ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, man is what he believes, জগতের বিশ্বাস ও বিচারে কি যায় আসে!
ফারহিম ভীনা: গল্পকার ও প্রবন্ধ লেখক।