ভ্রমণের সময় করোনা সংক্রমণ এড়ানোর সাত উপায়
বিবিসি বাংলা অনলাইন
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১০:২৮ পিএম, ১০ আগস্ট ২০২১ মঙ্গলবার
প্রতীকী ছবি
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যেই বুধবার, ১১ অগাস্ট থেকে বাংলাদেশে সব ধরনের যানবাহন চালু হচ্ছে।
সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সব আসনে যাত্রী নিয়ে বাস, লঞ্চ ও ট্রেন চলাচল করবে। তবে যত যানবাহন চলাচল করার কথা, তার অর্ধেক চলার কথা বলা হয়েছে।
যদিও বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। দেশটিতে সোমবারও শনাক্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ১১ হাজার নতুন রোগী, মৃত্যু হয়েছে ২৪৫ জনের।
এরকম পরিস্থিতিতে দেশ-বিদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে কি ধরণের সতর্কতা নেয়া উচিৎ?
ভ্রমণের অনেক আগে থেকে সতর্ক হোন
যেকোনো ভ্রমণের অন্তত এক সপ্তাহ আগে থেকে স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে বিদেশ যাত্রার ক্ষেত্রে এই সতর্কতা আরও আগে থেকে নেয়া উচিৎ বলে বলছেন ভাইরোলজিস্ট ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. সাবেরা গুলনাহার।
তিনি বলছেন, ''বিদেশে যাত্রার তিনদিন আগে কোভিড টেস্ট করতে হয়। ফলে সবাইকে ওই টেস্টের তিন সপ্তাহ আগে থেকে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে এই সময়ের মধ্যে তিনি কোনভাবেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে না পড়েন। কারণ টেস্টে পজিটিভ হলে তার যাত্রা পিছিয়ে যাবে।''
দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে যেসব জেলা বা এলাকায় সংক্রমণের হার বেশি, সেসব স্থান এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ।
কিছুদিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের যাচ্ছেন সোহেলি ফেরদৌস। তিনি জানান, ভ্রমণের জন্য আগে ভাগেই বেশ কিছু সতর্কতা নিয়েছেন।
সোহেলি ফেরদৌস বলেন, ''আমি ব্যাগে স্যানিটাইজার ও কয়েকটা মাস্ক নিয়েছি। সেই সঙ্গে কয়েক সেট জামাকাপড় থাকবে আমার হ্যান্ড লাগেজে।''
বিমান যাত্রার সময় অবশ্য অনেক এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে যাত্রীদের মাস্ক, গ্লাভস ও স্যানিটাইজার দেয়া হয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, ''আমি ঠিক করে রেখেছি, যখন ট্রানজিট হবে, তখন কাপড় পাল্টে পুরনোগুলো এয়ারটাইট ব্যাগে ভরে ফেলবো। আবার যুক্তরাষ্ট্রে নামার পর যেহেতু স্বজনরা কাছাকাছি আসবে, তাই সেখানেও আরেক সেট নতুন কাপড় পড়ে পুরনো গুলো প্যাকেট করে ফেলবো। এগুলো পরে বাসায় নিয়ে ওয়াশে দিয়ে দেবো।''
তিনি ঠিক করেছেন, বিমান যাত্রার সময় কয়েক দফা পাল্টে মাস্ক ব্যবহার করবেন।
সোহেলি ফেরদৌস বলেন, ''যখন সবাই খাবে, সেই সময়ে আমি খাবো না। কারণ তখন সবার মাস্ক খোলা থাকে। অন্যরা খাওয়া শেষ করে যখন মাস্ক পরবে, তখন আমি খেতে শুরু করবো।''
দেশে বা বিদেশে ভ্রমণের সময় যেসব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ
দেশে বা বিদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন ভাইরোলজিস্ট ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. সাবেরা গুলনাহার:
১. শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা
যেকোনো পরিবহনে ভ্রমণের সময় যতটা সম্ভব শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
''যেহেতু গণপরিবহনে সব আসনে যাত্রী বহন করা হবে, তাই যাত্রীদের নিজেদেরই বিশেষ সতর্কতা নিতে হবে। যানবাহনের টিকেট কেনা থেকে শুরু করে ওঠা-নামা বা আসনের ক্ষেত্রে পাশের যাত্রীদের সঙ্গে যাতে শারীরিক স্পর্শ না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
২. সবসময় মাস্ক ব্যবহার
করোনাকালীন বাংলাদেশের বাস ও বিমানে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে চলাচল করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু নতুন আদেশে সব আসনে যাত্রী বহনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। ফলে পাশে যাত্রী থাকায় সবসময় মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
অধ্যাপক গুলনাহার বলছেন, ভ্রমণের শুরু থেকে সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
''অনেকে সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করেন। কিন্তু সেটা আসলে শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারে না। তাই ভ্রমণের সময় এন-৯৫ বা কেএন-৯৫ মাস্ক ব্যবহার করা উচিৎ।''
এছাড়া তিনি বাইরে থাকার সময় মাস্ক না খোলার পরামর্শ দিচ্ছেন।
৩. বাইরে না খাওয়া ভালো
অধ্যাপক সাবেরা গুলনাহার বলছেন, ভ্রমণের সময় চেষ্টা করা উচিৎ যাতে বাইরে খেতে না হয়। কারণ খাওয়ার সময় মুখে মাস্ক থাকে না, যা ঝুঁকিপূর্ণ।
''খেয়ে ওঠা বা গন্তব্যে গিয়ে খেতে পারলো ভালো। কিন্তু দীর্ঘ ভ্রমণে যদি খেতেই হয়, তাহলে চেষ্টা করতে হবে, ভিড় বা আশেপাশের লোকজনের কাছ থেকে যতটা সম্ভব দূরত্বে বসে খাওয়া। অনেক লোকের সঙ্গে একসাথে খাওয়াও উচিৎ নয়।''
৪. হাত মুখের কাছে আনবেন না
অধ্যাপক গুলনাহার বলছেন, যানবাহনে চলাচল করার সময় যতটা সম্ভব সিট, হাতল ইত্যাদি স্পর্শ না করা উচিৎ।
স্পর্শ করে ফেললে সঙ্গে সঙ্গে স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। আর সবসময় সতর্ক থাকতে হবে, হাত যেন মুখের কাছাকাছি না আনা হয়। কারণ হাতে জীবাণু লেগে গেলে সেটা মুখ বা নাক থেকে শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে, তিনি বলছেন।
যারা লঞ্চে বা ট্রেনের কেবিনে ভ্রমণ করবেন, তারা নিজস্ব একটি চাদর বা কাপড় বহন করতে পারেন। এছাড়া আসনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে স্যানিটাইজার স্প্রে ব্যবহার করে জীবাণুমুক্ত করে নিতে পারেন।
৫. পাশের সহযাত্রীও যেন স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে চলেন
যেকোনো যানবাহন ব্যবহার করা হোক না কেন, যখন আশেপাশে কেউ বসবেন, সেই সহযাত্রীও যেন স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে চলেন সেই ব্যাপারে নজর রাখার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন অধ্যাপক গুলনাহার।
৬. জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভ্রমণ না করা
তিনি বলছেন, এখনো বাংলাদেশে সংক্রমণের হার অত্যন্ত বেশি। অনেক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হতে পারলে ভালো। বিশেষ করে ভ্রমণ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
৭. টিকা নিয়ে নিন
বাংলাদেশে এখন গণ টিকা দেয়া চলছে। অধ্যাপক গুলনাহার পরামর্শ দিচ্ছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টিকা নিতে হবে। টিকা নেয়া থাকলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটা কমে আসবে।
এছাড়া পথেঘাটে কফ বা থুথু না ফেলা, শরীর আবৃত করে পোশাক পরা, কিছুক্ষণ পরপর হাতে স্যানিটাইজার ব্যবহার বা হাত ধুয়ে ফেলা, সহযাত্রীরে সঙ্গে যতটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রাখা, নিজস্ব কিছু ওষুধ বহন করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভ্রমণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে পরামর্শ দিচ্ছে
ভ্রমণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সেখানে বলা হয়েছে, গবেষণায় দেখা গেছে যে বিমানের বায়ুপ্রবাহ নিয়ন্ত্রিত থাকায় এবং প্রতি ঘণ্টায় ২০-৩০ বার ভেন্টিলেশন হওয়ায় বিমানের কেবিনে রোগের সংক্রমণের ঝুঁকি খুবই কম।
কিন্তু বিমানের একই আসন সারির মধ্যে বা পাশাপাশি যদি আক্রান্ত কেউ থাকেন, তাহলে তার হাঁচি বা কাশি বা স্পর্শের মাধ্যমে সংক্রমণ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এ কারণে যে যাত্রীরা অসুস্থ, বিশেষ করে যাদের জ্বর রয়েছে, তাদের যাত্রা কিছুদিন বিলম্বিত করার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যাদের মধ্যে সংক্রামক রোগ শনাক্ত হয়েছে, তাদের অবশ্যই কোন অবস্থাতেই ভ্রমণ করা উচিৎ নয়।