পাখির কূজনে মুখরিত উত্তরা গণভবন
বাসস
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০১:৫৮ পিএম, ১৭ আগস্ট ২০২১ মঙ্গলবার
সংগৃহীত ছবি
শুধু অপরুপ স্থাপত্য শৈলীর রাজবাড়ি আর দৃষ্টি নন্দন সংগ্রহশালা নিয়ে দর্শনার্থীদের মুগ্ধতায় আসীন হয়েছে নাটোরের উত্তরা গণভবন। বিশাল এ রাজবাড়ি জুড়ে আছে বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য গাছ। এর বাইরে আছে অসংখ্য পাখির কূজন। এখানে লোক চক্ষুর আড়ালে বাড়ছে পাখির আবাস। পাশাপাশি গণভবনে খাবারের সন্ধানে আসছে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যেতে থাকা সাপপাখি বা গয়ার। পুরো গণভবন যেন পাখির অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে।
অরিয়েন্টাল ডার্টার বা সাপপাখি বা গয়ার প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে সারাবিশ্বে বিলুপ্তপ্রায় এ পাখির সংখ্যা মাত্র চার থেকে পাঁচ হাজার। এ কারণে আইইউিসএন-এর প্রায়-বিপদগ্রস্থের তালিকায় এ পাখিকে রাখা হয়েছে। উপমহাদেশের ভারতসহ কয়েকটি দেশে এর দেখা মেলে। সম্প্রতি এ পাখির দেখা মিলেছে নাটোরের উত্তরা গণভবনে। মুক্ত আকাশে ঘুরে বেড়ানো পর্যটক এ পাখির যাতায়াতের বিরতিস্থল আমাদের উত্তরা গণভবন।
আকাশ ছোঁয়ার চেষ্টায় কয়েক শত বছর ধরে সারি করে দাঁড়িয়ে থাকা পাম গাছগুলো দীর্ঘদিন ধরে হাজারো দেশী টিয়া পাখির আবাস। সকাল হতে না হতে ঝাঁক ধরে বেরিয়ে পড়ে খাবারের সন্ধানে। আর নীড়ে ফিরে সন্ধ্যায়। হাজারো টিয়ারক’’জনে মুখর হয় গণভবনের গোধূলী বেলা। তবে ঐ সময়ে একটি মাত্র টিয়া পাখির কান্না শুনতে পাওয়া যায়। মিনি চিড়িয়াখানাতে আটকে থাকা টিয়া ‘চুঁই’ ডানা ঝাপটিয়ে বলতে চায় যেন, আমি ওদের মত মুক্ত থাকতে চাই। পাখি নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা চিড়িয়াখানাতে আটকে থাকা দেশীয় এ টিয়াকে মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের প্রতি।
সমস্ত গণভবন সাদা-কালো’র হাড়িচাচা পাখির রাজত্ব। সারাদিন হ্রদে চলে অজস্র ছোট পানকৌড়ির খাবার অন্বেষণ। গাছে গাছে চড়ে বেড়ায় তিন প্রজাতির কাঠ ঠোকরা। ঝোপ-জঙ্গলে দেখা মেলে বড় কুবো’র। সবজি বাগানে বাস করে ফিস ঈগল। সময়ে সময়ে দেখা দেয় তিশা বাজ। গাছে গাছে বাস করে পাঁতি সরালি। খাবার সন্ধানে খাল-বিলের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় ওরা। অনেকে দেশীয় এ পাখিকে পরিযায়ী বলে ভূল করেন। আর সন্ধ্যায় দেখা মেলে খুড়ুলে পেঁচার। ওদের বিচরণে স্নিগ্ধ হয় সন্ধ্যা। গাছে গাছে বেঁধে রাখা কলসীগুলোতে দিনের বেলায় ওদের বাস। পেঁচারা সংখ্যায় ক্রমশ বাড়ছে। সাধারণ ও জঙ্গল ময়না, ঘুঘু, ডাহুক,কয়েক প্রজাতির মাছরাঙা আর বুলবুলে গণভবনে বাসকারী পাখিদের সুরক্ষা দিতে এবং পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ১৫ জুন পানি সম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়ার উত্তরা গণভবন পাখি অভয়াশ্রম উদ্বোধন করেন। জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় উদ্বোধনকৃত এ অভয়াশ্রমে পাখিদের উপযোগী অসংখ্য গাছ রোপণ করা হয়েছে, তৈরী করা হয়েছে পাখির আবাস।
উত্তরা গণভবনে পাখিদের অবস্থান নিয়ে কাজ করছেন ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার মূর্তজা সারওয়ার। বিউটিফুল প্লানেট আরথ্ এর মেম্বার অব এ্যানিম্যাল কিংডম সারওয়ার বলেন, ২০২০ সালের মে মাস থেকে এ বছরের ফেব্রয়ারি অবধি বেশ ক’বার বার্ডিং করেছি উত্তরা গণভবনে। দেখেছি, রাজপ্রাসাদ বেষ্টিত দিঘীর চারপাশের পুরনো আম বাগানে গাছের ডালে ডালে উড়ে বেড়ায় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। জলাধারে মাছ খেতে আসে কয়েক প্রজাতির বক। আপন মনে ঘুরে বেড়ায় ডাহুক। পানকৌড়ি তো আছেই, বিলুপ্তপ্রায় সাপপাখিকেও দেখা গেছে একদিন। হাজার হাজার টিয়া উড়ে যাওয়ার অপরুপ দৃশ্য চোখে পড়েছে অনেকবার। পুরনো ঐ বাগানে খুব ভালো ব্রীডিং হয়েছে খুঁড়ুলে পেঁচাদের। লকডাউনে উত্তরা গণভবনে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ থাকায় পাখিদের বিচরণ হয়েছে নির্বিঘ্ন। গণভবনে ৪৩ রকমের পাখি দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার।
পক্ষিকূলের আশ্রয় ও খাদ্য নিশ্চিতকরণ প্রকল্পের সমন্বয়কারী যশোধন প্রামানিক বলেন, উত্তরা গণভবন এখন পাখিদের অভয়াশ্রম। অভয়াশ্রমের পাখিদের সুরক্ষা দিতে আমবাগানসহ গণভবন জুড়ে দেশীয় ফলের গাছ বৃদ্ধি করলে ভালো হয়।
গণভবনে পাখিদের অবাধ বিচরণ,অভয়াশ্রম তৈরি-এসব দেখে-শুনে পাখিপ্রেমীদের প্রত্যাশা আরো বেড়ে গেছে।