আশ্রয় হারাবে ২১ কোটির বেশি মানুষ: বিশ্বব্যাংক
অনলাইন ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১২:৪৪ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ বুধবার
প্রতীকী ছবি
জলবায়ু পরিবর্তনে বিপর্যস্ত সারা বিশ্ব। একারণে আগামী তিন দশকের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ২১ কোটির বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত (ঘরছাড়া) হতে পারে। শুধু দক্ষিণ এশিয়ারই চার কোটির বেশি মানুষ ঘরছাড়া হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের হালনাগাদ গ্রাউন্ডসওয়েল প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের ছয়টি অঞ্চলের ২১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে। ২০৩০ সালের দিকে অভ্যন্তরীণ অভিবাসন বিস্তার লাভ করবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে তা তীব্র আকার ধারণ করবে।
এই সংকট মোকাবিলায় ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমন কমানো ও টেকসই-পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে অভিবাসনের হার ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের জীবন-জীবিকা কেড়ে নেয়। মানুষকে বস্তিতে নামাতে বাধ্য করে। বিশ্বব্যাংকের পর্যালোচনায়, ২০৫০ সালের মধ্যে সাব-সাহারান আফ্রিকায় ৮ কোটি ৬০ লাখ মানুষ, পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় ৪ কোটি ৯০ লাখ, দক্ষিণ এশিয়ায় চার কোটি, উত্তর আফ্রিকায় ১ কোটি ৯০ লাখ, লাতিন আমেরিকায় ১ কোটি ৭০ লাখ এবং পূর্ব ইউরোপ ও মধ্য এশিয়া অঞ্চলে ৫০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বিশ্ব। বিগত ৫০ বছরে বন্যা ও তাপপ্রবাহের মতো দুর্যোগগুলো বেড়েছে চার থেকে পাঁচ গুণ। এ সময়ে দুর্যোগের কারণে মৃত্যু হয়েছে ২০ লাখের বেশি মানুষের।
বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) প্রকাশিত এক জরিপে এ তথ্য জানানো হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, হুমকিতে পড়ছে মানুষের জীবন। পাশাপাশি বাড়ছে অর্থনৈতিক ক্ষতিও। বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তন আর এর ভয়াবহতা নিয়ে বারবার সতর্ক করে আসলেও মানুষের মধ্যে নেই কোনো ভ্রুক্ষেপ। পরিবেশ রক্ষার পরিবর্তে উল্টো পরিবেশ দূষণ নিয়েই ব্যস্ত সবাই।
জাতিসংঘের জরিপে বলা হয়, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ৫০ বছরে ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, জরিপটি চালানো হয়েছে ১৯৭৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ১১ হাজারের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে। সত্তরের দশকে গড়ে ৭০০ দুর্যোগ দেখা দিলেও ২০১০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় তিন হাজারের ওপরে।
ডব্লিউএমও আরও জানায়, বিগত কয়েক বছরে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বন্যা, ঝড় এবং খরায়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা এবং আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। কেবল এ বছরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, অনেক দেশেই দেখা দিয়েছে তীব্র দাবদাহ, আবার কোথাও কোথাও হয়েছে ভয়াবহ বন্যা। জরিপটি বলছে, ৫০ বছরের আবহাওয়ার চিত্রটি আমাদের জন্য সতর্কবার্তা।
বিগত ২০ বছরে সবচেয়ে বেশি তিন লাখ মানুষের মৃত্যু হয় ইথিওপিয়ার খরায়। আর হারিকেন ক্যাটরিনায় ক্ষতি হয় ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সম্পদের। তবে ক্ষতির পরিমাণ বাড়লেও কমেছে প্রাণহানি। ডব্লিউএমও বলছে, গত শতকের সত্তরের দশকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে প্রতি বছর গড়ে ৫০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
তবে বিগত ১০ বছরে মৃত্যুর সংখ্যা কমে প্রতি বছর ১৮ হাজারে দাঁড়িয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সতর্ককরণ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে এমনটি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাসচিব।
তবে বিপর্যয়ে মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার খবরটি ইতিবাচক হলেও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য তা বেশ আশঙ্কাজনক। কারণ বিগত ৫০ বছরে ২০ লাখ মৃত্যুর ৯১ শতাংশই হয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।