ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২১, নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৪৭:২৩ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

শ্রোতার কাছে পল্লীগীতির আলাদা কদর আছে: জোহরা আলীম

আইরীন নিয়াজী মান্না

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:০১ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০২১ রবিবার

কণ্ঠশিল্পী জোহরা আলীম।  ছবি: উইমেননিউজ২৪.কম।

কণ্ঠশিল্পী জোহরা আলীম। ছবি: উইমেননিউজ২৪.কম।

লোকসঙ্গিত সম্রাট, মরমী শিল্পী আব্দুল আলীমের কনিষ্ঠ সন্তান কণ্ঠশিল্পী জোহরা আলীম। বসবাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রে। সংসারের পাশাপাশি ব্যস্ত আছেন সঙ্গিত নিয়ে। প্রবাসজীবনে নিয়মিত নিউ ইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে অনুষ্ঠান করছেন। শুদ্ধ ধারার বাংলা গানকে পৌঁছে দিচ্ছেন শ্রোতার কাছে। সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে তিনি উইমেননিউজ২৪.কম-এর কাছে তুলে ধরেন সঙ্গিত নিয়ে নানা কথা। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন উইমেননিউজ সম্পাদক আইরীন নিয়াজী মান্না।

উইমেননিউজ: কেমন আছেন? প্রবাসে সময় কাটছে কি ভাবে?
জোহরা আলীম: ভালো আছি। স্বামী-সন্তান-সংসার আর সঙ্গিত নিয়ে সময় কাটছে বেশ ভালো ও ব্যস্ততায়।  এখানে প্রবাসে নানা রকম সামাজিকতা করে আর কাজের ব্যস্ততায় সময় যেন একটু দ্রুতই কেটে যাচ্ছে। 

উইমেননিউজ: প্রতি বছর দেশে যান? দেশ ফেলে প্রবাসে কেমন লাগে? 
জোহরা আলীম: নানা ব্যস্ততায় প্রতি বছর আসলে দেশে যাওয়া হয় না।  তবে দেশকে সব সময়ই খুব মিস করি।  যারা বিদেশে থাকে তারাই জানে নিজ দেশ, আপনজন, ভাইবোন ফেলে বিদেশে থাকাটা কতটা বেদনার আর কঠিন। জীবনের প্রয়োজনে প্রবাসে আছি। তবে আমি সারাক্ষণ আমার দেশ ও ভাইবোনদের মিস করি।

উইমেননিউজ: ক্যারিয়ারে সমস্যা হয় না…?
জোহরা আলীম: ক্যারিয়ারে কিছুটা তো সমস্যা হয়ই।  দেশে যেভাবে গান করতাম এখানে সঙ্গত কারণেই সেভাবে গান করা বা চর্চা করা সম্ভব হয় না।  এখানে সে সুযোগটা কম।  প্রবাসে দেশের মত অত অনুষ্ঠানও হয় না।  তাই সুযোগও সংক্ষিপ্ত।  তাছাড়া এখানে তো সব কাজ নিজেকেই করতে হয়। যার কারণে গানের জন্য অনেকটা সময় দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।  তারপরও আমি চেষ্টা করি নিয়মিত চর্চা করার।  গান যে আমার প্রাণ।

উইমেননিউজ: আপনার গানের সিডি কয়টি যদি বলতেন।
জোহরা আলীম: বাজারে আমার মর্ডাণ-ফোক গানের একটি সিডি আছে।  দেশের বিশিষ্ট সুরকার ও গীতিকার হাসান মতিউর রহমানের কথা ও সুরে ‘জ্বালা’ নামে এই সিডিটি প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে।  পরে তারা সিডিটি বাজারজাত করেন।  এছাড়া দরবারী গানের একটি সিডি আছে আমার। এই সিডিগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। 
আগামীতে আমার দুইটি গান ইউটিউব চ্যানেলে আসছে।  একটি দ্বৈত এবং একটি একক গান।  এরই মধ্যে গানের কাজ শেষ হয়ে গেছে। এখন মিউজিক ভিডিওর কাজ চলছে। প্রত্যাশা করছি অচিরেই শ্রোতা-দর্শকরা গানগুলো ইউটিউবে দেখতে ও শুনতে পারবেন।

উইমেননিউজ: আপনার সঙ্গিত জীবন নিয়ে কিছু বলুন। পল্লীগীতি ছাড়া আর কি কি গান করেন আপনি?
জোহরা আলীম: সঙ্গিতময় একটি পরিবারে আমার জন্ম। বাবা লোকসঙ্গিত সম্রাট আব্দুল আলীমের কারণে সেই ছেলেবেলা থেকে আমি গানের ভুবনে বড় হয়েছি। বাসায় আমি সবার ছোট। বড় ভাই-বোনরা প্রায় সকলেই গানের সাথে জড়িত। তাই গানের একটি নির্মল পরিবেশে আমার বড় হয়ে ওঠা। মাত্র ছয় বছর বয়সে আমার গানে হাতেখড়ি। সে থেকে গানের সাথেই আছি। পল্লীগীতি ছাড়াও নানা ধরনের গান আমি করি। আধুনিক, লালনগীতি, নজরুল সঙ্গিত করি নিয়মিত। পাশাপাশি রবীন্দ্র সঙ্গিতও করি।  ছোটবেলায় আমি বেশি আধুনিক গান গাইতাম।  পরে পল্লীগীতির প্রতি ঝুঁকি। 

উইমেননিউজ: তাহলে কি বলা যায় বাবার পথ অনুসরণ করেই পল্লীগীতির দিকে আসা?
জোহরা আলীম: অনেকটা সেরকমই। তাছাড়া এক সময় আমি বুঝতে পারলাম শ্রেুাতার কাছে পল্লীগীতির একটি আলাদা কদর আছে। পল্লীগীতির কথা ও সুর আমাকে ভীষণ আকর্ষণ করে। এক ধরণের প্রাণ খুঁজে পাই আমি এ গানে। এছাড়া আমি মনে করি বাবাকে নতুন প্রজন্মের শ্রোতাদের কাছে বাঁচিয়ে রাখতে পল্লীগীতি আমাকে অবশ্যই বেশি বেশি গাইতে হবে।

উইমেননিউজ: আপনার বাবা আমাদের দেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সম্মানিত শিল্পী। লোকসঙ্গিত সম্রাট, মরমী শিল্পী আব্দুল আলীমের কনিষ্ঠ সন্তান আপনি।  আপনার বাবা সম্পর্কে কিছু বলুন।
জোহরা আলীম: লোকসঙ্গিত সম্রাট, মরমী শিল্পী আব্দুল আলীমের সন্তান হিসেবে আমি গর্ববোধ করি সব সময়। অহংকারবোধ করি। আসলে এ অনুভূতি বলে বোঝানোর ভাষা আমার জানা নেই। আমার বাবা দরাজ কণ্ঠের অধিকারী ছিলেন।  দেশের ঘরে ঘরে গানপাগল মানুষদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুর এত বছর পরও তিনি বাংলাদেশের মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয়। আজও গ্রাম থেকে শহরে ঘরে ঘরে তার গান বাজে। মানুষ তাকে মনে রেখেছে তার বলিষ্ঠ কণ্ঠের কারণে। মরমী শিল্পী আব্দুল আলীম শুধু একজন ভালো কণ্ঠশিল্পীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন অত্যন্ত সরল ও বিশাল হৃদয়ের মানুষ। আজও আমার বাবার জনপ্রিয়তা অক্ষুন্ন রয়েছে। কোথাও গেলে মানুষ যখন জানতে পারে আমরা তার সন্তান তারা এগিয়ে আসে, আমাদের সাথে কথা বলে, পরিচিত হয়। আব্বার প্রতি তাদের আবেগ ও ভালোবাসা আমরা অনুভব করি। আব্বার প্রতি মানুষের ভালোবাসা দেখে আমাদের কাঁন্না চলে আসে।

উইমেননিউজ: আপনারা মোট কয় ভাইবোন? আপনার পরিবারের আর কে কে গানের সাথে জড়িত?
জোহরা আলীম: আমরা মোট ৭ ভাইবোন।  ৪ বোন এবং ৩ ভাই। ৬ ভাইবোনই সঙ্গিতের সাথে জড়িত। তারা সবাই নিয়মিত টেলিভিশন, রেডিও এবং স্টেজে গান করেন। শুধু এক ভাই ভালো তবলা বাজান। তার গানের কণ্ঠ বেশ ভালো হলেও তিনি অনুষ্ঠানিকভাবে গান করেন না। 

উইমেননিউজ: আপনার প্রাপ্ত পুরস্কার নিয়ে কিছু বলুন।
জোহরা আলীম: আমি বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছি।  সবগুলোর কথা এ সময় মনে করে বলাও বেশ কঠিন। তবে উল্লেখযোগ্য হলো, নতুন কুঁড়ি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পুরকার, বাংলা একাডেমী থেকে একটি পুরস্কার, ফোবানা সম্মাননা, লোকসঙ্গিত সম্মেলন-২০২১ সম্মাননা। 

উইমেননিউজ: গান নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
জোহরা আলীম: যেহেতু আমি দেশের বাইরে থাকি তাই ইচ্ছে থাকা স্বত্তেও অনেক কিছু করতে পারি না।  তবে পরিকল্পনা আছে আমেরিকায় আমার আব্বার নামে একটি সঙ্গিত একাডেমী করবো। পাশাপাশি নিজের গানের প্রচার ও প্রসারে নিয়মিত কাজ করে যাবো। আজীবন সঙ্গিতের সাথে, ভালো গানের সাথে থাকতে চাই।

উইমেননিউজ: শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
জোহরা আলীম: আমি আমার প্রিয় শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে একটি কথাই বলতে চাই, আপনারা বেশি বেশি করে বাংলা গান শুনবেন, বাংলা গানের সাথে থাকবেন। আমাদের সংস্কৃতিকে আমরা বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিতে চাই। এ প্রয়াসে আমরা সবাই এক সাথে কাজ করতে চাই। আপনারা ভালোবেসে পাশে থাকলেই তা সম্ভব হবে। 

উইমেননিউজ: এত ব্যস্ততার মধ্যেও সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
জোহরা আলীম: ধন্যবাদ আপনাকে এবং উইমেননিউজ পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে।