অন্নদাশঙ্কর রায়ের ২০তম প্রয়াণ দিবস
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১১:১৭ এএম, ২৮ অক্টোবর ২০২১ বৃহস্পতিবার
ফাইল ছবি
‘তেলের শিশি ভাঙল বলে/ খুকুর পরে রাগ করো। /তোমরা যে সব বুড়ো খোকা/ভারত ভেঙে ভাগ করো!’ কিংবা ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা/গৌরী মেঘনা বহমান/ততকাল রবে কীর্তি তোমার/শেখ মুজিবুর রহমান।’
এ দুটি ছড়ারই রচয়িতা অন্নদাশঙ্কর রায়। তার রচিত অনেক পঙ্ক্তিমালাই মানুষের মুখে উচ্চারিত হয়। অন্নদাশঙ্কর রায়ের ২০তম প্রয়াণ দিবস আজ। তিনি ২০০২ সালের ২৮ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। তার জন্ম ১৯০৪ সালের ১৫ মার্চ ভারতের উড়িষ্যার ঢেঙ্কানলে।
অন্নদাশঙ্কর রায় কেবল ছড়াকারই নন। একাধারে তিনি ছিলেন একজন ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, কবি ও চিন্তাবিদ। শুধু বাংলা ভাষা নয়, উড়িয়া ভাষাতেও তিনি সাহিত্য রচনা করেছেন।
অন্নদাশঙ্করের জন্ম ব্রিটিশ ভারতে বর্তমান উড়িষ্যার ঢেঙ্কানলে। বাবা ঢেঙ্কানল রাজ এস্টেটের কর্মী নিমাইচরণ রায় এবং মা হেমনলিনী। ঢেঙ্কানলেই তার শিক্ষাজীবন শুরু। এরপর ১৯২১ সালে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পড়াশোনার এ পর্যায়ে সংবাদপত্রের সম্পাদনা শিখতে কলকাতা ‘বসুমতী’ পত্রিকার সম্পাদক হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষের কাছে আসেন। এই কাজ তার বেশিদিন ভালো লাগেনি। এরপর আইএ পরীক্ষা দেন এবং তাতে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯২৫ সালে বিএ পরীক্ষাতেও তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম স্থান অর্জন করেন। ১৯২৭ সালে এমএ পড়াকালীন আইসিএস পরীক্ষায় তিনি আবারও প্রথম স্থান অধিকার করেন। প্রথম ভারতীয় হিসেবে তিনিই এ গৌরব অর্জন করেন। একই বছরে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারি খরচে আইসিএস হতে ইংল্যান্ডে যান।
সেখানে সিভিল সার্ভিসের প্রশিক্ষণ নেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন। ইংল্যান্ডসহ ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালিসহ নানা দেশে তিনি ভ্রমণ করেছিলেন। এই বিশ্বভ্রমণই তাকে লেখার রসদ দিয়েছে।
মার্কিন কন্যা অ্যালিস ভার্জিনিয়া অনফোর্ডকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। তার নাম দেন লীলা রায়। তার স্ত্রী বহু বই বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। অন্নদাশঙ্করের অনেক লেখা ‘লীলাময়’ ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছিল।
ওড়িয়া থেকে শুরু করে ইংরেজি, হিন্দি ও সংস্কৃত ভাষা জানলেও তিনি বাংলা ভাষাকেই সাহিত্য সৃষ্টির মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। দীর্ঘজীবনের অভিজ্ঞতায় প্রায় সত্তর বছর ধরে তিনি প্রবন্ধ, উপন্যাস, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, ছড়া, কবিতা, নাটক, পত্রসাহিত্য, আত্মজীবনীমূলক রচনা প্রভৃতি লিখে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার রচিত উপন্যাসের সংখ্যা ২২টি। তার বিখ্যাত উপন্যাসগুলোর মধ্যে পথে প্রবাসে, অজ্ঞাতবাস, কলঙ্কবতী, অসমাপিকা উল্লেখযোগ্য। উপন্যাসমালার ফাঁকে ফাঁকে তিনি বেশ কিছু ছোটগল্পও লিখেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- প্রকৃতির পরিহাস, দুকান কাটা ১৯৪৪, হাসনসখী, মনপবন, যৌবনজ্বালা, কামিনীকাঞ্চন, রূপের দায়,কথা, কাহিনী ইত্যাদি।
দেশ-ভাগ, দাঙ্গা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তার লেখনী ছিল আজীবন সোচ্চার। ছড়াকার হিসেবে অন্নদাশঙ্কর রায়ের জনপ্রিয়তা এবং সাহিত্যপ্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। আধুনিক বাংলা ছড়ায় যে বৈচিত্র্য দেখা যায়, তার সূত্রপাত করেন অন্নদাশঙ্কর। তার বিখ্যাত ছড়ার বইগুলোর মধ্যে রয়েছে- উড়কি ধানের মুড়কি, রাঙা ধানের খৈ, ডালিম গাছে মৌ, শালি ধানের চিঁড়ে, আতা গাছে তোতা, হৈ রে বাবুই হৈ, রাঙা মাথায় চিরুনি, বিন্নি ধানের খই, সাত ভাই চম্পা, দোল দোল দুলুনি ইত্যাদি।