এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা জাপার ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১১:১১ এএম, ৫ নভেম্বর ২০২১ শুক্রবার
ফাইল ছবি
রওশদ এরশাদের অসুস্থতার মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনে তার সাবেক স্ত্রী বিদিশাকে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়েছে।
বিদিশার উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকার বারিধারায় এরশাদের বাড়ি প্রেসিডেন্ট পার্কে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির ‘পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায়’ দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখপাত্র জাফর ইকবাল সিদ্দিকী।
এ বিষয়ে এরশাদের ভাই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা রাজনীতির কোনো বিষয় না, এই বিষয় নিয়ে কথা বলার কিছু নেই। অন্য কোনো বিষয় থাকলে বলতে পারেন।”
বিদিশা যখন জাতীয় পার্টির ‘পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায়’ কো-চেয়ারম্যান হয়েছিলেন, তখন কাদের বলেছিলেন, তাদের এই পদক্ষেপের কোনো সাংগঠনিক কিংবা আইনি ভিত্তি নেই।
দুই বছর আগে এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির কাউন্সিলে চেয়ারম্যান হন জি এম কাদের। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষকের আসনে বসানো হয় এরশাদের স্ত্রী রওশনকে। সংসদে রওশন হন বিরোধীদলীয় নেতা আর কাদের হন বিরোধীদলীয় উপনেতা।
এরশাদের সঙ্গে বিচ্ছেদ হলেও তার মৃত্যুর পর প্রেসিডেন্ট পার্কে গিয়ে ছেলে শাহতা জারাব এরিকের সঙ্গে ওঠেন বিদিশা।
এরপর গত ১৪ জুলাই এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে এরিক চাচা জিএম কাদেরকে বাদ দিয়ে জাতীয় পার্টির ‘নতুন কমিটি’ ঘোষণা করেন; যদিও দলের কোনো ফোরামে তার কোনো পদ নেই।
এরপর বিভিন্ন জেলায় গিয়ে বিদিশার জাতীয় পার্টিকেন্দ্রিক তৎপরতার মধ্যে বৃহস্পতিবার তাকে ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ ঘোষণা করা হল।
সংবাদ সম্মেলনে বিদিশা বলেন, “জাতীয় পার্টির পুনর্গঠন কমিটির মুখপাত্র আমার উপরে আরেকটা গুরু দায়িত্ব অর্পণ করলেন। ইনশাল্লাহ আজ থেকে সবাইকে নিয়ে আমার পথচলা শুরু হবে, বেগবান হবে।”
এরিক তার সৎ মা রওশন এরশাদকে ‘নতুন কমিটি’র চেয়ারপার্সন ঘোষণা করেছিলেন। মা বিদিশার সঙ্গে রওশনের ছেলে রাহগীর আল মাহি সাদকে (সাদ এরশাদ) করেছিলেন কো-চেয়ারম্যান। ‘ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব’ হিসেবে ঘোষণা করেন এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদের নাম।
এরিকের সেই ঘোষণার পরপরই জাতীয় পার্টি জানায়, রওশন জাতীয় পার্টির চেয়ারপার্সন হতে চান না। এরশাদের মৃত্যুর পর রংপুরে তার আসনের এখনকার সংসদ সদস্য সাদ সরাসরি কোনো বক্তব্য দেননি।
রওশন অসুস্থ হয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হাসপাতালে রয়েছেন। সম্প্রতি তাকে দেখতে হাসপাতালেও গিয়েছিলেন বিদিশা।
সংবাদ সম্মেলনে সাবেক সংসদ সদস্য জাফর ইকবাল সিদ্দিকী বলেন, “আমাদের চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে বেশ কিছু দিন ধরে সিএমএইচে (ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) ভর্তি আছেন। আমরা তার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।”
গত ৩১ অক্টোবর বিদিশা, এরিক ও মামুনুর রশীদ সিএমএইচ হাসপাতালে রওশনকে দেখে এসেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেক কেঁদেছেন উনি। কথা বলতে পারেননি, কিন্তু ইশারাতে উনি… অনেক কষ্ট পাচ্ছেন তারা বুঝতে পেরেছেন।”
এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিনই (৩১ অক্টোবর) জাতীয় পার্টির নতুন এই ‘কমিটির’ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ কাজী মামুনুর রশীদ এবং জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান বিদিশা দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি সভা করেন বলে জানান জাফর।
ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান বিদিশাকে ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার কারণ ব্যাখ্যা করে জাফর বলেন, “এতে করে যেন পার্টির অন্যান্য কার্যক্রম আমরা চালিয়ে যেতে পারি। আশা করছি, আমাদের চেয়ারম্যান রওশন এরশাদকে আল্লাহ শিগগিরই সুস্থতা দান করবেন। আবার তিনি আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন এবং চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।”
হাসপাতালে রওশনের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিদিশা বলেন, “উনি অনেক অসুস্থ, কথা বলতে পারেননি। যখন আমি কথা বলছিলাম তখন উনি কাঁদছিলেন।
“আমি আপাকে কথা দিয়ে এসেছি, পল্লীবন্ধু (এরশাদ) এবং উনি যেভাবে জাতীয় পার্টিকে ভালবাসতেন আমিও ঠিক একই প্রক্রিয়ায় জাতীয় পার্টি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সারাদেশে কাজ করব। পল্লীবন্ধুর মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন তাদেরকে আবার আমি পুনরুদ্ধার করবো, এটাই হবে আমার একমাত্র লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যে।”
সম্প্রতি সিলেট, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ঘুরে এসেছেন জানিয়ে বিদিশা বলেন, “সব জায়গায় এক অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। সবাই নতুন কমিটি চাচ্ছে। জাতীয় পার্টির কর্মীদের মধ্যে নতুন করে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।”
‘স্বাধীনতার সপক্ষের’ দলগুলোকে নিয়ে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ‘প্লাটফর্ম’ও তৈরি করতে চান বিদিশা।