ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণে কী করবেন?
অনলাইন ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৭:৫২ পিএম, ৭ নভেম্বর ২০২১ রবিবার
ফাইল ছবি
ভিটামিন ডি শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। এর ঘাটতি হলে শরীরের সামগ্রিক ক্রিয়া নানাভাবে বিঘ্নিত হয়। একটা সময় শরীরে বড় রোগের ঝুঁকি তৈরি হয়।
দেহে ভিটামিন ডির ঘাটতি আছে কিনা সেটি বোঝার উপায় ও তা পূরণে করণীয় সম্পর্কে যুগান্তরকে বিস্তারিত জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ এবং এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম।
ভিটামিন ডি সব বয়সি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান। বিশেষ করে বাড়ন্তকালে শিশুদের দৈহিক কাঠামো তৈরি করার অন্যতম কাঁচামাল ক্যালসিয়াম, যা শরীরের ভিটামিন ডি দ্বারা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রিত হয়। শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি, দৈহিক স্থূলতা— সব কিছু ভিটামিন ডির সঙ্গে নিবিড়ভাবে সংশ্লিষ্ট।
বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই কম বয়সি শিশু-কিশোরদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস ক্রমশ বেশি মাত্রায় দেখা দেওয়ার পেছনে ভিটামিন ডির ঘাটতি একটি বড় কারণ। এই ভিটামিনের ঘাটতিতে কিছু কিছু ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে।
ভিটামিন ডি কী
নাম শুনে ভিটামিন মনে হলেও ভিটামিন ডি আসলে একটি স্টেরয়েড হরমোন। অন্যান্য ভিটামিন যেখানে অ্যান্টিঅক্সিজেন বা কো-অ্যানজাইম হিসাবে কাজ করে, ভিটামিন ডি (স্টেরয়েড হরমোন) জিন এক্সপ্রেশন নিয়ন্ত্রণ করে; অর্থাৎ দেহের প্রোটিন তৈরিতে নিয়ন্ত্রণকারীর ভূমিকায় থাকে।
প্রাণিজ ও উদ্ভিদজাত স্টেরল ও ফাইটোস্টেরল থেকে সূর্যালোকের অতি বেগুনি রশ্মি দ্বারা রূপান্তরিত হয়ে দেহে ভিটামিন ডি তৈরি হয়। ভিটামিন ডি-২ ও ভিটামিন ডি-৩ মানবদেহে থাকে।
ভিটামিন ডির পরিমাপ
রক্তের সিরামে ভিটামিন ডির মাত্রা পরিমাপ করা হয়। একজন হরমোন বিশেষজ্ঞ বা অন্য কোনো চিকিৎসক রোগীর দেহে ভিটামিন ডির ঘাটতি সন্দেহ করলে তার রক্তের ভিটামিন ডি পরিমাপ করার উদ্যোগ নেবেন।
তবে ভিটামিন ডি ঘাটতি ও পরবর্তী চিকিৎসা পদ্ধতি নিরূপণের জন্য রক্তের ক্যালসিয়াম, প্যারাথায়রয়েড হরমোন ও ফসফরাসের মাত্রাও দেখে নিতে হয়। রোগীর দেহে প্রাপ্ত ভিটামিন ডির মাত্রা অনুসারে তাকে যে কোনো দলভুক্ত করা হয়-
ভিটামিন ডি-ভিত্তিক শ্রেণি রক্তে ভিটামিন ডির
মাত্রা
সর্বোচ্চ কাঙ্ক্ষিত মাত্রা ১০০
আদর্শ মাত্রা ৫০-১০০
পর্যাপ্ত ৩০-৭০
ঘাটতি <৩০
মারাত্মক ঘাটতি <১০
মাত্রাতিরিক্ত >১৫০
ভিটামিন ডি তৈরিতে সূর্যরশ্মির ভূমিকা
রক্তে মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন ডি থাকলে একই সঙ্গে রক্তে ক্যালসিয়াম, প্রস্রাবে ক্যালসিয়াম এবং রক্তে ফসফেটের মাত্রা বেশি থাকতে পারে। সূর্যরশ্মি ভিটামিন ডি তৈরি করতে যেমন সহায়ক, তেমনই অতিরিক্ত ভিটামিন ডি ধ্বংস করতে ভূমিকা রাখে।
তাই শুধু সূর্যরশ্মি থেকে মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন ডি শরীরে জমানোর আশঙ্কা নেই বললেই চলে। অর্থাৎ শরীরে অতিরিক্ত ভিটামিন ডি জমার কারণ প্রধানত অতিরিক্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি খাওয়া।
শিশুদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি ইনজেকশন, ক্যাপসুল অথবা বিভিন্ন রকম খাদ্যে ভিটামিন ডি যুক্ত করে (ভিটামিন ডি ফর্টিফায়েড) খাবার খেয়ে অতিরিক্ত ভিটামিন ডি দেহে জমা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এদের ক্ষেত্রে শরীরে ভিটামিন ডির পরিমাণ বেড়ে গেলে যে লক্ষণগুলো দেখা দেবে তা প্রধানত রক্তে ক্যালসিয়াম বেড়ে যাওয়ার লক্ষণগুলো শারীরিক দুর্বলতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্ষুধা মন্দা, বমি ভাব অথবা বমি হওয়া ইত্যাদি। এ সময় রক্তের ক্যালসিয়াম মাপলে ১৩.৪-১৮.৮ মিলিগ্রাম/ ডেসি লিটার এর মধ্যে থাকতে পারে।
ভিটামিন ডি ঘাটতির লক্ষণ
ভিটামিন ডির ঘাটতিতে খুব দ্রুত কোনো শারীরিক লক্ষণ দেখা দেবে না। বিভিন্ন রকম অসম্পৃক্ত (আপাতদৃষ্টিতে) শারীরিক সমস্যা নিয়ে শিশু-কিশোরদের চিকিৎসকদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।
সাধারণত শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথা (মাংস, হাড় ও অস্থিসন্ধিতে) দ্রুত দৈহিক ওজন বৃদ্ধি পাওয়া, কাক্সিক্ষত দৈহিক উচ্চতা অর্জন করতে ব্যর্থ হওয়া।
বালিকাদের ক্ষেত্রে মাসিক অনিয়মিত হওয়া বা সঠিক সময়ে মাসিক শুরু না হওয়া।
বালকদের ক্ষেত্রে বয়োসন্ধিকাল শুরু হতে দেরি হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ বা উপসর্গ থাকতে পারে।
অর্থাৎ ভিটামিন ডির ঘাটতি শনাক্ত করার ক্ষেত্রে যে কোনো লক্ষণকে গুরুত্ব দিয়ে রক্তে ভিটামিন ডির মাত্রা নিরূপণের উদ্যোগ নিতে হবে।
এক্সরেতে এসব শিশুর ঘাড়ের ঘনত্ব কম দেখা গেছে। আমাদের দেশের শিশু-কিশোরদের মধ্যে ভিটামিন ডির ঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি মাত্রায় হবে ধারণা করা গেলেও বর্তমান সময়ে এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান জানা নেই।
ভিটামিন ডির উৎস
সূর্যরশ্মি শরীরের ভিটামিন ডির চাহিদার ৮০ শতাংশের বেশি ত্বকে সূর্যরশ্মি পতিত হওয়ার কারণে তৈরি হয়।
এ ছাড়া স্যালমন ফিশ, সার্ডিন, টুনা, তাজা মাশরুম, কৌটাজাত মাশরুম, ডিম (সিদ্ধ), টকদই, গরুর কলিজা খেলে ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণ হয়।
ভিটামিন ডি ওষুধ হিসেবে যাদের খেতে হবে
* নবজাতক যারা শুধুই মায়ের দুগ্ধ পান করছে এবং যারা ১০০০ মিলিলিটারের কম শিশু খাদ্যগ্রহণ করে।
* শিশু-কিশোর যারা অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা নগরে বা অস্বাস্থ্যকর শহরে (ঢাকা অন্যতম) বসবাস করছে।
* দৈহিক স্থূল শিশু-কিশোর যাদের ত্বকের বিভিন্ন অংশে মকমলের মতো কালো অংশ দেখা দিচ্ছে।
* ধর্মীয় বা অন্য কারণে পোশাকে প্রায় সারা দেহ আবৃত শিশু-কিশোর।
* খাদ্যনালির সমস্যার কারণে হজম ও বিপাকীয় কার্যক্রম হ্রাস পেলে।
* প্রাতিষ্ঠানিক জীবনযাপন (হোস্টেল, হাসপাতাল বা অফিস) যাতে রোদে যাওয়ার সুযোগ কমে যায়।