হাতের তৈরি নকশী কাঁথা বানিয়ে সফল সাবিনা
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৮:২২ পিএম, ৮ নভেম্বর ২০২১ সোমবার
ফাইল ছবি
সাবিনা শারমিন। একজন সমাজসেবী নারী। জেলা শহরে সেই ৭ বছর বয়স থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে বসবাস করছেন। বাবার হাত ধরে ব্যবসায়ী জীবনে পা বাড়ানো শুরু হয় তার। প্রথমে শুরু করেন হাতের তৈরি নকশী কাঁথার কাজ দিয়ে।
জন্মস্থান ও বেড়ে ওঠা শহরের হাটশ হরিপুর ইউনিয়নে। কুষ্টিয়া কবি আজিজুর রহমান স্কুল থেকে পিএসসি, কুষ্টিয়া সাহিত্যিক মীর মোশারফ হোসেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও কুষ্টিয়া সরকারি গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি এবং কুষ্টিয়া সরকারি গার্লস কলেজ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
সাবিনা শারমিন কুষ্টিয়ার খোকসার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল ইসলাম দুলালের স্ত্রী। তিনি একজন ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও সমাজসেবী। দায়িত্বে আছেন বিভিন্ন উদ্যোক্তা সংগঠনের। তিনি নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের খোকসা উপজেলা অ্যাম্বাসেডর এবং সিডিএল ট্রাস্ট ও নারী ফোরামের সদস্য। পথে পথে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়েছে সাবিনা শারমিনকে। তবে দমে যাননি। ২০১৫ সাল থেকে মেয়েদের বিভিন্ন পোশাক নিয়ে কাজ করে আজ তিনি সফল।
শুরুতে ব্যবসায়ের মূলধন ৫০০০ টাকা হলেও বর্তমানে তার মূলধন বহুগুণে বেড়েছে। নিজস্ব পরিমণ্ডলে তিনি এখন একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। ইন্ডিয়া থেকে মেয়েদের থ্রি-পিসসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেন।
প্রতিষ্ঠানের নাম সাবিনা বুটিক হাউজ, সমাজের কর্মজীবী নারীদের নিয়ে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী তিনি। এই প্রতিষ্ঠানের মূল সিগনেচার নকশী কাঁথা, নকশী চাদর, কুশন কভার, শাড়ি, ওয়ান পিস, টু পিস, থ্রি-পিস, ওড়না, মশারি, চাদর, ব্লক বাটিক, রঙ এবং ডাইসের কাজ, এছাড়াও চুমকি পুতি, তাতীদের পণ্য নিয়ে কাজ করছেন।
উদ্যোক্তা জীবনের গল্পটা জানালেন সাবিনা। শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর। ১৯৭৩ সালে মহান স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের শীত নিবারণের জন্য একটা তুলার জামা পেয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার যাত্রায় শামিল হন তিনি। উদ্যোগটি শুরু করার জন্য একটি বিশেষ দিনের অপেক্ষায় ছিলেন। এই বিশেষ দিনটি হলো ‘মহান বিজয় দিবস’।
কয়েক দশক আগেও কর্মক্ষেত্রে নারীদের পদচারণা চোখে পড়ার মতো ছিল না। কিন্তু এখন নারীরা ঘরে বাইরে সব পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করছেন। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। অনলাইন ব্যবসায়ের প্রবর্তনের ফলে নারীরা আরও বেশি পরিমাণে সফল উদ্যোক্তায় পরিণত হচ্ছেন৷ তেমনি একজন সাবিনা শারমিন।
সাবিনা বলেন, হাতের কাজের কদর সবসময়ই থাকে, এটা বলতেই হয়। কিন্তু আমার এই উদ্যোগ শুরু করার আগে আমি অনেকটা সময় নিয়ে বাজার বিশ্লেষণ করি। ফলে উদ্যোগের শুরু থেকেই খুব ভালো সাড়া পেয়েছি। কেননা ভিন্নধর্মী কাজের সংমিশ্রণ ঘটানোর চেষ্টা ছিল। আমার পণ্যের প্রধান ক্রেতা মূলত নারীরা। বিশেষ করে ১৫-৪০ বছর বয়সী নারী।
আমার বাবা মরহুম রুস্তম আলী ছিলেন একজন বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি। ছোটবেলা থেকেই তার ব্যবসায়ীক কর্মকাণ্ড দেখতে দেখতে আমি বড় হয়েছি। তখন থেকেই আমি নিজে কিছু করার স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু পড়াশোনা শেষ হওয়া মাত্রই বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সংসার সামলিয়ে অনেক বড় পরিসরে ব্যবসা বা এ জাতীয় কিছু করা সম্ভব হয়নি। বিয়ের পর যখন আমি গ্রামে থাকতাম, তখন আমি হাঁস, মুরগিসহ বিভিন্ন গবাদিপশু লালন-পালন করতাম। একটা সময় স্বামীর চাকরির কারণে আমি শহরে চলে আসি। শহরে সন্তানদের সামলিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে থাকি। পরবর্তী সময়ে সন্তানরা বড় হলে ২০১৫ সালে আমার সাবিনা বুটিক্স হাউজের যাত্রা শুরু করি।
ভালো লাগার বিষয় এটি যে, আমাদের পুরনো ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি। এবং দিন দিন নতুন ক্রেতার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আর্থিক লাভের কথাও জানালেন সাবিনা। বর্তমানে মাসে ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করেন। তিনি বলেন, আমাদের হাতের কাজের ধরন অনেকটা উন্নত। চাইলেই অতিরিক্ত অর্ডার নিতে পারি। তবে বড় পরিসরে আমাদের উদ্যোগ পরিচালনার কাজ চলছে। এই কাজের চাহিদা দিন দিন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমি কাজ সবসময় পছন্দ করতাম। আমার কাজ খুব ভালো লাগতো আর ছোট থেকেই ভাবতাম আমি নিজে কিছু করবো। আমার প্রতিষ্ঠান থাকবে। আমার লক্ষ্য অটুট ছিল, শত বাধা অতিক্রম করে আমার স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে গেছি। আর এ ক্ষেত্রে আমার স্বামী সবসময় সহযোগিতা করেছেন। আমি এখন সফল। পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই, এখন পরিশ্রম করছি বাকিটা জীবন পরিশ্রম করবো।
অনেক ধক্কল পাড়ি দিয়ে গড়েছি একটি জেগে দেখা স্বপ্ন। শিক্ষার কোনো বয়স নেই, অন্যের জন্য কাজ করলে নিজের জন্য কাজের অভাব হবে না। তাই শুরু করুন ছোট করে, স্বপ্ন দেখুন বড় করে। সমাজে একটি নারীও বেকার থাকবে না। নারীরা স্বাবলম্বী হলে দেশ, সমাজ, সংসার, সবাই মিলে ভালো থাকবে, উন্নত দেশ গড়তে আমাদের আরও উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী প্রয়োজন।
নতুন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের প্রতি সাবিনার পরামর্শ, স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থকতাটাই আলাদা। আমার প্রতিটি নারীর জন্য একটাই কথা থাকবে, আমরা নারী হয়েছি বলে কি হয়েছে! আমরাও মানুষ। যাদের লক্ষ্য অটুট থাকে এবং যদি পরিশ্রম করতে পারে, আমার মনে হয় নারী বা পুরুষ নয়, প্রতিটি মানুষই সফল হবে। এছাড়া আমরা আগে ওই রকম কোনো সুযোগ পাইনি, কিন্তু বর্তমান পাচ্ছি। পুরুষের পাশাপাশি নারীও এগিয়ে যাবে। ভাবতে হবে, নারী নয়, পুরুষ নয়, মানুষ হিসাবে বাঁচতে।