বিদায় কীভাবে বলি, স্যার!
ড. কাবেরী গায়েন
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৮:৫৯ এএম, ১৬ নভেম্বর ২০২১ মঙ্গলবার
ছবিটি ফেসবুক থেকে নেয়া।
স্যার, আপনাকে নিয়ে লেখার মত মানসিক স্থিতিতে যেতে সময় লাগবে। তবে আপনার সাথে পরিচয় হবার আগেই দেখেছিলাম আপনাকে এক দারুণ দাবদাহের দিনে। রাজশাহীর মে মাসের গরমে যেখানে প্যারিস রোড বাঁক খেয়েছে পশ্চিম পাড়ার দিকে, এবং যেখানে বিশাল এক কৃষ্ণচূড়া গাছ ফুলের ভারে নত হয়ে থমকে আছে, নীচে জমেছে ঘাসের সাদা ফুল সবুজ জমিনে (ক্যাম্পাসে মারামারির বন্ধ), বাতাসে অল্প ধুলোর ঘ্রাণ, সেই রাস্তায় সদ্য বিকেলে টকটকে লাল শার্ট গায়ে একজন তরুণ সাইকেল চালিয়ে প্যারিস রোডের উপরে উঠে এলেন। এমন স্মার্ট তরুণ আর দেখিনি। এর কয়েক বছরের মধ্যেই সেই তরুণ অবসর নিয়েছেন যদিও। সেই ছবি স্থির।
এই তরুণের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা, সাম্যবাদী চিন্তা ও চর্চার ক্লাসে কিংবা রেটোরিকে দুপুরের ঘুম ভাঙ্গিয়ে নিয়ে আসা, কিংবা সাবাশ বাংলাদেশে কিংবা জুবেরীতে কিংবা শুচি আপা-সুমন-মৌলি-খালাম্মা-স্যারের সংসারের নিত্য যাতায়তে কিংবা খুলনার ফুলতলায় অজস্র স্মৃতিতে তিনি আমাদের স্যার। কী আশ্চর্য! স্যার যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আমিও তখন ওখানে পড়াই!! ২০০৭ এর সেনাবিরোধী ছাত্রশিক্ষক অভ্যুত্থানে যখন বেশির ভাগ শিক্ষক জানালা খোলেন না, তখন এই অবসরপ্রাপ্ত তরুণের বাসায় আমরা কয়েকজন সভায় বসি, যার মধ্যে ছিলেন আরেক তরুণ সনৎ কুমার সাহা। আরও অনেক আগে, এই তরুণ বলেছিলেন শিক্ষক সমিতির সভায় এক শিক্ষকের মিনমিন করে বলা 'আমরা কেউই তো ধোয়া তুলসিপাতা নই' -এর বিপরীতে, ''এই যে, আমি, আমি ধোয়া তুলসিপাতা'।
২৩ শে অক্টোবর ২০২১ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ঘ' ইউনিটের পরীক্ষা নেবার জন্য ১৭ জনের টিম নিয়ে গেলাম আগের দিন। খুব ইচ্ছে ছিলো দেখে আসার এক ঝলক। কেউ কেউ বললেন, দেখা করা বারণ। পরদিন পরীক্ষাশেষে ফেরার পথে বললাম কাউকে কাউকে, এখানে এসেও দেখা করতে পারলাম না! একদিন শুধু স্যারকে দেখার জন্যই আসবো। মন বলছিলো, এখন কোন ইচ্ছে পূরণের জন্য ফের সুযোগ পাওয়া যায় না। সেই-ই ভালো। উইটি আড্ডা আর গরম দুপুরে সাইকেলে চড়া লাল টকটকে শার্ট পরা বাংলা সাহিত্যের রাজপুত্রের ছবিটাই স্থির হয়ে থাক।
বিদায় কীভাবে বলি, স্যার!
ড. কাবেরী গায়েন, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
(লেখাটি ফেসবুক থেকে নেয়া)