হ্যাক হতে পারে আপনার মস্তিষ্ক
অনলাইন ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১২:০১ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০২১ রবিবার
ফাইল ছবি
ইন্টারনেট ব্রাউজার, ভৌগোলিক অবস্থান, অনলাইন ফরম পূরণ বা কী-বোর্ডে টাইপ করা ডেটা আপনার যৌন আকাঙ্ক্ষা বা রাজনৈতিক মতাদর্শের মতো ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে। ই-মেইল অ্যাকাউন্ট বা মোবাইল নয়, এবার হ্যাক হতে পারে মানুষের মস্তিষ্ক। চিন্তাভাবনা কিভাবে বিভিন্ন অ্যাক্সেসের মাধ্যমে প্রকাশ পায় তা কল্পনা করুন। ব্রেইন-মেশিন ইন্টারফেসের বিকাশ আমাদের এসব বিষয় বিবেচনা করতে বাধ্য করে। কারণ এসব ডিভাইস কম্পিউটারকে সরাসরি মস্তিষ্কের সঙ্গে সংযুক্ত করতে সক্ষম।
বিজ্ঞান এবং নিউরোটেকনোলজি মানুষের মনস্তত্ত্ব বুঝতে সম্পূর্ণরূপে সক্ষম নয়। অন্যদিকে বর্তমানে এমন সব কনজিউমার-গ্রেড ডিভাইস রয়েছে যা সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম নিউরাল সংকেত প্রদান করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ : ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাফি (EE-এ) হেডসেটের কথা বলা যেতে পারে। যা বিপণন গবেষণায় পণ্য বা ইভেন্টের প্রতি ব্যক্তির আবেগ ও অচেতন প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়। সাইবার সিকিউরিটি ফার্ম বালুসিয়ানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা পাবলো ব্যালারিন বলেন, এ ধরনের মানসিক তথ্য একজন ব্যক্তির সমালোচনার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের একটি প্রক্রিয়া হতে পারে।
নিউরোরিস্কের প্রকৃতি
নিউরোটেকনোলজির নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা নতুন কিছু নয়; হয়রানি, সংঘটিত অপরাধ বা ব্যক্তিগত ডেটা ট্র্যাফিকের মতো ঘটনা ঘটতেই পারে। যেমনটি ইতোমধ্যেই অন্যান্য ডিজিটাল সেক্টরে ঘটছে। তবে এক্ষেত্রে নতুন হলো নিউরাল ডেটার প্রকৃতি। যেহেতু এগুলো সরাসরি মস্তিষ্কে উৎপন্ন হয়। সুতরাং ব্যক্তির পরিচয়, ব্যক্তিগত পছন্দ, সংবেদনশীল চিকিৎসা তথ্য এবং এর সূত্রকে এটি এনকোড করতে পারে।
এ ঝুঁকির বাস্তবতা প্রদর্শনের জন্য গবেষকরা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তৈরি নিউরোটেক হ্যাক করার চেষ্টা করেছেন। তাদের লক্ষ্য ছিল এমন সব তথ্য আহরণ করা যা সাইবার অপরাধীদের জন্য উপযোগী হতে পারে। এভাবে তারা সম্ভাব্য নিরাপত্তা ত্রুটিগুলোকে হাইলাইট করে। এরই মধ্যে একদল বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদ প্রমাণ করেছে, মস্তিষ্ক-মেশিন ইন্টারফেসে স্পাইওয়্যার লাগানো সম্ভব। বিশেষ করে, সেসব ভিডিও গেমের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য, যা চিন্তাভাবনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। এভাবে ডিভাইসগুলো ব্যবহারকারীর কাছ থেকে তথ্য চুরি করে।
মূলত ভিডিও গেমে সাবলিমিনাল ইমেজ প্রবেশের মাধ্যমে হ্যাকাররা নির্দিষ্ট উদ্দীপনা যেমন পোস্টাল এড্রেস, ব্যাংক হিসাবের বিবরণ এবং মানুষের মুখের প্রতি খেলোয়াড়ের অচেতন মানসিক প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করে। এ প্রক্রিয়ায় তারা ক্রেডিট কার্ডের পিন নম্বর, থাকার জায়গাসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিল।
ব্যালারিন, যিনি একজন টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার এবং একইসঙ্গে একজন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ। তিনি নিজেও কয়েকটি ডিভাইস পরীক্ষা করেছেন। এক্ষেত্রে ব্যালারিন প্রথমে ইইজি (EE-এ) নামক ব্র্যান্ডের হেডসেট হ্যাক করেন এবং এক জোড়া সেলফোন ডিভাইসের মাধ্যমে পাঠানো নিউরাল ডেটা সংগ্রহ করেন।
সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে দ্বিমুখী ইন্টারফেস শুধু মস্তিষ্কের সংকেতই গ্রহণ করে না। সেগুলো নির্গতও করে। উদাহরণস্বরূপ : স্নায়ু স্পন্দন (একটি কৃত্রিম হাত। যা থাকে হুইলচেয়ার বা স্নায়ুতন্ত্রের কাছে) যা ব্যবহারকারী বা অন্য ব্যক্তিকে শারীরিকভাবে ক্ষতি করার জন্য হ্যাক করা হতে পারে। ২০০৭ সালে ডিভাইস হ্যাক করে সম্ভাব্য হত্যার প্রচেষ্টা ঠেকাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির পেসমেকার থেকে ডাক্তারদের সব বেতার সংযোগ বন্ধ করতে হয়েছিল।
মানসিক গোপনীয়তা রক্ষা করে নিউরাল ডেটা সুরক্ষিত করার ব্যবস্থা অবশ্যই প্রযুক্তিগত এবং রাজনৈতিক উভয়ই হতে হবে। ইউরোপে এ সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক বিধিবিধান রয়েছে। যেমন : জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশন (GDPR)। যা যে কোনো ব্যক্তিগত ডেটার মতোই তাত্ত্বিক গোপনীয়তা রক্ষার জন্য মানসিক তথ্য সংক্রান্ত চিকিৎসা এবং বিক্রয়কে সীমিত করে।