ঢাকা, শুক্রবার ২২, নভেম্বর ২০২৪ ১৩:৫৪:২৭ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

লক্ষ্মীপুরে টুপি বানিয়ে স্বাবলম্বী কয়েক হাজার নারী

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৫৯ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বাহারি টুপি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটছে লক্ষ্মীপুরের নারীদের।এ কাজ তাদের সংসারে এনে দিয়েছে সচ্ছলতা। গৃহবধূরা সংসারের কাজকর্ম সেরে টুপি তৈরি করে সংসারে বাড়তি আয় করছেন। কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন না থাকায় গ্রামাঞ্চলের নারীদের কাছে এটা একটা পেশায় পরিণত হয়েছে। তাদের হাতে বুনন করা এসব টুপি যাচ্ছে বিভিন্ন জেলা এবং ওমানসহ বিভিন্ন দেশে।

টুপির কাজ করে আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়েছেন এখানকার কয়েকহাজার নারী। তবে সরকারি বা কোনো দাতা সংস্থার সহযোগিতা পেলে এ পেশায় আরও নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশী প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।

সদর উপজেলার মিয়ারবেড়ী, পূর্ব চরমনসা ও কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট ও চরফলকনের কয়েকটি গ্রাম দেখা যায়, যে বাড়িটির দিকেই চোখ যায়, সেখানেই দেখা মেলে সংসারের কাজের ফাঁকে নারীরা ও স্কুল পড়ুয়া মেয়েরা টুপি বানিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। একই চিত্র রামগতি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়ও। অবশ্য তারা এ টুপিকে ‘ওমানি টুপি’ বলে থাকেন।

রামগতি পৌরসভার সাহাপাড়া, চরহাসান হোসেন ও পন্ডিত পাড়াতে এ কাজের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন প্রায় শতাধিক সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী। নির্দিষ্ট নকশার ওপর নানা রঙের সুতায় তারা যে টুপি বুনে চলেছেন, এই টুপি ওমানে ‘কুপিয়া’ নামে পরিচিত। সাধারণত ‘কেন্দুয়া’র (পাঞ্জাবির মতো পোশাক) সঙ্গে কুপিয়া পরেন সেখানকার পুরুষেরা। তাদের দাবি, সরকারি বা কোনো দাতা সংস্থার সহযোগিতা পেলে এ পেশায় আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, সঙ্গে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে।

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট এলাকার ইয়াসমিন জানান, খুব অল্প বয়সে মায়ের কাছ থেকে শিখে টুপি বুননের কাজ শুরু করেন। তার অধীনে এখন ৫-৭’শ নারী এ কাজ করেন। তিনি আলেকজান্ডার বাজারের মহাজন ফরিদ ও আশরাফের কাছ থেকে সুতা-কাপড় এনে দেন এসব নারীকে। বুনন শেষে প্রতি মাসে ৪০-৫০টি টুপি মহাজনকে বুঝিয়ে দেন তিনি। প্রতিটি টুপি থেকে পান ২০-৩০ টাকা।

সদর উপজেলার পূর্ব চরমনসা গ্রামের আলমগীর ব্যাপারির বাড়িতে দীর্ঘ দিন থেকে টুপি নকশীর কাজ করছেন সুমী, পান্না, পাখি, নুপুর, জোৎস্নাসহ অনেকে। তারা বলেন, নিজেদের উদ্যোগে টুপি বুনিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছি। একটি টুপি বুনতে সময় লাগে কারো তিন সপ্তাহ, কারো চার সপ্তাহ। আর একটি টুপি বুনে পাই ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা। তবে, যে দাম নির্ধারণ করে আমাদের টুপির কাজ দেওয়া হয়, শেষে সে দাম দেওয়া হয় না।

একই এলাকার মারজাহান, পারুল ও সুরমা জানান, এ এলাকায় ২০০ নারী টুপি তৈরির কাজ করেন। পার্শ্ববর্তী মিয়ারবেঁড়ী এলাকায় একই ধরনের টুপি বানানোর কাজে যুক্ত আরও প্রায় ২০০ নারী। টুপির নকশা, কাপড় ও সুতা-সবকিছুই সরবরাহ করা হয় তাদের। নকশা অনুযায়ী হাতের কাজ করা একেকটি টুপির জন্য গ্রামের একেকজন নারীকে দেওয়া হয় ৭০০ থেকে হাজার টাকা। তবে হাতের কাজ অতি সূক্ষ্মভাবে করতে হয় বলে একজনের পক্ষে মাসে ১টি বা ২টির বেশি টুপি তৈরি করা সম্ভব হয় না। পারিশ্রমিকের তারতম্য হয় কাজের গুণ ও মান অনুযায়ী।

টুপি তৈরির কাজে যুক্ত হওয়ায় মেয়েরা সংসারে কিছুটা হলেও আর্থিক সাহায্য করতে পারছেন। প্রত্যন্ত  গ্রামে এটা অনেক বড় ব্যাপার। এতে সংসারে নারীর মর্যাদা বাড়ছে। এ ধরনের কাজের ফলে পরিবার, সমাজ এমনকি দেশও উপকৃত হচ্ছে। রামগতি কমলনগরের যেসব মানুষ নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ঠাঁই নিয়েছেন পরের জায়গায়, সেসব মানুষের প্রায় বাড়িতেই টুপি বুননের কাজ করেন নারীরা। এসব নারীকে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণসহ সহযোগিতা করলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বড় ভূমিকা রাখবে।

 
জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জোবেদা খানম বলেন, এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। ইতিবাচক সংবাদ। নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হলে দেশ ও জাতি এগিয়ে যাবে।’ এসময় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নতুন নতুন উদ্যোক্তাকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।