খালেদার আবারও রক্তক্ষরণ হয়েছিল, তবে এখন ভালো
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৬:৪৫ পিএম, ৩০ নভেম্বর ২০২১ মঙ্গলবার
ফাইল ছবি
গতকাল (সোমবার) রাতে আবারও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রক্তক্ষরণ হয়েছে। তবে আজকে তার অবস্থা অনেকটা ভালো বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশ এ কথা জানান তিনি। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, গতকাল সোমবার (২৯ নভেম্বর) রাত ১২টায় ডা. জাহিদ হোসেন আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, আপনি এখনি হাসপাতালে চলে আসুন। আমি বললাম, কোনো খারাপ খবর নাকি? তিনি বললেন, আপনি এখনি চলে আসুন। আমি রাত ১২টায় এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে দেখি ম্যাডামের চিকিৎসায় যুক্ত ১০ জন চিকিৎসক অত্যন্ত চিন্তিত। আমি রুমে ঢুকে তাদের জিজ্ঞাসা করলাম কী হয়েছে? তারা বললেন, আমরা যে আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই হলো। ম্যাডামের আবার রক্তক্ষরণ হয়েছে। গতকাল রাতে ডাক্তাররা চিন্তিত ছিলেন। আল্লাহ রহমতে চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সংকট কাটানো গেছে।
তিনি আরও বলেন, আজ সকালে আবার ডা. জাহিদকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি জানান ম্যাডাম এখন আগের চেয়ে অনেকটা ভালো। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, এ ভালো বেশি ভালো নয়। কারণ তারা পরিষ্কার করে বলেছেন, তার যে অসুখ সেটার চিকিৎসা এখানে ( বাংলাদেশ) আর নেই। তাকে চিকিৎসা করতে হলে অবশ্যই বিদেশে পাঠাতে হবে। কোনো বিলম্ব করা যাবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার যদি কিছু হয়ে যায় এ দেশের মানুষ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। এ কারণে চিকিৎসকরা চিন্তিত ছিলেন।
খালেদা জিয়া মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা এমন একটা সরকার পেয়েছি, যার একজন মন্ত্রী বলেছেন, চিকিৎসকদের নাকি বিএনপি বক্তব্য শিখিয়ে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা না দিলে এবং তার কিছু হলে এ দেশের মানুষ কোনো দিন সরকারকে রেহাই দেবে না।
খালেদা জিয়া ৯ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছেন উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল বলেন, এখনও দেশনেত্রী সংগ্রাম করছেন। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে এখনও সংগ্রাম করছেন তিনি। এক দিনের জন্যও তিনি অবসর নেননি, একদিনের জন্যও তিনি বিশ্রাম নেননি।
মির্জা ফখরুল জানান, আগামী ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত দলের কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এরপর নতুন কর্মসূচি দেবে বিএনপি।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কী দুর্ভাগ্য আমাদের, কী জাতি আমাদের। জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। সরকারের একজন মন্ত্রী কালকে বলেছেন, বেগম জিয়ার চিকিৎসকরা নাকি বিএনপি যা বলতে বলেছে, তারা তাই বলেছেন। ধিক্কার দিই এ মন্ত্রীকে। যে নামিদামি এবং বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসকদের বিদ্রূপ করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি বলেছেন, আমরা কাগজপত্র বিদেশে পাঠিয়েছি। কূটনৈতিকদের সামনে তিনি বলছেন। কেন বলছেন? কূটনীতিকরা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা ইতোমধ্যেই এই সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের এমন কোনো মানুষ নেই, যে চায় না দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বাইরে চিকিৎসা হোক। মায়েরা রোজা রাখছেন, গৃহবধূরা রোজা রাখছেন, মানত করছেন, যে আল্লাহ বেগম জিয়ার হায়াত বাড়িয়ে দাও। এই কোটি কোটি মানুষের ফরিয়াদ নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে পৌঁছাচ্ছে। তিনি আবার খালেদা জিয়াকে সুস্থ করে আমাদের ফিরিয়ে আনবেন।
সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা মিথ্যাচার করছেন। যে আইনের কথা বলেন, সেই আইনেই এ সুযোগ আছে। দায় নিতে হবে সরকারের, শেখ হাসিনার সরকারের। যদি বেগম জিয়ার কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে এই দেশের মানুষ আপনাদের রেহাই দেবে না।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ১ হাজার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শেষ হয়েছে। দেখেন, শুরু হয়েছে পতন। অর্ধেকের বেশি ইউপিতে তারা হেরে গেছে। এই পতন শুরু হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, বেগম জিয়া ভয়ানক অসুস্থ। তাকে বাঁচাতে হলে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। জনগণকে বলতে চাই আপনারা রুখে দাঁড়ান। তাকে সুস্থ করে ফিরিয়ে নিয়ে আসব।
ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, খালেদা জিয়ার যদি বিনাচিকিৎসায় কিছু হয়, কে জানে ফলাফল কী হবে। অবনতি হলে সরকার দায়ী থাকবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান। এতে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, সেলিম রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন, মোহাম্মদ শাহজাহান ওমর, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল করিম মিলন প্রমুখ।