ঢাকা, রবিবার ২৪, নভেম্বর ২০২৪ ১৫:০৮:৫১ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

ব্লাকবেঙ্গলে স্বাবলম্বী মেহেরপুরের নারীরা

বাসস

উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত : ০৪:০৫ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৮:২৩ পিএম, ২৯ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার

বাকবেঙ্গল ছাগল মেহেরপুরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পশুসম্পদ। ‘গরিবের গাভী’ খ্যাত মেহেরপুরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয়ের অন্যতম উৎস এ ব্লাকবেঙ্গল। দ্রুত প্রজননশীলতা, উন্নত মাংস, মাংসের ঘণত্ব ও চামড়ার জন্য ব্লাকবেঙ্গল ছাগল বিশ্ববিখ্যাত। বেকার সমস্যা দূরীকরণ, দারিদ্র বিমোচন, পুষ্টি সরবরাহবৃদ্ধি এবং বৈদেশিকমুদ্রা অর্জনে অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে ছাগল।

প্রায় ১১ হাজার বছর পূর্বে বর্তমান ইরানের আশিকোশ পর্বত মালায় খাদ্যাভাব দেখা দিলে যাযাবররা ছাগল নিয়ে পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে ছড়িয়ে পড়ে। পূর্ব, মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দুটি পথে যাযাবররা ছাগল নিয়ে আসে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মেহেরপুর অঞ্চলে যে ছাগল দেখা যায় তা সম্ভবত দক্ষিণ চীন, হুনাইন দ্বীপ ও তাইওয়ানের পশ্চিমাঞ্চল থেকে ব্যবসায়ী অথবা যাযাবরদের মাধ্যমে তিব্বতের মালভূমি হয়ে এসেছে। এ ছাগল বিজোয়ার ছাগলের বংশধর বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে মাংস, দুধ এবং চামড়া উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে ব্লাকবেঙ্গল। মেহেরপুরের পাশের জেলা চুয়াডাঙ্গা এ ব্লাকবেঙ্গলকে জেলার ব্রান্ডিং করেছে। ৮০র দশকে জাপানের জাইকা বিএডিসির মাধ্যমে মেহেরপুরে ছাগল খামার গড়ে তোলে। সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাঠা ছাগলের মাধ্যমে ক্রস করার ফলে বর্তমানে ব্লাকবেঙ্গল হারিয়ে যাবার পথে।

ব্লাকবেঙ্গলকে ফিরিয়ে আনতে সামাজিক সংগঠন ‘ওয়েভ ফাউন্ডেশন’ ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালনের মাধ্যমে আয়-বৃদ্ধিকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথ দেখাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি ভ্যালুচেইন উন্নয়ন প্রকল্প ইফাদ এবং পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন এর সহযোগিতায় মেহেরপুর জেলায় ৬ হাজার পরিবারকে মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী করেছে। জেলার ৬ হাজার পরিবারে ব্লাক বেঙ্গল এনে দিয়েছে সমৃদ্ধি। ওয়েভ ফাউন্ডেশন শুধুমাত্র ছাগল উৎপাদনের সাথেই জড়িত না বরং ছাগল উৎপাদনের জন্য আরো যে সমস্ত বিষয়গুলো গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে যেমন, খাদ্য বিক্রেতা, ওষুধ বিক্রেতা, গ্রাম্য ডাক্তার, কসাই এবং বেপারী তাদের সবাইকে নিয়েই কাজ করে।

প্রকল্পটি ছাগল উৎপাদনকারী ছাড়াও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদেরও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সচেতন করে ছাগল উৎপাদন ও নিজেদের আয়বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ জন্যই এ প্রকল্পটির নাম ভ্যালু চেইন উন্নয়ন প্রকল্প, অর্থ্যাৎ ছাগল উৎপাদনে যে সমস্ত চেইনের ভূমিকা আছে তার সবগুলোর উন্নয়নের লক্ষ্যেই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।

২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ২৫০ জন খামারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি ২৫ জন খাদ্য বিক্রেতা ওষুধ বিক্রেতাকে, ২৫ জন বেপারী এবং কসাইকে, ২৫ জন কাঁচাঘাষ চাষিকে, ২০ জন গ্রাম্য ডাক্তারকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ছাগল উৎপাদনে ও ছাগলের মৃত্যুহার কমাতে অবদান রাখছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যমতে, মেহেরপুর জেলায় ৬০ হাজার পরিবার ছাগল পালন করছে। বর্তমানে এসব জেলার হত দরিদ্র পরিবার গড়ে ১টি, দরিদ্র পরিবার গড়ে ২টি এবং ক্ষুদ্র-উদ্যোক্তা (নন-পুওর) গড়ে ৩টি করে ছাগল প্রচলিত পদ্ধতিতে বছরব্যাপী পালন করছে। এসব পরিারের প্রায় ৮০ ভাগ মহিলা ছাগল পালনের সাথে জড়িত। তারা গড়ে ১টি ছাগল পালনের মাধ্যমে বাৎসরিক প্রায় ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা আয় করছে। উন্নতমানের মাংস, বিশ্ববিখ্যাত চামড়া, অধিক সংখ্যায় বাচ্চা দেয়া, স্বল্প খাদ্যভোগী, স্বল্প পুঁজি ও অল্প জায়গায় করা যায় ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য সম্বলিত ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের জাতটি যুগযুগ ধরে বাংলাদেশে পারিবারিকভাবে পালিত হয়ে আসছে।

ওয়েভ ফাউন্ডেশন ৬ হাজার নারী সদস্যর মধ্যে ২০১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ৫ হাজার ২৫০ জন দুস্থ নারী সদস্যকে ব্ল্যাকবেঙ্গল ছাগল পালনের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। ৫শ জন সদস্যকে মাঁচা পদ্ধতিতে ছাগল পালনের জন্য ২ হাজার টাকা করে উৎসাহ ভাতা প্রদান করার ফলে ৫০০টি খামার গড়ে উঠেছে। প্রকল্পের সহযোগিতায় ১৫ জন অতি দরিদ্রকে ব্লাকবেঙ্গল জাতের পাঠা পালনে আর্থিক সহযোগিতা করেছে।

মেহেরপুরের ছাগল ব্যবসায়ী তোফাজ্জেল হোসেন জানান, এ জেলায় শতকরা প্রায় ৮০টি পরিবারই ছাগল পালন করে। এখানে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় যত না বেশি মানুষ মারা যায়, তার থেকে বেশি মারা যায় ছাগল ।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল আজিজ আল মামুন জানান- ব্লাকবেঙ্গল বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায়। এটিই ছাগলের একমাত্র জাত। একটি ছাগি দৈনিক দেড় লিটার দুধ দেয়। দুধ প্রদানকাল থেকে ৩ মাস। দুধে ৪.৫ ফ্যাট, ৩.৫ প্রোটিন, ৫.২ ল্যাকটোজ এবং ১৬% খনিজ থাকে। উপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় প্রতিবারে ৩ থেকে ৪টি বাচ্চা দেয়। এ ব্লাকবেঙ্গল মেহেরপুরের শতকরা ৪৫ ভাগ পরিবার ১টি করে ছাগল পালন করে কোরবাণীর চাহিদা মেটাতে। এছাড়া জেলায় ছোট বড় মিলে ২৮ হাজার ৫৩০ জন খামারি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ছাগল পালন করছে। জেলায় বর্তমানে ৩ লাখ ৫ হাজার ৫শ ছাগল আছে।