ঝিনাইদহের মেয়ে তাসলিমার সেলাই করা কাপড় যাচ্ছে বিদেশেও
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১২:১০ পিএম, ৬ ডিসেম্বর ২০২১ সোমবার
ফাইল ছবি
নারীরা এখন সব পেশায় সর্বক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হচ্ছে। এখন দেশে স্বাবলম্বী নারীর সংখ্যা অসংখ্য। কিন্তু এর মধ্যেও কিছু নারী নিজেদের প্রজ্ঞা আর অধ্যাবসায়ের দ্বারা উন্নীত হচ্ছেন সাফল্যের সুউচ্চ শিখরে। নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে স্বাবলম্বী করছেন অন্যদেরও। তেমনি একজন ঝিনাইদহের মেয়ে তাসলিমা আলম।
চার বছর আগে তিনি শুরু করেছিলেন ৬ হাজার টাকায় কেনা একটি সেলাই মেশিন দিয়ে। আজ তার হাতে সেলাই করা কাপড় যাচ্ছে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও। কর্মসংস্থানের পথ করে দিয়েছেন আরও অর্ধ ডজন নারীর।
এসএসসি পরীক্ষার পর বাবার ইচ্ছায় সেলাইয়ের কাজ শেখেন তাসলিমা। তবে সেলাই শিখলেও এটাকে কাজে লাগাতে পারেননি তখন। কলেজে পড়াশোনার সময় বিয়ে হয়ে যায়। শ্বশুরবাড়ি টাঙ্গাইলের সখীপুরে, স্বামী শফিউল আলম বেসরকারি চাকরিজীবী। এরপর আর পড়াশোনা করা হয়নি। তার কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে দুই মেয়ে। স্বামীর সঙ্গে চলে আসেন ঢাকাতে। ঢাকায় এসে অন্য অনেকের মতো ঘরে বসে অলস সময় কাটাননি তিনি। বরং ভেবেছেন এবার কিছু করা দরকার। যেন ভাবনা, শুরু করলেন পরিকল্পনা ও মানসিক প্রস্তুতি। ৬ হাজার টাকা দিয়ে সেলাই মেশিন কিনে শুরু করলেন সেলাইয়ের কাজ। ২০১৭ সাল থেকে আজ চার বছরে তাসলিমা আলম অনেকের অনুপ্রেরণার নাম, অনেকের অনুকরণেরও।
সফলতার পেছনের গল্প বর্ণনা করতে গিয়ে তাসলিমা বলেন, সেলাই মেশিন কিনলেও ঘরে নিজেদের আর বাচ্চাদের কাপড় বানাতাম। এরপর একদিন পরিচিত এক আপু তার কাপড় বানাতে দেন জোর করেই। সেখান থেকেই শুরু। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন প্রতি মাসে ঘরে বসেই তার উপার্জন ৩০-৪০ হাজার টাকা। একে একে কিনেছেন আরও চারটি মেশিন। তার তত্ত্বাবধানে কাজ করছেন আরও চারজন নারী।
তিনি বলেন, একজন-দুইজন করে আশপাশের বাসার সবাই কাপড় সেলাই করতে দেন। প্রথমে দিনরাত এক করে কাজ করতাম, কারণ কাপড়গুলো তো ডেলিভারি দিতে হবে। কিন্তু যখন বেশি অর্ডার আসা শুরু হলো, তখন আর নিজের পক্ষে এত কাজ করা সম্ভব হলো না। আশপাশের কেউ সেলাইয়ের কাজ জানে কিনা খুঁজতে লাগলাম। পরে কয়েকজনকে পেয়েও গেলাম। কাজের ওপর ভিত্তি করে আমি প্রতি সপ্তাহে তাদের পেমেন্ট দিই। দেখা যায় মাস শেষে প্রতিজন এখান থেকে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা উপার্জন করছেন।
এ কাজে স্বামী শফিউল আলমের উৎসাহের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, নিরাপত্তার কথা ভেবে আমার স্বামী বাইরে কাজ করতে দেননি। ঘরে বসে সেলাই করার কথা যখন তাকে বলি তিনি আমাকে সেলাই মেশিন কিনে দেন। ঘরেই যখন সেলাই শুরু করলাম, তখন আমার কাজ দেখে তিনিই বেশি খুশি হয়েছেন। এখন আমার কাজে ঘরে-বাইরে সমানভাবে তিনিই সহযোগিতা করছেন।
তাসলিমার হাতে সেলাই করা কাপড় যাচ্ছে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও। জানালেন, হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেঞ্জারে অর্ডার নিয়ে সে অনুযায়ী কাপড় সেলাই করে পাঠাচ্ছেন বিদেশেও। অনেকের কাছেই তিনি এখন অনুকরণীয়। নারীদের স্বাবলম্ব্বী হতে দিচ্ছেন প্রশিক্ষণও। এখন পর্যন্ত তার কাছ থেকে ৭-৮ জন সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
সেলাই নিয়ে স্বপ্নের কথা জানালেন তাসলিমা। দুই মেয়ের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চান। বললেন, প্রতিষ্ঠানটাকে এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই যেন ভবিষ্যতে আমার দুই মেয়ে এটাকে কাজে লাগাতে পারে। চাকরির পেছনে না ছুটে তারা যেন এই প্রতিষ্ঠানেই নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।