প্রশাসনে নারীর দাপট
রাতুল মাঝি
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০৬:৫৩ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ রবিবার | আপডেট: ১০:৩৪ পিএম, ১ এপ্রিল ২০১৮ রবিবার
নারীর ক্ষমতায়নে অনেক পথ এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। বর্তমানে প্রশাসনে নারীদের দাপট বেড়েছে। বর্তমান সরকারের আমলেই প্রশাসনে সচিব পদমর্যাদায় ৭৮ জন নারী কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নয়, শিক্ষা, প্রশাসন, চাকরিসহ নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশে নারীর অগ্রগতির প্রশংসা করছে সারাবিশ্ব।
বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়ের সচিব, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য সকলেই নারী।
জানা যায়, বর্তমানে প্রশাসনে সচিব পদে ১৩ জন, অতিরিক্ত সচিব ৩৮৬ জন, যুগ্ম সচিব ১০৫ জন, উপসচিব ২৭০ জন, ডিসি ৯ জন এবং ইউএনও ১৭২ জন নারী। এছাড়া সিনিয়র সহকারী সচিব ৩৮৯ জন এবং সহকারী সচিব ৪৬৩ জন প্রশাসনে যোগ্যতার সঙ্গে কাজ করছেন। কিশোরগঞ্জ জেলার পুরো প্রশাসনযন্ত্রই এখন চালাচ্ছেন নারীরা। এ জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে আটটির নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্বে আছেন নারী। আটটি উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদেও নারীরাই কাজ করছেন।
বর্তমানে প্রশাসনে বিভিন্ন কোটা মিলে সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে কর্মরত আছেন ৭৯ জন, এর মধ্যে নিয়মিত সিনিয়র সচিব ও সচিব ৬৪ জনের মধ্যে নারী ১৩ জন। অতিরিক্ত সচিব নারী ৩৮৬ জন এবং পুরুষ রয়েছে ৩৮৬ জন, যুগ্মসচিব নারী ১০৫ জন ও পরুষ ৭০০ জন, উপ-সচিব নারী ২৭০ জন এবং ১২৯৩ জন, ডিসি ৯ জন এবং ইউএনও ১৭২ জন দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রশাসনে ১৩ নারী সচিব : বর্তমান সরকারের আমলে প্রশাসনে সচিব পদমর্যাদায় কাজ করছেন মোট ৭৮ জন কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে সাতজন নারী সচিব। দুইজন ভারপ্রাপ্ত সচিব। এই প্রশাসনে নারী সচিব ১৩ জন। এই ১৩ নারী সচিবের একজন সুরাইয়া বেগম। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সুরাইয়া বেগম সরকারের একজন সিনিয়র সচিব। সচিবের পদমর্যাদায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মুশফেকা ইকফাৎ, তিনি সরকারের সিনিয়র সচিব। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নমিতা হালদার এনডিসি। এর আগের সচিব বেগম সামছুন নাহার অবসরে গেছেন। সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সচিব আকতারী মমতাজ। সচিবের পদমর্যাদায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজ। সচিবের পদমর্যাদায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন জাতীয় প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক কানিজ ফাতেমা।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মাফরুহা সুলতানা, দুটি বিভাগে ভারপ্রাপ্ত সচিবের পদমর্যাদায় সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ সরকারি কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক (ডিজি) শিরিন আকতার। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে হোসনে আরা বেগমকে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এছাড়া অতিরিক্ত সচিব থেকে ভারপ্রাপ্ত সচিব পদমর্যাদায় পরিকল্পনা কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সদস্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বেগম শামীমা নার্গিস। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব বেগম আফরোজা খান।
৯ জেলায় নারী ডিসি : বাংলাদেশের প্রথম নারী জেলা প্রশাসক হিসেবে রাজিয়া বেগমকে রাজবাড়ীতে নিয়োগ দিয়েছিল বিএনপি সরকার। এরপর বিভিন্ন সময়ে নারীদের জেলা প্রশাসক হিসেবে শুভ সূচনা সৃষ্টি হয় প্রশাসনে। পরে বর্তমান সরকার জেলা প্রশাসক হিসেবে একদিনেই নিয়োগ দেন চার নারীকে। ৬৪ জেলায় সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদে এখন নারীর সংখ্যা ৯। জেলা প্রশাসক হিসেবে একসঙ্গে এত নারী কখনো কাজ করেননি।
২০০১ সালের ২৮ মার্চ বাংলাদেশের প্রথম নারী জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন রাজিয়া বেগম রাজবাড়ীতে। এরপর বিভিন্ন সময়ে নারী জেলা প্রশাসক হয়েছেন। নারী জেলা প্রশাসকরা হলেন- মানিকগঞ্জে রাশিদা ফেরদৌস, হবিগঞ্জে সাবিনা আলম, পাবনায় রেখা রানি বালো, চুয়াডাঙ্গায় সায়মা ইউনুস, রাজবাড়ীতে জিনাত আরা, ফরিদপুরে বেগম উম্মে সালমা তানজিয়া, সিরাজগঞ্জে কামরুন নাহার সিদ্দিকা, মুন্সিগঞ্জে বেগম সায়লা ফারজানা এবং নাটোরে বেগম শাহিনা খাতুন।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক বেগম উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, ডিসি হওয়ার আগে আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হিসেবে কাজ করেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবেও কাজ করার সুযোগ হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি মেয়েদের স্বপ্ন দেখাতে চাই। আমি যখন ফরিদপুরের রাস্তা দিয়ে হাঁটব তখন নারীরা আমাকে দেখে অনুপ্রেরণা পাবে। তারাও স্বপ্ন বুনবে। আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন আমাদের স্কুলে একবার ডিসি এসেছিলেন এক অনুষ্ঠানে। তখন থেকেই আমার স্বপ্ন, আমিও একদিন ডিসি হবো।
১৭২ উপজেলায় নারী ইউএনও : সারাদেশে ১৭২টি উপজেলায় ইউএনও পদে ১৭২ জন নারী কাজ করছে। তার মধ্যে কিশোরগঞ্জ জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে আটটির নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্বে আছেন নারী। এছাড়া আটটি উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদেও নারীর দায়িত্ব পালন করছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদে আট নারী হলেন- করিমগঞ্জে মাহমুদা, তাড়াইলে সুলতানা আক্তার, মিঠামইনে তাসলিমা আহমেদ পলি, ভৈরবে দিলরুবা আহমেদ, কুলিয়ারচরে ড. উর্মি বিনতে সালাম, পাকুন্দিয়ায় অন্নপূর্ণা দেবনাথ, কটিয়াদীতে ইসরাত জাহান কেয়া এবং বাজিতপুরে সোহানা নাসরিন।