‘বাংলাদেশে নামল ভোর’ একটি উপন্যাসের শুরু
তপতী বসু
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০১:৩৬ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০২১ মঙ্গলবার
সংগৃহীত ছবি
আর রাত দিয়ে শেষ ৷ মূল চরিত্রের নাম সুদীপ্ত শাহিন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের একজন অধ্যাপক। ১৯৪৭ এর দেশ ভাগের পর পূর্ববাংলায় চলে আসেন কিন্তু এখানে এসে সুদীপ্ত নাম নিয়ে ভোগান্তিতে পড়ে যান। যার কারনে চাকরী নিতে পছন্দের নামটি পরিবর্তন করেতে হয়। স্ত্রী আমিনা এক পুত্র এবং দুই কন্যা নিয়ে তাঁর সংসার বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার্স কোয়াটারের ২৩নং বিল্ডিংএ৷পঁচিশে মার্চ রাতে যখন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীরা ঘুমন্ত বাঙালিদের উপরে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায় তখন তাদের বাড়িতেও আক্রমণ চালালে দুটো দিন এবং দুটো রাত খাটের তলাতেই কোনমতে লুকিয়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে না খেয়েই সুদীপ্ত বেঁচে যান৷ লুকিয়ে এক বন্ধুর বাসায় আশ্রয় নিতে গিয়ে জানতে পারেন এখনই ওই বাড়িতে আক্রমণ হবে। বন্ধুর ও নিজের পরিবার নিয়ে বন্ধুর এক দূরসম্পর্কের এক চাচার বাড়িতে গিয়ে দেখেন সেই চাচা স্বয়ং রাজাকার।
এরপর চারপাশে লাশের ফেরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত অধ্যাপকেরা নিহত হয়েছেন সপরিবারে। রাতের আঁধারে ইয়াহিয়া খানের লেলিয়ে দেয়া পশুরা মেরে ফেলেছে তারই সহকর্মীদের। গণহত্যা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের। রেহাই পায়নি শহরের সাধারণ জনগণ। শিক্ষক হিসেবে নিজের সন্তানতুল্য ছাত্রদের রক্ষা করতে না পারার আক্ষেপ, সহকর্মীদের মাঝে ব্যতিক্রমী হয়ে নিজে জীবিত থাকার যে অপরাধবোধ- এসবই কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল সুদীপ্তকে।
উপন্যাসটির নাম"রাইফেল,রোটি,আওরাত" !সুদীপ্ত আসলে পাশার জীবনের লেখচিত্র!
পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীদের চরিত্র- রোটি খেয়ে গায়ের তাকত বাড়াও, রাইফেল নিয়ে খতম কর, আর আওরাত নিয়ে ফুর্তি কর"-এ উপাখ্যানে তুলে ধরা হয়েছে৷
আনোয়ার পাশা ১৯২৮সালের ১৫ই এপ্রিল মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন৷ বাবা হাজী মকরম আলী আর মা সাবেরা খাতুন।আনোয়ার পাশার "রাইফেল রোটি আওরাত"— ১৯৭১সালের আনা ফ্রাংকের জীবন্ত ইতিহাস৷ শুরু একাত্তরের এপ্রিল মাসে, আর শেষ হয় জুনে।
যখন জীবন নিয়ে দেশবাসীকে পালিয়ে বাঁচতে হচ্ছে দেশের ভেতরেই পরবাসী হয়ে! ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক কিন্তু গৌরবময় সময়ের দলিল- মুক্তিযুদ্ধের প্রথম উপন্যাস রাইফেল রোটি আওরাত। বন্দিশিবিরের ভয়াবহতার মধ্যে বসে আশার অভয়বাণী শোনানোর এমন গল্প বিশ্বসাহিত্যে বিরল।
একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর আলবদরের ঘাতকেরা আনোয়ার পাশাকে নিয়ে যাওয়ার পরে পাওয়া যায় তাঁর ক্ষতবিক্ষত লাশ আর উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি যা নিজের জীবন দিয়ে লিখে রেখে যাওয়া৷
বাংলাদেশের স্বাধীনতার দুই বছর পর ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত হয় আনোয়ার পাশার ‘রাইফেল, রোটি, আওরাত’। মূল কাহিনী অবিকৃত থাকায় এটি শুধু উপন্যাস নয়, এক জীবন্ত ইতিহাসের দলিল৷যা প্রত্যেকের পড়া উচিত ছিল-
কিন্তু অনেক অলিখিত কারণে অধিকাংশ বাঙালি পাঠকের হয়ত লেখকের মতন বইটির নামও জানা নেই!
-তপতী বসু, প্রবাসী লেখক।