শীতে সুস্থ থাকতে যা খাবেন
অনলাইন ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১২:১৬ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ শনিবার
ফাইল ছবি
ঠান্ডার মৌসুম এসে পড়েছে। এসময় ফ্লু, ঠান্ডাজ্বর, কোভিড-১৯ ও অন্যান্য ভাইরাস সংক্রমণে আমাদের শরীর সহজেই কাবু হতে পারে। তাই শীতে সুস্থ থাকতে শরীরের রোগপ্রতিরোধ তন্ত্রকে (ইমিউন সিস্টেম) শক্তিশালী করার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতে ডায়েটে সেসব খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যা ইমিউন সিস্টেমের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে সংক্রমণকে সহজেই পরাস্ত করতে পারে। ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হলে সংক্রমণের উপসর্গ তেজি হতে পারে না এবং গুরুতর পরিণতির ঝুঁকি কমে যায়। সুস্থ থাকার জন্য ডায়েটে পুষ্টিকর খাবারের বৈচিত্র্য থাকা চাই। এখানে ঠান্ডার মাসগুলোতে সুস্থ থাকার জন্য যেসব খাবারে গুরুত্বারোপ করা উচিত তার একটি তালিকা দেয়া হলো।
* সাইট্রাস ফল: কমলা ও মোসাম্বির মতো সাইট্রাস ফল ভিটামিন সি-তে সমৃদ্ধ। ভিটামিন সি শরীরের ইমিউন সিস্টেম/রোগদমন তন্ত্রকে সাহায্য করে থাকে।প্রতিদিন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর ৭৫ মিলিগ্রাম এবং প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণ করা উচিত। একটি মধ্যম আকারের কমলা থেকে প্রায় ৭০ মিলিগ্রাম, একটি মোসাম্বি থেকে প্রায় ৮০ মিলিগ্রাম এবং একটি লেবু থেকে প্রায় ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাবেন। এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে ত্বক ও রক্তনালীকে সুস্থ রাখে এবং শরীরের ইমিউন ফাংশন উন্নত করে।
বায়োমেড রিসার্চ ইন্টারন্যাশনালে প্রকাশিত গবেষণা রিভিউ থেকে জানা গেছে, প্রতিদিন ১ গ্রাম (১০০০ মিলিগ্রাম) ভিটামিন সি সেবনে প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের ঠান্ডাজ্বরের স্থায়িত্ব যথাক্রমে ৮ ও ১৮ শতাংশ কমেছে। ভিটামিন সি অবশ্যই ঠান্ডাজ্বর প্রতিরোধ করে এমন নিশ্চয়তা গবেষকরা দেননি, তবে এটি সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষমতা বাড়াতে পারে।
* সবুজ শাকসবজি: পালংশাক, বাঁধাকপি ও অন্যান্য সবুজ শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে। এটি ইমিউন ফাংশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।প্রতিদিন একজন পুরুষকে ৯০০ মাইক্রোগ্রাম এবং একজন নারীকে ৭০০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ২০১৮ সালে জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণার গবেষকরা জানান, ইমিউন সিস্টেমের কার্যক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন এ এর প্রয়োজন আছে। ২০১৯ সালে নিউট্রিশন রিভিউজে প্রকাশিত গবেষণা মতে, সবুজ শাকে ডায়েটারি নাইট্রেটও আছে। এটি প্রদাহ কমাতে পারে এবং ইমিউন সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
* লাল ক্যাপসিকাম: ইমিউন সিস্টেমের জন্য খুবই উপকারী এমন একটি খাবার হলো, লাল ক্যাপসিকাম। কারণ এতে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি এর পাশাপাশি বিটা ক্যারোটিনও আছে। ভিটামিন সি সুস্থতার পথকে সুগম করে। ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিনও সংক্রমণ হঠাতে অবদান রাখে।
* দই: স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দইয়ে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, যা হাড় ও ত্বককে সুস্থ রাখতে পারে। সুস্থ টিস্যু হলো সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরক্ষা। ত্বক সুস্থ থাকলে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। প্রোটিন ছাড়াও অধিকাংশ দইয়ে উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে। দই খেলে অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় থাকে। গবেষকদের মতে, সংক্রমণের বিরুদ্ধে ইমিউন সিস্টেমের অধিক ফলপ্রসূ লড়াইয়ের জন্য অন্ত্রের সুস্থতাও গুরুত্বপূর্ণ। অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া যোগাতে দইয়ের বিকল্প হিসেবে বাঁধাকপি থেকে প্রস্তুতকৃত সাউয়েরক্রাউট বা কিমচিও খেতে পারেন। এছাড়া কম্বুচা, পিকেলস ও ট্রাডিশনাল বাটারমিল্কও উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সমৃদ্ধ উৎস।এসব খাবার সহজেই তৈরি করা যায়। প্রস্তুতপ্রণালী ইউটিউব থেকে জেনে নিতে পারেন।
* গ্রিন টি: গ্রিন টি-তে খুব উচ্চ পরিমাণে ক্যাটেচিনস ও পলিফেনলস রয়েছে। এসব অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের ক্ষতি এড়াতে সাহায্য করে।কোষ সুস্থ থাকলে ইমিউন সিস্টেম সংক্রমণের বিরুদ্ধে ভালো প্রতিক্রিয়া (ইমিউন রেসপন্স) দেখাতে পারে।
* আদা: আদায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি প্রপার্টিজ আছে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব প্রিভেন্টিভ মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণা মতে, আদা ইমিউন সিস্টেমকে সাপোর্ট করে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা গোটা আদা ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের মতে, গোটা আদা সাপ্লিমেন্টের তুলনায় বেশি কার্যকর। তরকারিতে বা চায়ে গোটা আদা ব্যবহার সবচেয়ে উপকারী।
* রসুন: স্বাস্থ্যের উপকার বিবেচনায় শতশত বছর ধরে রসুনের ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি হৃদরোগ, উচ্চ কোলেস্টেরল, ফ্লু ও ঠান্ডাজ্বরে উপকারী বলে ধারণা করা হয়। রসুনের স্বাস্থ্য উপকারিতা মূলত এর অ্যালিসিনে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রসুনের অ্যালিসিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে এবং ইমিউন সিস্টেমকে সহায়তা করে। রঙ চায়ে রসুনের নির্যাস মিশিয়ে পান করতে পারেন।
* হলুদ: বিশেষজ্ঞদের মতে, হলুদের ইমিউন সিস্টেম সংক্রান্ত উপকারিতা এই মসলার কারকুমিনের সঙ্গে সম্পর্কিত। গবেষকদের ধারণা, কারকুমিনে ইমিউন সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আছে। ২০২০ সালে ফুড অ্যান্ড সায়েন্টিফিক রিপোর্টসে প্রকাশিত গবেষণার গবেষকরা জানান, হলুদ একটি সহায়ক ইমিউন বুস্টার হতে পারে। অর্থাৎ, হলুদ শরীরের রোগদমন ক্ষমতা বাড়াতে পারে। হলুদ চা বা হলুদ পানি পান করতে পারেন। অথবা তরকারিতে হলুদের ব্যবহার বাড়াতে পারেন।