মানুষের শহর ঢাকা!
অাসমা আক্তার
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ১২:৪৮ পিএম, ৭ জানুয়ারি ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ১২:২৭ পিএম, ২৮ মার্চ ২০১৮ বুধবার
মহিমার চল্লিশ বছরের ভালবাসা এ ঢাকা শহর। ভাল মন্দের শহরে বাস করতে করতে এ শহরটি ছাড়া আর কোথাও বেশি দিন থাকতে পারে না। শহরটির চাঞ্চল্যতা, ছোটাছুটির মমতা কাটিয়ে উঠা কঠিন। বৈচিত্রতা আনতে সারা বছরই আয়োজন করা হয় পিঠা উৎসব, বই মেলা, পহেলা বৈশাখ, ফাগুন মেলা, পৌষ মেলা, একুশের মেলা আরও কত কি!
গাড়ি ছাড়া পায়ে চলতে মহিমা অনেক আনন্দ পায়। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় কাছের জায়গাগুলো হেঁটে হেঁটে যায়, পথে পথে রাস্তার পাশে বসা দোকান গুলো থেকে কুমড়ো ফুল, তাজ মাছ, মাঘি শাক, বিচিওলা কলা দামাদামি করা, ইচ্ছে হলে কিনা, দামে দরে না মিললে না কিনা, এরকম বাজার করার মাঝে নিজের আত্ততৃপ্তি বেড়ে যায়। কারণ মিনা বাজার, আগোরা বা সাধারণ বাজারের চেয়ে কমদামে পাওয়া যায় জিনিসগুলো আর একটু কম দামে পেলে মনে হয় একটু খরচ বাঁচল। আর একটু বেশি নিলেও মনে হয় গরীব মানুষের উপকার হল।
যা হোক এমনটা ভাবতে ভাবতে শীতের বিকেলে হাঁটা শুরু করল। ভাবল একটা ডাক্তার দেখাবে তারপর হাঁটতে হাঁটতে বাজার করবে। কিন্তু আবার আমার ঢাকা, রাস্তার কাজ, ফুটপাতে কাজ, লক্ষ্য করে নাই ভাল করে আর তাতে একটি সুতলিতে পেঁচিয়ে পড়ে গেল ফুটপাতে যেখানে কোনও চিহ্ন ছাড়াই রাস্তা উন্নয়নের কাজ চলছিল। হাতে শুধু একটি মোবাইল। উদ্ধারকর্মিদের একজনের হাতে চলে গেল প্রিয় মোবইলটি। তখন, কুঁজো অবস্থায়ই চিৎকার করে উঠে, "আমার মোবাইল নিছেন কেন?" লোকটি অন্য কথা বলতে লাগল "আরে আপনারা রশি বানছেন কেন? এমন কইরা বানছেন পায়ে বাজে, আরেকজন মহিলাও একটু আগে পড়ছে।" এই ফাঁকে আরেকজন উদ্ধার কর্মী ডান হাত ধরে দিল টান। হায়রে মরন একসপ্তাহ হয় নাই ফ্রোজেন সোলডার হাতটা মনে হয় ছিঁড়ে গেল। দাঁতে দাঁত কামড়ে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করল, নিজে নিজে ব্যালেন্স করল, ওদের শুশ্রূষার ফলে আরও বেশি ক্ষতি যেন না হয়, উঠতে উঠতে মোবাইল টা থাপা দিয়ে নিয়ে নিল। অবশেষে ধীরে ধীরে ডাক্তার পর্যন্ত গেল, শখের বাজারটা আর করা হলো না।
যদিও মাঝে মাঝে ভীষণ উপভোগ করে এ দেশের দোকানদারদের। আর আরও ভাল লাগে কত সস্তায় এ দেশে জিনিষ পাওয়া যায় । যারা একদামের জিনিস কিনেন তাদের কথা আলাদা। কিন্ত যখন একটা কাপড় দেখিয়ে আর দেখাতে চায় না বলে "কোনটা নিবেন ঠিক করেন, আমরা দাম যাচাইয়ের জন্যে দেখাই না", তখন মেজাজ চরমে উঠে। কেনার মুডও খারাপ হয় যায়। দাম পছন্দ হলে বলে "বেচাকেনা নাই মালের দাম দিতে হবে তাই দিলাম।"
রিক্সাটাকে মাঝে মাঝে মনে হয় ঝামেলা। একইন্চি জায়গা পেলেই ঢুকে যাবে। আর বন্ধ হয়ে যায় সুখের হাঁটা।
কখনও মনে হয় রিক্সা দিয়ে ইচ্ছে মত ঘুরে বেড়াতে। একদিন সকালে বের হল সে। কারওয়ান বাজারের সকালের মাছ বাজার থেকে ঈলিশ কিনবে। আবারও সেই সস্তা আর ফ্রেশ খাওয়া। কেনা হলো বড় পদ্মার ইলিশ। মিষ্টি রোদে রিক্সাটা চলছে পায়ের কাছে চারটে ইলিশ, সুখ সুখ লাগছে। হঠাৎ মনে হল ডান হাতটাড় টান লাগছে। তাকাতে তাকাতে দেখল তার ব্যাগের একটা ফিতা সিএনজি তে বসা একজনের হাতে। জোরে টান দেওয়ার পর ওর হাতে রইল একটি ফিতা, ব্যাগ সহ আরেকটি ফিতা ছিনতাইকারির হাতে। নতুন মডেলের মটরলাটা। হায়রে একেবারে থানার কাছ থেকে নিয়ে গেল! মাছ নিয়েই থানায় গেল।
জিডি করতে বল্লেন কর্তব্যরত অফিসার। তখন নতুন ট্রাকিং সিস্টেম চালু হইসে শুনছে, মহিমা পুলিশ অফিসারকে তা করে তার প্রিয় মোবাইল টা পড়ে করেযায় দিতে বল্ল, জানা গেল এ পদ্ধতি তারা জানেন না। অবশেষে মাছগুলা যে নেয় নাই! এই সান্তনা নিয়ে ফিরতে হলো।
গাড়ি জ্যামে পড়লেই এক ফকির কমপক্ষে দুবার আসে। এখন আবার কতগুলা মেকআপ করে আসে টাকা না দিলে গালি দেয়। একটু বাতাসের জন্যে জানালা খুলতেই পাওয়া যায় আবর্জনার গন্ধ। সবচেয়ে খারাপ লাগে আওয়াজ! রাস্তায় একদিকে রিক্সার টুংটুং, গাড়ির হর্ন, কে কার আগে যাবে, এক অস্থির অবস্থা।গাড়ি
তবু এ ঢাকায় থাকি, মহিমার মত আমরাও। ভালবাসি বলেই প্রতিদিন এক বুক আশা নিয়ে সকাল হতেই বেড়িয়ে পড়ি জীবন জীবিকায়। নতুন নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে আবার ফিরে আসি নিজ নিজ গৃহে সুখের আশায়!