ঢাকা, সোমবার ২৫, নভেম্বর ২০২৪ ১৯:৩১:৫৯ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

সুলতানা ফিরদৌসীর একগুচ্ছ কবিতা 

সুলতানা ফিরদৌসী

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৩:০৩ এএম, ১২ জানুয়ারি ২০২২ বুধবার

সুলতানা ফিরদৌসী

সুলতানা ফিরদৌসী

সুলতানা ফিরদৌসী নব্বুই দশকের একজন কবি ও সাহিত্যিক। লিখেছেন নিয়মিত। এই সাহিত্যপ্রিয় মানুষটি সাহিত্যের নানা দিকে বিচরণ করতে পছন্দ করেন। কবিতার আবেগ ও সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে জীবনের চরম সত্য খুঁজতে চান। উইমেননিউজ২৪.কম-এর পাঠকদের জন্যে এ কবির একগুচ্ছ কবিতা উপস্থাপন করা হলো।

১.
এই রোদের আলোয়

তুমি বলেছিলে কুষ্টিয়া যেতে 
অনেক বাউল গান, লালন মেলা। অবশ্যই আসবো গানের জন্য। 
তুমি শীতল পাটি পেতে বসাতে চাইলে। 
বললে ঘরে ভাজা মুড়ি আছে, পিঠে। অনেক কবিতা শুনবো, শোনাব, বনলতা, শক্তি, সুনীল....।
কিন্তু তুমি খুব বিস্ময়ে চোখ তুলে- বলেছিলে, আপনার মতো পারি না। 
আমার খুব হাসি পাচ্ছিল,
আমি আসলে কি পারলাম? 
ঘর হয়নি। ঘর কাকে বলে। কী তার সংজ্ঞা!
পদ্মার চরে ঘুরি কালোচুলে, মাথায় যেন 
বিলি কাটে সন্ধ্যায় দুষ্টু আঙ্গুলগুলো। 
নিভন্ত সান্ধ্যবাতির কে খোঁজ রাখে। 
আর তোমার কাছে ফিরে যাওয়া হয় না 
জীবনের প্রশ্নে ভেস্তে যায় মনের চোখ। 
সমস্ত অজানায় উড়তে যাওয়ার যন্ত্রণার চরে 
ঘুড়ি বানিয়ে ওড়াচ্ছে গান 
—‘বাউলের  ঘর হয়না রে, 
খেপা মন রে.....।

২.
স্বামী পর্ব

বিয়ের রাতে আলো নিভিয়ে
আমি যখন
তোমার দিকে তাকালাম;
তুমি বললে...
একটু অপেক্ষা করো
দরজাটা বন্ধ কিনা দেখে নেই
নইলে সমস্যা হবে।
আমি সে দিনই বুঝলাম
তুমি অনেক হিসেবি!
আমার মতো আবেগপ্রবণ নও।
যখন আমাকে আদর করলে,
আলোর দরজা খুললে হাসিমুখে,
আমি নিশ্চিত পাশ ফিরে সিদ্ধান্ত নিলাম,
আজ থেকে সব দায়িত্ব তোমার
কিন্তু সেটা সতত সত্যি নয়, তবে 
মিথ্যে স্বপ্ন ছিল
স্বামী তার সংজ্ঞা যেন  
বিশ্বের চালের আড়ৎদার
শরীর সে  চিরন্তন আবিস্কার 
শরীর শুধু শরীরের জ্বালা।

৩.
অপ্রিয়

নিখুঁত সুন্দরী নারী
কঠোর দংশনে কেন
অন্যের সম্পত্তি হয়ে যায়।
গাহ্য করে ম্লানতা মনের
ইন্দ্রিয় কেন যাতনা!
অসার এক ক্লান্ত বিকেলে
পেটুক যৌনতার অভ্যেসেই 
আদিমতম খেলায় মেতে ওঠে
যৌনতা তার সময়ের বাস্তবতায় 
তুচ্ছতায় পরিণত হয়, সূর্য তরঙ্গে
ভেসে ওঠে সেই সুকর্ন নদীর জলে
মিলনের আকাংখায় ছুটে যায়
সরু প্রান্তরে গভীর রাতে, তারপর 
ফেরাবে কি জীবনের সংযোগে! 
জীবনের প্রথম কষ্টের অভিজ্ঞতায়
মীমাংসা করা গেল না কোন ভাবে
এভাবে কবিতার সাথে বসবাসরত জীবন 
পার করে দিলাম, না পাওয়ার বেদনা নিয়ে। 
হায়রে জীবন...।

৪.
মৃত্যুরা উল্লাস করে

দৈনিক পত্রিকায় ছবিসহ সংবাদ
বন্দি গৃহবধূর উদ্ধার, মিশন সফল
নারীবাদী কোনো এক সংস্থা , হৈচৈ
ক্লিক ক্লিক হুড়োহুড়ি কেচ্ছা প্রচার।
জানা যায়, 
স্বামী তার যৌতুক লোভী
মুখোশধারী জানোয়ার
সাতদিন অনাহারে বন্দিত্ব 
এসিড ঝলসানো দগ্ধ তাকে
হত্যার চেষ্টায় মত্ত সে;
অতঃপর
আদালত কক্ষ রায় ঘোষণা করে
মেয়েটির পক্ষে!
তারপরেও হাসতে পারে না সে
কেন জানি তার মনে হয় 
চারদিকে মৃত্যুরা উল্লাস করছে।


৫.
কঙ্কালপোকা

এই জীবনে আসে নারীজন্মের সমস্ত ভার। 
নারী তুমি বেঁচে আছ এক তরঙ্গে
মৃত্যুর মিছিলে। নাকি নিয়তির দায়ভার
বারবার আনন্দ চিৎকার, এই সুখ ধকল
অতি সুন্দর অদ্ভূত অচেনা এক চাবুক। 
কিন্তু তুমি অস্থি। মানব জীবনের আস্থা।
এই সংসারের সমস্ত দায়িত্ববোধ শুধু 
যেন তোমার। সেই কিশোরীবেলা থেকে 
দেখতাম মা রোদে পুড়ে ছাই হচ্ছে! 
কারো কিছু  আসে যায় না। 
প্রতি জন্মের ভালো মন্দের দায়ভার 
কঙ্কালপোকার মতো বয়ে বেড়াচ্ছে,
এবার তুমি থামো প্রতিবাদী হয়ে ওঠো
পৃথিবীতে তোমারও অধিকার আছে।

কবি পরিচিতি:  সুলতানা ফিরদৌসী; কবি ও সাহিত্যিক। জন্ম ১১ ডিসেম্বর। গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায়। বাবা কর্মসূত্রে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে চাকুরি করতেন। তাই আশৈশব দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখার সুযোগ হয়। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজক্যাণে মাস্টার্স সুলতানার প্রথম প্রকাশিত কাব‍্যগ্রন্থ ‘কীট ও দ্রোণপুস্প’। ১৯৯৭ সালে বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্প থেকে প্রকাশিত হয়। পরে ‘তৃতীয় পক্ষ’ নামে উপন‍্যাস প্রকাশিত হয় ডায়লোগ পাবলিকেশন থেকে। ২০০৫ সালে আগামী প্রকাশনী থেকে আসে ছোটগল্প গ্রন্থ ‘এবার ঘরে ফেরার পালা’। আর শ্রাবণ থেকে আসে ‘বৃক্ষেরা ভিজে যায়’ নামে কবিতার বই। তার সর্বশেষ অনুবাদ কবিতার বই বেরিয়েছে ২০১৯ সালে। নাম ‘অ্যা গার্ল হ্যাজ নো নেইম’।
সুলতানা ফিরদৌসী ‘কালি’ নামে একটি সাহিত্য সংগঠনের সাথে জড়িত আছেন। জড়িত আছেন রাইটাস বাংলাদেশের সঙ্গে।
সফল কর্মজীবনের ইস্তফা দিয়ে বর্তমানে সপরিবারে আমেরিকায় বসবাস করছেন তিনি।