রাজধানীতে শীতের পিঠা বিক্রি জমজমাট
অনন্যা কবীর
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০২:২৪ পিএম, ৯ জানুয়ারি ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ১১:৪৫ এএম, ১০ জানুয়ারি ২০১৮ বুধবার
শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজধানীতে চলছে শীতের পিঠা বিক্রি। রাস্তার বিভিন্ন মোড়, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও মার্কেটের সামনে খোলা আকাশের নিচে শীতের পিঠা বিক্রি করছেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। তবে পুরুষের চেয়ে নারী পিঠা বিক্রেতাই বেশি।
ভোর থেকে মধ্যে রাত পর্যন্ত চলে পিঠা বিক্রি। শুধু যে কর্মজীবী মানুষেরা এই পিঠা খান তা নয়, সব শ্রেণি পেশার মানুষ এ পিঠা খাচ্ছেন।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অলি-গলি, রাস্তার মোড়ে বসেছে চিতই, ভাপা ও তেলের পিঠার দোকান। সকাল থেকেই পিঠা বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাতের দোকান ঘিরে ক্রেতারা বসে আছেন। নারী বিক্রেতা পিঠা তৈরি করছেন আর গরম গরম পিঠা তুলে দিচ্ছেন সামনে বসে থাকা ক্রেতার প্লেটে। কেউ কেউ প্যাকেটে ভরে গরম পিঠা নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে।
পিঠা বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা ও তেলের পিঠাই সাধারণত বানান তারা। এসব পিঠার দামও খুব বেশি নয়। আর চাহিদাও অনেক। চিতই পিঠা ৫ টাকা, তেলের পিঠা ৫ টাকা, ভাপা পিঠা ১০ টাকা। চিতই পিঠার সঙ্গে দেয়া হয় সরিষা ভর্তা ও শুটকি ভর্তা। আর ভাপা পিঠার সঙ্গে খেজুরের গুড় মিশ্রিত থাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে কথা হয় পিঠা বিক্রেতা চয়নিকা বেগমের সাথে। এখানে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে তিনি খালা নামে পরিচিত। তিনি বলেন, ‘আমি ২০ বছরৈর বেশি সময় ধরে এখানে শীতের পিঠা বিক্রি করছি। ছাত্র-ছাত্রীরাই আমার পিঠা বেশি খায়। বাইরে থেকেও ক্রেতা আসে। অনেক পুরাতন ছা্ত্র-ছাত্রী শীতে এখানে আমার হাতে পিঠা খেতে আসে।
তিনি বলেন, আমি সব সময় ভাপা পিঠা বিক্রি করি। শীত বেশি পড়লে শীতের পিঠাও বেশি বিক্রি হয়। অন্য সময় আমি এখানে ডাব এবং অন্য খাবার বিক্রি করি।
মালিবাগ বাজারের সামনে গত প্রায় ১৫ বছর ধরে পিঠা বিক্রি করেন আমেনা বেগম। তিনি বলেন, শীতের পিঠা বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। আমার স্বামীও শীতের পিঠা বিক্রি করে। আমরা সারা বছরই বিভিন্ন পিঠা বিক্রি করি। তবে শীত আসলে এ ব্যবসা জমজটাম থাকে। বেশ লাভবান হওয়া যায়।
তিনি বলেন, কাল আমরা দুজন মিলে প্রায় অাড়াই হাজার টাকার পিঠা বিক্রি করেছি। শীত শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই পিঠা বিক্রির ধুম পড়েছে। সামনে আরো বেশি পিঠা বিক্রি হবে।
হাতিরপুলে পিঠা বিক্রেতা শেফালী আক্তার ক্রেতার ভিড়ে কথাই বলতে পারছিলেন না। বেশ কিছুক্ষন পর নিজের মেয়ের হাতে দায়িত্ব দিয়ে বললেন, িএ সময়টায় কাস্টমার বেশি থাকে। সবাই আগে পেতে চায়। তাই ঝামেলায় পড়ে যাই।
তিনি জানান, প্রায় ১০ বছর এখানে পিঠা বিক্রি করছেন তিনি। সারা বছরই পিঠা বিক্রি করেন তিনি। বছর অন্য সময়টাতে চিতুই পিঠা বিক্রি করলেও এখন ভাপা ও তেলের পিঠাও বিক্রি করছেন।
তিনি বলেন, শীতের সময় এসব পিঠার চাহিদা বেশি। বিক্রি বেশ ভালো হয়। সারাবছর পিঠা বিক্রি করেই আমার সংসার চলে। আমার স্বামী কাজ করতে পারে না, অসুস্থ্য। তাই পরিবারের সব দায়িত্ব আমার। এক ছেলে এক মেয়ে। মেয়েটা বড়। ও এখন আমাকে সাহায্য করে। প্রতিদিন যা আয় হয় তাই দিয়ে সংসার চালিয়ে কিছু টাকা জমিয়ে রাখি।
শান্তিনগর ইস্টার্ন পয়েন্ট অ্যাপাটমেন্ট হাউজের পাশে পিঠা বিক্রি করেন জোহরা বাই। তিনি বলেন, সারাদিন বিক্রি বেশ ভালোই হয়। সকাল ও সন্ধ্যায় বেশি বিক্রি হয়। অ্যাপাটমেন্ট মানুষরা আমার নিয়মিত ক্রেতা। তারা পিঠা কিনে বাসায় নিয়ে যায়। তাছাড়া পথচারিরা সব সময় এখানেই খায়।
তিনি জানান, রিক্সা চালক স্বামীর একার আয়ে সংসার চলে না। তাই তিনি পিঠা বিক্রি করে সংসারে সহযোগীতা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী জেসমিন ফৌজিয়ার সাথে কথা হয় টিএসসির সামনে। জেসমিন বলেন, আমরা বন্ধুরা সব সময় এখানে শীতের পিঠা খাই। বেশ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে আম্মুর জন্য কিনে নিয়ে যাই।
হাতিরপুলে ভ্যান চালক আবুল মিয়া বলেন, শীতে এখানে আমি পিঠা দিয়ে নাস্তাটা শেষ করি। অল্প খরচে খাওয়া হয়। গরম গরম পিঠা খেতে বেশ লাগে।