বাংলাদেশের পাখি : ২।। ছোট্ট পাখি ফুলঝুরি
অনু সরকার
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০৭:৫২ পিএম, ১২ জানুয়ারি ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ০৭:০৪ পিএম, ২০ এপ্রিল ২০১৮ শুক্রবার
আমাদের দেশের সবচেয়ে ছোট পাখির নাম কি প্রশ্ন করলে জানি অনেকেই উত্তর দিতে পারবে না। অনেকেই হয়তো পাখিটিকে দেখেছে। কিন্তু নাম জানে না। তবে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম পাখির নাম হয়তো সকলেরই জানা। কিউবার পাখি হামিংবার্ড সারা পৃথিবার সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম পাখি। রঙ ঝলমলে অদ্ভুত সুন্দর এই পাখটির আকৃতি মাত্র ৪.৯ সেন্টিমিটার। পাখিটি এতো ক্ষুদ্র যে সহজেই একে হাতের মুঠোয় ভরে ফেলা যায়।
আর বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট পাখি ফুলঝুরি। আমাদের ফুলঝুরিও বেশ রূপবতি পাখি। সুন্দর, মিষ্টি গানের গলা, সাহসী এবং কিছুটা লাজুক স্বভাবের এই পাখিটি আমাদের দেশে এখনো প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। রাজধানী ঢাকাতেও দেখা যায় ব্যাপকহারে। তবে পাখিটি আকারে অনেক ছোট হওয়ায় খুব একটা নজরে পড়ে না। গাছের ডালে ডালে সারাক্ষণ চিক্ চিক্ শব্দে চঞ্চলভাবে উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়ায় ওরা।
খুবই অস্থির স্বভাবের পাখি ফুলঝুরি। চুপ করে যেন বসতেই পারে না। ওড়ার সময় কিংবা গাছপালার ওপর দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ানোর সময় সে চিক্ চিক্ করে একটানা ডেকে যায়। মাঝে মাঝে ক্ষীণ স্বরে ওদের গান গাইতেও শোনা যায়। ওদের গানের গলা টুনটুনি বা দোয়েলের মতো অতো তীব্র না হলেও বেশ মিষ্টি।
ফুলঝুরির ইংরেজি নাম TICKEU’S FLOWER PECKER। বৈজ্ঞানিক নাম Dicaeum emrythrorhynchos। ফুলঝুরিকে প্রথমে দেখে টুনটুনি বলে ভুল হয়। কিন্তু আকৃতিতে এই পাখি টুনটুনির চেয়েও ছোট। আর ফুলঝুরির লেজ টুনটুনির মতো ওপরের দিকে উঁচু করা থাকে না। থাকে শরীরের সঙ্গে সমান্তরালভাবে নিচের দিকে নামানো।
ফুলঝুরির কপাল ডানা ও পিঠের ওপরের পালকের রঙ জলপাই বাদামি থেকে হালকা জলপাই। ডানার অগ্রভাগে অস্পষ্ট কালচে ভাব রয়েছে। বুকের দিকের রঙ ধূসর সাদা। চঞ্চু খাটো, পাতলা, খুব শক্ত এবং নিুমুখী। চঞ্চুর রঙ মাংসের রঙের মতো। কখনো কখনো হালকা হলুদ হতেও দেখা যায়। লেজ ছোট, নিচের দিকের তলের অংশ কালো। ওদের শরীরের মাপ ৮ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ ফুলঝুরি দেখতে একই রকম।
ওদের প্রিয় খাবার নানা রকম ফল ও ফুলের মধু। তবে বিভিন্ন রকম ক্ষুদ্র কিট-পতঙ্গও ওরা খেয়ে থাকে। গেরস্থের বাগানের ফল গাছে হামলা করতে ওস্তাদ এই ফুলঝুরি। পাকা পেঁপে বা ওই জাতীয় ফল খেতে খেতে ছোট্ট শরীরসুদ্ধ ফলের ভেতর ঢুকে পড়ে ওরা। ফুলঝুরি খাওয়ার ব্যাপারে বেশ পেটুক।
গ্রীস্মকাল ওদের প্রজননে সময়। এ সময় বেশ উঁচুতে গাছের ডালে ছোট থলির মতো ঝুলন্ত বাসা বানায়। বাসার স্থান নির্বাচন সাহেব-বিবি মিলে করলেও বাসা তৈরি করা ও ডিমে তা দেয়ার দায়িত্ব বিবির একাই। তবে বাচ্চাদেরকে দুজনে মিলেমিশেই খাওয়ায়। ওদের ডিমের সংখ্যা ২টি এবং রঙ একদম সাদা।
আমাদের দেশে ফুলঝুরিকে বেশ কয়েকটি নামে ডাকা হয়। কেউ কেউ ওকে ফুলচুষি বলে। আবার কোনো কোনো অঞ্চলে ওকে মধুচুষিও বলা হয়।
বাংলাদেশে একটি পরিযায়ীসহ ৭ প্রজাতির ফুলঝুরি সনাক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশে ফুলঝুরির ৭টি প্রজাতির মধ্যে মেটেঠোঁট ফুলঝুরি ও লালপিঠ ফুলঝুরি (Scarlet-backed Flower pecker) দেশের সব এলাকায় দেখা যায়।
এছাড়াও অন্য এক প্রজাতির ফুলঝুড়ি আমাদের প্রকৃতিতে ঘুরে বেড়ায়। ওর নাম আগুনবুক ফুলঝুরি। এই প্রজাতিটি দেখা খুবই দুষ্কর।