ঢাকা, সোমবার ২৫, নভেম্বর ২০২৪ ১৭:২৬:৩৬ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত ৪ নারীর কথা

অনলাইন ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:০৯ এএম, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ বৃহস্পতিবার

চার লেখক

চার লেখক

সম্প্রতি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার‘২০২১ ঘোষণা করা হয়েছে। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় অবদান রাখার জন্য এবার এ পুরস্কার পেয়েছেন ১৫ জন সাহিত্যিক। এর মধ্যে নারী সাহিত্যিক রয়েছেন ৪ জন। নিচে এই চার নারীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি উপস্থাপন করা হলো।

সুফিয়া খাতুন: 
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার‘২০২১ পেয়েছেন লেখক সুফিয়া খাতুন। আত্নজীবনী/ স্মৃতিকথা/ভ্রমনকাহিনি শাখায় তাকে এই পুরস্কার দেয়া হয়। 

সুফিয়া খাতুন জন্ম মে ১৯২২ সালে ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে। এই বিদুষী সংগ্রামী নারী সারাজীবন সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে ধারণ ও লালন করেছেন। তারই প্রকাশ ঘটেছে আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে' (২০০৫)-এ। শিশুদের জন্য রচনা করেছেন ‘সােনা ঝরা দিন’ (২০০৬)। মধ্যযুগে বাংলার নগরায়ন ২০১৫, নারী চোখে জল ২০০৫।  

দীর্ঘ তিন যুগ ধরে তার পরিচিত পরিবেশ এবং নিকটজনদের নিয়ে কিছু সরস ও সহজবােধ্য কবিতা রচনা করেছেন। সেগুলাে মলাট বন্দি করেছেন ‘আপন ভুবন’ নামক কাব্যগ্রন্থে। 

জীবনের মনোরম দিনগুলি কাটিয়েছেন প্রবাসী সন্তানদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্রে। এই দীর্ঘ প্রবাসজীবনের দিনলিপির খসড়া প্রণয়ন ‘প্রবাসের প্রাপ্তি’ গ্রন্থটি।

পান্না কায়সার:
পান্না কায়সার একজন শিক্ষক ও সাহিত্যিক। জাতীয় সংসদের সাবেক সাংসদ তিনি। পান্না কায়সার ১৯৫০ সালের ২৫ মে নোয়াখালিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার স্বামী শহীদুল্লা কায়সার দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক এবং রাজনীতিক ছিলেন।

পান্না কায়সার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেখাপড়া করেছেন। শিক্ষক হিসেবে তিনি পেয়েছিলেন মুনির চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর মত শিক্ষকদের। 

১৯৬৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শহীদুল্লা কায়সারের সাথে তার বিয়ে হয়। সেদিন ঢাকা শহরে কার্ফিউ ছিল। পুরো দেশ তখন গণআন্দোলনে উত্তাল। শহীদুল্লা কায়সারের হাত ধরে তার পরিচয় আধুনিক সাহিত্যের সাথে, রাজনীতির সাথে। তার সংসার জীবন স্থায়ী হয় মাত্র দুই বছর দশ মাসের মত। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আলবদর বাহিনীর ক’জন সদস্য শহীদুল্লা কায়সারকে তার পুরোনো ঢাকার বাসা ২৯ বি কে গাঙ্গুলী লেন থেকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর তিনি আর ফেরেন নি।

পান্না কায়সার শিশু কিশোর সংগঠন 'খেলাঘর' এর প্রেসিডিয়াম মেম্বার ছিলেন সেই ১৯৭৩ সাল থেকে। ১৯৯০ সালে তিনি এই সংগঠনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৬-২০০১ সালের জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের একজন সাংসদ ছিলেন।

তার দুই সন্তান, শমী কায়সার ও অমিতাভ কায়সার। শমী কায়সার টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনেত্রী হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। 

সাহিত্যকর্ম-
মুক্তিযুদ্ধ
: আগে ও পরে (War of Liberation: Before and After), ১৯৯১
মুক্তি (Freedom), ১৯৯২
নীলিমায় নীল (Dyed with Indigo), ১৯৯২
হৃদয়ে বাংলাদেশ (Bangladesh in My Heart), ১৯৯৩
মানুষ (The Man), ১৯৯৪
অন্য কোনখানে (Somewhere Else), ১৯৯৪
তুমি কি কেবলি ছবি (Are You only a Picture), ১৯৯৪
রাসেলের যুদ্ধযাত্রা (Russel’s Journey to the War), ১৯৯৪
দাঁড়িয়ে আছ গানের ওপারে (You’re Standing on the Other Side of the Songs), ১৯৯৪
আমি (Self), ১৯৯৪
না পান্না না চুনি (Neither Panna Nor Rubi), ১৯৯৫
অন্য রকম ভালোবাসা (Another Kind of Love), ১৯৯৫
সুখ (Happiness), ১৯৯৫। 

ঝর্ণা রহমান:
ঝর্ণা রহমান গল্পকার, কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক ও শিশুসাহিত্যিক। তিনি ১৯৮০-এর দশক থেকে গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, নাটক, কবিতা, ছড়া, ভ্রমণ, শিশুসাহিত্য রচনা করে আসছেন। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৬০টি। 

তিনি বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবেও কর্মরত আছেন।

ঝর্ণা রহমান ১৯৫৯ সালের ২৮ জুন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মোফাজ্জল হোসেন এবং মা রহিমা বেগম। তার গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার কেওয়ারে।

দীর্ঘ সাহিত্যজীবনে তিনি বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন। নিচে তা তুলে ধরা হলো।

গল্পগ্রন্থ: 
ঘুম-মাছ ও এক টুকরো নারী
অগ্নিতা
স্বর্ণতরবারি
কৃষ্ণপক্ষের ঊষা
পেরেক
জাদুবাস্তবতার দুই সখী
বিপ্রতীপ মানুষের গল্প
বিষপিঁপড়ে
তপতীর লাল ব্লাউজ
আয়নামামি
 

অনূদিত গল্পগ্রন্থ:
ডাউন অব দ্যা ওয়েনিং মুন

উপন্যাস: 
পিতলের চাঁদ
ভাঙতে থাকা ভূগোল

কাব্যগ্রন্থ:
জল ও গোলাপের ছোবল
হরিৎ রেহেলে হৃদয়
চন্দ দহন

নাট্যকাব্য:
উড়ন্ত ভায়োলিন

কিশোর উপন্যাস:
আদৃতার পতাকা
হাতি মা ও টুনটুনি

নাটক:
বৃদ্ধ ও রাজকুমারী

ভ্রমণ: 
আমরা যখন নেপালে।

বাংলা ভাষার কথাসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ঝর্ণা রহমান ২০২১ সালে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার-১৪২৭ লাভ করেন।

সাধনা আহমেদ:
সাধরা আহমেদ দেশের একজন স্বনামধন্য নাট্যকার, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৭ সালে টেলিভিশন নাটক লেখার মাধ্যমে নাট্যকার হিসেবে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন। 

এ পর্যন্ত প্রায় ৫০টি টেলিভিশন নাটক ছাড়াও মঞ্চের জন্য লিখেছেন, দমের মাদার, ফাগুনশেষে, মাত্ব্রিং, ব্রাত্য আমি মন্ত্রহীন, অংশুপট উপাখ্যান, বিপুল তরঙ্গ, গাঙকুমারী, বিরাঙ্গনার আঁচল ও প্রজন্ম’১৩ এবং ভারতের দল ‘রঙ্গকর্মীর’ জন্য লিখেছেন ‘সপ্তপর্ণী’। 

এছাড়া তিনি বেশ কিছু কবিতা ও গল্প লিখছেন। ২০১৭ সালে সাধনা আহমেদের দুটি নাটক শিরোনামে প্রকাশনা সংস্থা ‘অনন্যা’ থেকে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। 

বর্তমানে তিনি ইন্টারন্যাশলাল থিয়েটার ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ কেন্দ্রের সাথে যুক্ত আছেন।

উল্লেখ্য, বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা ২০২২-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আনুষ্ঠানিকভাবে এ পুরস্কার দেবেন। ১৯৬০ সাল থেকে এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি পুরস্কারের অর্থমূল্য ৩ লাখ টাকা। এছাড়াও পুরস্কারপ্রাপ্তদের সম্মাননা পত্র ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।