ঢাকা, সোমবার ২৫, নভেম্বর ২০২৪ ১৮:২১:৩৮ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

সাহিত্যিক মৈত্রেয়ী দেবীর মৃত্যুদিবস আজ

সাহিত্য ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৮:৫৭ এএম, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ শুক্রবার

মৈত্রেয়ী দেবী; ফাইল ছবি।

মৈত্রেয়ী দেবী; ফাইল ছবি।

মৈত্রেয়ী দেবী;  বাঙালি কবি, লেখক ও ঔপন্যাসিক। তার বিখ্যাত আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ন হন্যতে তাকে বিশেষ খ্যাতি এনে দেয়। িআজ ৪ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যুদিবস।

ন হন্যতে উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৭৬ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। সাহিত্য ছাড়াও সমাজসেবায় অনন্য অবদান রেখেছেন তিনি। ১৯৭৭ সালে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হন।

মৈত্রেয়ী ১৯১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর তার বাবার কর্মস্থল তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত ও মায়ের নাম হিমানী মাধুরী রায়। তার বাবা ছিলেন একজন দার্শনিক ও প্রাবন্ধিক। তার শৈশব কাটে বাবার বাড়ি বরিশাল জেলার আগৈলঝারার গৈলা গ্রামে। ১৯৩৬ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগমায়া দেবী কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

মির্চা এলিয়াদ নামক এক বিদেশীর সাথে তার সম্পর্ক তার পরিবারকে বিশেষভাবে যখন নাড়া দেয় তখনি তারা তার বিয়ে ঠিক করেন। ১৯৩৪ সালে তিনি ড. মনোমোহন সেনকে তিনি বিয়ে করেন। 

মনোমোহন সেন ছিলেন বিজ্ঞানী। তিনি মংপুতে সিনকোনা ফ্যাক্টরির ম্যানেজার ছিলেন ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ভেষজ সিনকোনা চাষ নিয়ে গবেষণা করেন। মৈত্রেয়ী দেবী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্নেহভাজন হওয়ায় তারা মংপুতে থাকাকালীন রবীন্দ্রনাথ মৈত্রেয়ীর আমন্ত্রণে ১৯৩৮ সাল থেকে ১৯৪০ সাল 
পর্যন্ত চারবার সেখানে যান।

মৈত্রেয়ী দেবীর সাহিত্যজীবন শুরু হয় মাত্র ষোল বছর বয়সে। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ উদিত ১৯৩০ সালে প্রকাশিত হয়। এই বইয়ের ভূমিকা লিখেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ চিত্তছায়া। ১৯৪২ সালে রবীন্দ্রনাথের মংপুতে কাঠানো দিনগুলোর স্মৃতি ও তার সাথে আলাপচারিতা নিয়ে লিখেছেন স্মৃতিকথা ‘মংপুতে রবীন্দ্রনাথ’। বইটি টেগোর বাই ফায়ারসাইড নামে ইংরেজিতে অনূদিত হয়। রবীন্দ্রবিষয়ক তার অন্যান্য বইগুলো হলো স্বর্গের কাছাকাছি, কবি সার্বভৌম, রবীন্দ্রনাথ গৃহে ও বিশ্বে, রবীন্দ্রনাথ: দি ম্যান বিহাইন্ড হিজ পোয়েট্রি। 

তার আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ‘ন হন্যতে’ পাঠক মহলে তাকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে আসে। ১৯৭৫ সালে ভারতীয় লেখিকা সংঘ ‘ন হন্যতে’ উপন্যাসের জন্য তাকে সম্মানসূচক পদক দেয়। 'ন হন্যতে' মানে 'যাকে বিনাশ করা যায় না'। এই বইতে তিনি তার দৃষ্টিভঙ্গি, জীবন বোধ, ইংরেজ শাসনামলে ভারতের সমাজ ব্যবস্থা এবং জীবনযাপনের চিত্র তুলে ধরেন। এ বইটির জন্য তিনি ১৯৭৬ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। বইটি ইংরেজি ভাষায় ‘ইট ডাজ নট ডাই’ নামে অনূদিত ও প্রকাশিত হয়।

১৯৬১ সালে রবীন্দ্র শতবার্ষিকীতে আমন্ত্রিত হয়ে তিনি বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি ও সোভিয়েত ইউনিয়ন যান৷ সোভিয়েট ইউনিয়ন তাকে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী পদকে ভূষিত করে। মৈত্রেয়ী দেবী সোভিয়েত ইউনিয়ন, ইউরোপ ও আমেরিকাতে রবীন্দ্রনাথের ওপরে ও শান্তির সমস্যা বিষয়ক বহু ভাষণ দেন। তিনি ১৯৬৪ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলাকালীন 'কাউন্সিল ফর প্রমোশন অব কমিউনাল হারমনি' সংস্থা স্থাপন করেন। 

মৈত্রেয়ী দেবী ১৯৭১ সালের বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারতে বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে বিভিন্ন স্থানে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। এ সময় তিনি কলকাতা থেকে ২৪ মাইল দূরে বাদু নামক গ্রামে ৯ বিঘা জমিজুড়ে কৃষি, মাছ পালন, মৌ পালন, গো পালন, হাঁস কুকুর পালনের সাথে শরণার্থী শিবিরের অনাথ শিশুদের জন্য 'খেলাঘর' নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ সংস্থার দেখাশুনা করেন।

১৯৯০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন মৈত্রেয়ী দেবী।