আইএসের বিরুদ্ধে ইয়াজিদি নারীদের সশস্ত্র সংগ্রাম
আসমা আক্তার
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ১০:৪৯ পিএম, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ১০:৪৩ পিএম, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ শনিবার
মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের উত্থানের পর, সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হয়েছে ইয়াজিদি সম্প্রদায়। ২০১৪ ও ১৫ সালে বহু ইয়াজিদি নারীকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করেছে আইএস। আর জোর করে ধর্মান্তরিত ও হত্যার শিকার হয়েছে অসংখ্য ইয়াজিদি পুরুষ।
সারা পৃথিবীতে এ সম্প্রদায়ের প্রায় ৭ লাখ মানুষ থাকলেও, তাদের সিংহভাগের বসবাস উত্তর ইরাকের সিনজার পর্বতের আশপাশে।
আইএসের হাতে নির্যাতনের শিকার ইয়াজিদিদের অনেক নারী তাই এবার জঙ্গিগোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে নেমেছেন। নিজ সম্প্রদায়ের ওপর চালানো নির্যাতনের প্রতিশোধ নিতে জীবন দিতে প্রস্তুত তারা।
খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে অগ্রহণযোগ্য ইয়াজিদিরা নৃতাত্ত্বিকভাবে কুর্দি সম্প্রদায়ভুক্ত। ২০১৪ সালে ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের উত্থানের পর সিনজার পর্বতের আশপাশে বসবাসরত ইয়াজিদিদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায় জঙ্গিগোষ্ঠীটি।
আইএস শত শত নারীকে অপহরণ করে মাসের পর মাস আটকে রাখে। ২০১৫ সালে মুক্তির পর কয়েকজন ইয়াজিদি নারী গণমাধ্যমে আইএসের অত্যাচারের রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছিলেন। আইএসের নৃশংসতা থেকে আজও যাদের মুক্তি মেলেনি, তাদের জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন হাসিবা নৌজাদ ও আসিমা দাহিরের মতো ইয়াজিদি ও কুর্দি নারী যোদ্ধারা।
এক নারী যোদ্ধা বলেন, ‘যুদ্ধক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মাঝে আমি কোনো পার্থক্য দেখি না, একজন পুরুষের পাশে আমরা যখন অস্ত্র হাতে দাঁড়াই এটা তাদের আরও বেশি উৎসাহিত করে।’
ইয়াজিদি নারী ও শিশুদের আর্তনাদ, যুদ্ধের মাঠে নামিয়েছে অনেককে। প্রথাগত সংসার ভুলে মরুভূমি আর বনে-বাদারেই কাটছে তাদের অষ্ট প্রহর। নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও আইএসের নির্যাতনের প্রতিশোধ নিতে চান তারা।
এক নারী যোদ্ধা বলেন, ‘আমার যে বোনেরা আইএসের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তাদের কথা ভেবে আমার দম বন্ধ হয়ে আসতো। তাই কুর্দি নারীদের সঙ্গে আমিও যুদ্ধে নেমেছি।’
তাদের মতো আরও অনেক নারী কুর্দি পেশমার্গা বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধে নাম লিখিয়েছেন। পুরুষদের মতো যুদ্ধক্ষেত্রে তারাও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। এমনকি ইরাকের উত্তরাঞ্চল মসুল থেকে আইএসকে হটাতে এ নারীদেরও বড় ভূমিকা ছিলো বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
১৮ ও ১৯ শতকে অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীনে ইয়াজিদিরা অন্তত ৭২ বার হামলা ও গণহত্যার শিকার হয়েছে। ২০০৭ এ উত্তর ইরাকে গাড়ি বোমা হামলায় কয়েকশ’ ইয়াজিদি নিহত হয়। আইএসের হামলার শিকার হওয়ার আগে আল-কায়দার রোষানলে পড়েছিলো ইরাক ও সিরিয়ার এ সংখ্যালঘুরা।
বারবার আক্রমণের মুখে পড়া ইয়াদিজিদের একটি বড় অংশ, এরইমধ্যে মধ্যপ্রাচ্য ছেড়ে গেছে। পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের তথ্যমতে, গত ২ বছরে লক্ষাধিক ইয়াজিদি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে।
(বিদেশী পত্রিকা অবলম্বনে)