ঢাকা, রবিবার ১৭, নভেম্বর ২০২৪ ১৯:১৮:১১ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

এশিয়ার বৃহৎ শিমুলবাগানে বসেছে ফুলের হাট

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:৫০ পিএম, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ বুধবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

জাদুকাটা নদীর তীরে ১০০ বিঘা জমির ওপর তৈরি শিমুলগাছে কোকিল না থাকলেও বসন্তের আগমনে ফুলে ফুলে ভরে গেছে বাগান। আর এতেই  ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। সবুজের ডালে ডালে রক্তলালের নাচন, শত কোটি শিমুল ফুলের রাজত্ব— এ যেন এক স্বপ্নপূর্তি স্বর্গরাজ্য।

বসন্ত আসার বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। তবে বসন্তের হাওয়া উত্তরের ভারতের মেঘালয় খাসিয়া পাহাড় থেকে জাদুকাটা নদীর স্বচ্ছ জলের আভা দোলা দিচ্ছে বাগানের প্রতিটি শিমুলগাছে। সে হাওয়ায় ঝরে পড়ছে রক্তরাঙা লাল শিমুল ফুল।

পাহাড়ি নদী জাদুকাটার তীরজুড়ে এখন এমনই মুগ্ধতা। যেন রক্তরাঙা শিমুলের অগ্রিম বাসন্তী অভিবাদন জানাচ্ছে সবাইকে। রূপের সেই আগুন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র কুড়িয়েছে হাজারো সৌন্দর্যপিপাসুর মন। ফাগুনের প্রকৃতির এই আগুনের সূত্রপাত বুঝি তাহিরপুরের এই শিমুলবাগান থেকেই।

এদিকে গাছভর্তি ফুলের কোনো সৌরভ না থাকলেও মায়ার কোনো কমতি নেই। দূরদূরান্ত থেকে সেই ফুলের স্নিগ্ধতা নিতে আসা মানুষগুলো যেন সেই মায়ার জালেই বন্দী।

জামালগঞ্জের ইশতিয়াক আহমেদ শাওন ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাদুকাটা নদীর তীরে অবস্থিত এই শিমুলবাগান। বাগানে এ মুহূর্তে টগবগে লালফুল ফুটেছে। কেউ যখন এই লাল ফুল দেখে তখন ছন্নছাড়া মানুষও প্রেমিক হয়ে যায়। বাগানের সৌন্দর্য মানুষ দূরদূরান্ত থেকে দেখতে আসে।

দর্শনার্থী পলি রায় বলেন, এশিয়ার বৃহত্তম শিমুল-বাগানে আজ ঘুরতে আসছি। এখন সব গাছেই ফুল ফুটতে শুরু করেছে। অন্যদের মতো প্রতিবছর আমিও আসি। খুবই ভালো লাগে। ভারতের মেঘালয় পাহাড়, বড়গোপটিলা ও রূপের নদী জাদুকাটার সমন্বয়ে শিমুল-বাগানের সৌন্দর্য আরও বেড়েছে।

মাথার ওপরে ফুটে থাকা ফুল ঝরে পড়ে লাল গালিচা হয়েছে। অতিথিদের লালগালিচার অপার সৌন্দর্যের স্বর্গরাজ্যে স্বাগত জানান ফুল বিক্রতা, ঘোড়াচালক ও ছবিয়ালরা।

সে লালগালিচার ফুল কুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে মালা, বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। রূপকথার ঘোড়ার পিঠে ছড়ে দর্শনার্থীরা লালগালিচায় ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন। এতে আয়ের পথ তৈরি হয়েছে ঘোড়ার মালিক ও ছবিয়ালদের।

বিন্নাকুলি গ্রামের বাসিন্দা ছবিয়াল মো. মঈনুল ইসলাম। সারাদিন সে বাগানেই ক্যামেরা নিয়ে আশায় বসে থাকে, কখন দর্শনার্থী আসবেন আর তার ডাক পড়বে। তবে এখন তাকে আর বসে বসে সময় পার করতে হয় না। দর্শনার্থীদের ছবি তুলে সারা দিন ব্যস্ত সময় পার করেন তিনি। তার ডিএসএলআর ক্যামেরা দিয়ে নিখুঁত প্রতি ছবিতে পাঁচ টাকা করে নেন দর্শনার্থীদের কাছ থেকে।

জাদুকাটার নদীর তীরে ১০০ বিঘারও বেশি জায়গাজুড়ে গড়ে উঠেছে এই শিমুল-বাগান। শীতের বিদায়ের এই সময়ে একসঙ্গে তিন হাজার গাছ পাপড়ি মেলে অপেক্ষা করছে মধুর বসন্তের। একদিকে রক্তিম ফুলের আভা, অন্যদিকে ভ্রমণপিপাসু মানুষ।

শিমুলের এই স্বর্গরাজ্যের শুরুটা আজ থেকে ১৯ বছর আগে। ২০০৩ সালে উপজেলার বাদাঘাট ইউপি চেয়ারম্যান প্রয়াত জয়নাল আবেদীন পতিত জমিতে গড়ে তোলেন এই শিমুল-বাগান। তিনি না থাকলেও থেমে নেই সৌন্দর্যপ্রিয় মানুষটির স্বপ্ন।

সময়ের স্রোতে একদিন বসন্তের আগমন ঘটবে এবং ফোরাবে। তবে তাহিরপুরের রূপে ভাটা পড়বে না এতটুকুও। শহীদ সিরাজ লেক, বড়গোপটিলা, টাঙ্গুয়ার হাওর, মেঘালয় পাহাড়, আর সেই পাহাড় বেয়ে নেমে আসা জাদুকাটা নদীর জাদুর টান রয়ে যাবে বছরজুড়ে।