ঢাকা, সোমবার ২৫, নভেম্বর ২০২৪ ১৭:২৯:৩৪ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

বার্নস অ্যান্ড নোবেল: লেখক-পাঠকের মাঝে সেতুবন্ধন

আইরীন নিয়াজী মান্না

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৩৭ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ শনিবার

নিউ ইয়র্কে বার্নস অ্যান্ড নোবেলের প্রধান শোরুমে লেখক।

নিউ ইয়র্কে বার্নস অ্যান্ড নোবেলের প্রধান শোরুমে লেখক।

বার্নস অ্যান্ড নোবেল নিয়ে লিখবো লিখবো করছি সেই অক্টোবরে নিউ ইয়র্কে বেড়াতে আসার পর থেকেই। যখনই আমেরিকায় আসি এই বইয়ের দোকানের বিভিন্ন শোরুমে আমি নেশার মত ঘুরে বেড়াই। এ তো আসলে দোকান নয়; বইয়ের সাম্রাজ্য। শোরুমগুলোতে ঢুকলে যে দিকেই চোখ যায় শুধু বই আর বই! আমি আবেগআপ্লুত হয়ে পরি।
আমেরিকায় এক বর্ণাঢ্য বইয়ের দোকান ‘বার্নস এন্ড নোবেল’। আমেরিকায় সব চাইতে জনপ্রিয় বইয়ের দোকান। বার্নস অ্যান্ড নোবেলের হেড কোয়ার্টার নিউ ইয়র্ক শহরে। ১৮৮৬ সালে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের ১২২ ফিফথ এভিনিউর কুপার ইউনিয়ন বিল্ডিং থেকে যাত্রা শুরু করে প্রধান শোরুমটি। ইউনিয়ন স্কয়ারের এই বিল্ডিং থেকে তাদের অফিসিয়াল কার্যক্রমও পরিচালিত হয়। প্রধান শোরুমটি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে এটি ছড়িয়ে পরে পুরো আমেরিকার নানা শহরে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এই কোম্পানির তত্ত্বাবধানে ৬৩৮টি দোকান পরিচালনা করা হয়। ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত আমেরিকার ৫০টি রাজ্যের ৬১৪ টি শো-রুম পরিচালিত হচ্ছে।
নিউ ইয়র্কের হেড কোয়ার্টার ছাড়াও ম্যানহাটনের একটি শোরুম এবং লং আইল্যান্ড ও নায়াগ্রার একটি শোরুমে আমার যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। কুপার ইউনিয়ন বিল্ডিং মূল দোকানটিতে আমি একাধিবার গিয়েছি। এবং প্রতিবারই হতবাক হয়েছি।
শো-রুমগুলোতে ঢুকলেই চোখে পড়বে থরে থরে সাজানো বিভিন্ন স্বাদের বই। বিষয় ভিত্তিতে বইয়ের তাক আলাদা করে সাজানো। যার যে শাখা পছন্দ, সেখান থেকে পছন্দসই বই নিয়ে পড়া যায় সহজেই। বসে বসে বই পড়ার নান্দনিক ব্যবস্থা রয়েছে  প্রতিটি শোরুমে। 
বাচ্চাদের জন্য আছে পৃথক বিভাগ। যেখানে আছে বই, খাতা, কলম, কার্টুন, খেলনাসহ নানা ধরনের আকর্ষণীয় জিনিসপত্র। আছে নানা ধরনের পুতুল যেগুলো জড়িয়ে ছোট বাচ্চারা বসে থাকে আর খেলা করে। 
একটানা বই পড়তে পড়তে যদি এক ঘেয়ে লাগে, তাহলে আছে শৌখিন জিনিসপত্র নেড়ে চেড়ে দেখার সুযোগ। 
বই খুঁজে পাওয়ার জন্য সাজানো রয়েছে কম্পিউটার। কম্পিউটারে পছন্দসই বইয়ের নাম দেয়ার সাথে সাথে সে বইয়ের উপস্থিত জায়গা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
কীভাবে বই পড়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ানো যায় তাই চেষ্টা করে যাচ্ছে বার্নস অ্যান্ড নোবেল। পাঠকের আগ্রহের প্রতি লক্ষ্য রেখেই শোরুমগুলো এগিয়ে চলেছে। বিভিন্ন ভাষার, বিভিন্ন বিষয়ের, বিভিন্ন থিমের বই এখানে পাওয়া যায়। ছোট গল্প থেকে রান্নার গল্প, ভ্রমণ কাহিনী, বিজ্ঞানের বই থেকে কবিতার বই, কী নেই এখানে? বিভিন্ন বয়সের মানুষজন ভিড় করে এই দোকানে। তবে অবাক ব্যাপার, কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। 
‘বি অ্যান্ড এন’ নামে এই বিখ্যাত দোকানের একটি ওয়েবসাইট আছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এই ওয়েবসাইট থেকেও বেশ ভালোভাবেই বিক্রি হচ্ছে বই। ইন্টারনেটের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে বিভিন্ন স্বাদের বই। প্রতিষ্ঠানটির এ ধরনের সেবাও পাঠকের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে অল্প সময়ের মধ্যে। বই বিক্রির পাশাপাশি বার্নস অ্যান্ড নোবেল গত ২০০০ সাল থেকে বই প্রকাশও করছে। বর্তমানে পৃথিবীর একটি নামকরা প্রকাশনা সংস্থা এটি।
বার্নস অ্যান্ড নোবেলের বিভিন্ন শোরুমে বিখ্যাত কবি-সাহিত্যকদের বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানও আয়োজন করা হয়। এতে পাঠকদের সাথে সরাসরি লেখকের ভাবের আদান-প্রদান ঘটে। লেখকরা তাদের পাঠকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন, আবার তাদের বইয়ে অটোগ্রাফও দেন। মাঝে মাঝে অনেক লেখক তাদের লেখা পাঠকদের পড়ে শোনান। এ যেন লেখক আর পাঠকের মধুমিলনের সেতুবন্ধন তৈরি করে। এই আবেগ ও অনুরাগ যেন চিরন্তন হয়ে উঠে দুই পক্ষের হৃদয়ে। অনেক সময় লেখার ওয়ার্কশপও হয় এখানে। তখন বিখ্যাত-অখ্যাত সব ধরনের লেখকদের আমন্ত্রণ করা হয়। আমন্ত্রিত হন সাহিত্যপ্রেমীরা। 
১৮৭৩ সালে চার্লস এম বার্নস ইলিনয়ের হোইটনে তার নিজ বাড়ি থেকেই সর্বপ্রথম এই ব্যবসা শুরু করেন। তারপর তার ছেলে উইলিয়াম ১৯১৭ সালে বার্নস অ্যান্ড নোবেল প্রতিষ্ঠার জন্য জি ক্লিফোর্ড নোবেলে যোগদান করার জন্য নিউইয়র্কে আসেন। নিউইয়র্ক শহরের এইটিন স্ট্রিটের ফিফথ এভিনিউতে বার্নস অ্যান্ড নোবেল ফ্ল্যাগশিপ স্টোর চালু করেন তিনি। 
প্রতিষ্ঠানটির আধুনিক যুগের প্রতিষ্ঠাতা লিওনার্ড রিগিও ছিলেন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সামান্য কেরানি। ১৯৬০ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির কেরানি হিসেবে চাকরিজীবন শুরু করেন। রিগিও বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজের পাশাপাশি ব্যবসার কথা ভাবছিলেন। ১৯৬৫ সালে খুব সামান্য টাকা পুঁজি করে বই বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন তিনি। তার স্টোরটি ছিল মূলত ‘Student Book Exchange (SBX)’ যা ম্যানহাটনের গ্রিনউইচ ভিলেজ এলাকাতে। এই স্টোর খুব দ্রুতই নিউইয়র্কে তার সেবা ও মানের জন্য জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৭০ সালে রিগিওর ব্যবসা ক্রমশ বড় হতে থাকে এবং দ্রুত আরও ছয়টি কলেজ বুকস্টোর ম্যানহাটনে গড়ে ওঠে। এক বছরের মধ্যেই রিগিওর ফিফথ অ্যাভিনিউর স্টোর বিশ্বের সবচেয়ে বড় বুকস্টোর হিসেবে খ্যাত লাভ করে। এই প্রতিষ্ঠানের টেক্সট বই এবং টাইটেল সংখ্যা ছিল দেড় লাখ। এভাবে প্রতি দশকেই তার ব্যাপক বিকাশ ঘটতে থাকে। 
১২.০২.২০২২
জামাইকা, নিউ ইয়র্ক