ঢাকা, রবিবার ২৪, নভেম্বর ২০২৪ ১৮:৫০:৫৬ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

বঙ্গবন্ধুর উপহার ৫০০ টাকা সুলেখা ম্রংয়ের পথচলার প্রেরণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:১১ পিএম, ১৯ মার্চ ২০২২ শনিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

গারো অধ্যুষিত টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়াঞ্চল। এখানকার বৃহৎ গারো নারী সংগঠন আচিক মিচিক সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক গারো নারী নেত্রী সুলেখা ম্রং। তার স্মৃতির বিরাট অংশজুড়ে আছে জাতির জনকের মধুপুর বনের অভ্যন্তরে দোখলা রেস্ট হাউসে অবস্থানকালীন ঘটনা। সে এক প্রেরণার নাম।


জাতির পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ পালনের এ মুহূর্তে সে ঘটনার উদ্দীপিত স্মৃতিচারণ করলেন দোখলার পাশের গ্রাম ভুটিয়ার সুলেখা ম্রং।

তার ভাষ্যমতে, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মানুষ হিসেবে পড়াশোনার সুযোগ তার খুব একটা ছিল না। যাও ছিল আর্থিক টানাপড়েনে শেষ অবধি চালিয়ে যাওয়া ছিল দুরূহ। তার ওপর নারীদের নানা বাধা তো আছেই। কিন্তু জাতির পিতার তখনকার উপহারের ৫০০ টাকা সুলেখা ম্রংকে সব বাধা ডিঙাতে গতি এনে দিয়েছিল। যে গতি তিনি তার সন্তানের মধ্যেও সঞ্চারিত করে গর্বিত মাতা হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত।

১৯৭১ সালের শুরুর কথা। তখন ভুটিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সে। হঠাৎ জানা গেল দোখলাতে জাতির পিতার অবস্থানের কথা।  সুলেখার দাবি, তাদের বিদ্যালয়ে নেতা কিছু সময়ের জন্য এসেছিলেন। প্রধান শিক্ষক নিরেন চিরান তাৎক্ষণিক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। স্থানীয় গারো রাজা পরেশ মৃ ছিলেন সঙ্গে।

সুলেখা ম্রং জানান, তাৎক্ষণিক আয়োজন হওয়ায় ফুলের মালার ব্যবস্থা করা যায়নি। তার হাতে কাগজের মালা দিয়ে নেতার গলায় পরিয়ে দেওয়ার জন্য বলা হলো। কাছে যেতেই বঙ্গবন্ধু তাকে টেবিলে তুলে নিলে শিশু সুলেখা গলায় মালা পরিয়ে দেয়। আদর করে ৫০০ টাকার নোট তার হাতের মুঠিতে ধরিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু।

বঙ্গবন্ধু সেখানে থেকে চলে আসেন। শিশু সুলেখা মনে করেছিল টাকাটা স্কুলের জন্য দিয়েছে। স্কুলে জমা দিতে গেলে প্রধান শিক্ষক নিরেন চিরান জানান এটি তার টাকা। এ দিয়ে সে যে কোনো কিছু কিনতে পারে। শিশু সুলেখা ম্রং পরম মমতায় টাকাটা প্রধান শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে এসএসসি পরীক্ষার জন্য গচ্ছিত রাখতে চাইলে স্থানীয় সোনালী ব্যাংকে জমা রাখা হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি মুরগি লালন করে মাসে মাসে পরিবারের মাধ্যমে সে প্রধান শিক্ষকের কাছে ১০ টাকা করে দিত। প্রধান শিক্ষক এর সঙ্গে আরও ১০ যোগ করে ২০ টাকা জমা দিতেন অ্যাকাউন্টে।

দুই ক্লাসে ডাবল প্রমোশন পাওয়া মেধাবী সুলেখা ১৯৭৭ সালে এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। ব্যাংকে তার জমা তখন তিন হাজার টাকা। ফরম ফিলাপের ফি, বেতনসহ অন্যান্য মিলে হয় ১৮০০ টাকা। অ্যাকাউন্ট থেকে ১৮০০ টাকা দিয়ে ফরম ফিলাপ করে তিনি পরীক্ষায় বসেছিলেন। ৩৫ জনের মধ্যে তিনিই একমাত্র ভালো ফল করেছিলেন। পরে তিনি মধুপুর কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। সংসারি হয়ে তিনি দুই সন্তানের জননী। দুই সন্তানকেও তিনি স্নাতকোত্তর পাশ করান।  এখন তারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে চাকরি করেন।

তিনিও ২০০৪ সালে তার হাতে গড়া গারো নারী উন্নয়নে আচিক মিচিক সোসাইটিতে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। সমাজের পিছিয়ে পড়া অবহেলিত, বঞ্চিত, ভুক্তভোগী নারীদের সহায়তায় কাজ করে চলছেন। স্বামী, সন্তান ও প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে তিনি বেশ সুখী।

সুলেখার দাবি, জাতির পিতার দেওয়া সে টাকায় অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর উপহার ৫০০ টাকা তার গতি পথের প্রেরণা হয়েছে।  আজও বিষয়টি তার কাছে রূপকথার গল্পের মতো মনে হয়। এ নিয়ে তিনি বেশ গর্বিত, আন্দোলিত। আজকের দিনে বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানোর সঙ্গে স্রষ্টার প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।