ঢাকা, রবিবার ১৭, নভেম্বর ২০২৪ ১৪:০০:২৮ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

দুর্গম চরে পরীক্ষামূলক সূর্যমুখীর চাষে সফলতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৩২ পিএম, ৪ এপ্রিল ২০২২ সোমবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

ভোলার দুর্গম কলাতলীর চরে লবণাক্ত পতিত জমিতে প্রথম বারের মত পরীক্ষামূলক সূর্যমুখী ফুলের চাষে সফলতা এসেছে। এই এলাকার জমিতে লবণাক্ততার কারণে আমন মৌসুমের পর জমিগুলো অনাবাদি পড়ে থাকতো।

সেখারে সূর্যমুখী ফুলের ভালো ফসল হওয়ায় খুশী কৃষক। স্বল্প খরচে অধিক ফলন দেখে এলাকার অন্যান্য কৃষকদের মাঝে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ দেখা দিয়েছে। এতে অনাবাদী জমির পরিমাণ কমার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ হবে বলছে কৃষি বিভাগ। কলাতলী চরে চারদিকে ফাকা মাঠ মাঝখানে ফুটে আছে হলুদ সূর্যমুখী ফুল। সূর্য যখন যেদিকে হেলছে, সূর্যমুখী ফুলও সেদিকে হেলে পড়ছে। সবুজের মধ্যে হলুদ ফুলগুলো অপরূপ সৌন্দর্যের উৎস হয়ে দাঁড়িয়ে। এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মৌমাছির দল যেমন ছুটে আসছে তেমনি প্রকৃতিপ্রেমীরা আসছেন দল বেঁধে।

ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি ছবিও তুলতে আসছেন তারা। কিন্তু কয়েক বছর আগেও দ্বীপ জেলা ভোলার মনপুরা উপজেলার দুর্গম এই কলাতলীর চরে আমন মৌসুমে ধান কাটার পর জমিগুলো অনাবাদি পড়ে থাকতো বলে জানান স্থানীয়রা।

তারা আরও জানান, এ বছর প্রথমবারের মতো লবণাক্ত জমিতে উচ্চমূল্যের ফসল চাষের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি লক্ষ্যে পিকেএসএফের পেজ প্রকল্পের আওতায় বেসরকারি এনজিও গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা পরীক্ষা মূলকভাবে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ শুরু করে। সংস্থাটির কাছ থেকে বিনামূল্যে বীজ, জৈব সার এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে স্থানীয় কৃষক শাহ জালাল তার ৬০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ করেন। প্রথমবারেই জমিতে সূর্যমুখীর বাম্পার ফলনে তিনি বেজায় খুশি।

ভোলার মনপুরার কলাতলী চরে কৃষক শাহ জালাল জানান, নদীর লবণাক্ত পানি কলাতলী চরে প্রবেশ করায় এ চরে গত কয়েক বছর ধরে তেমন কোন ফসল হচ্ছিলনা। ফলে অনাবাদি ছিল তার জমি। চলতি মৌসুমে স্থানীয় এনজিও গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা থেকে বিনামূল্যে বীজ ও জৈব সার এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে সূর্যমুখীর আবাদ করেছেন। ফলনও হয়েছে ভালো। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ও বাজারে সূর্যমুখীর দাম ভালো পেলে লাভবান হতে পারবেন বলে মনে করছেন স্থানীয় এ চাষি।

তার সাফল্য দেখে স্থানীয় অর্ধ শতাধিক কৃষক সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ব হয়েছেন। আগামীতে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা সহায়তা ও পরামর্শ নিয়ে সূর্যমুখীর চাষ করবেন বলে জানান তারা।

স্থানীয় কৃষক সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম ও শাহীন মোল্লার স্ত্রী হাজেরা বেগম বলেন, পাশ্ববর্তী চাষী শাহ জালালের সূর্যমুখী চাষের সাফল্য দেখে তাদেরও এ চাষে আগ্রহ বেড়েছে। আগামীতে তারাও গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা থেকে বীজ, সার ও প্রশিক্ষণ নিয়ে সূর্যমুখীর চাষ করবে বলে জানান তারা।

এ ব্যাপারে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন জানান, লবণাক্ত জমিতে উচ্চমূল্যের ফসল চাষের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি লক্ষ্যে পিকেএসএফের পেজ প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা দুর্গম কলাতলীর চরে পরীক্ষা মূলকভাবে একজন কৃষকের মাধ্যমে সূর্যমুখীর আবাদ শুরু করে। লবণাক্ত জমিতে ফলনও হয়েছে ভালো। তার দেখাদেখি অন্যান্য কৃষকদেরও সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ বেড়েছে। আগামীতে এ প্রকল্পের আওতায় ওই চরে আরও বেশি কৃষক তৈরির পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির।
তিনি আরও জানান, মনপুরার কলাতলীর চর ছাড়াও ভোলা সদর, চরফ্যাশন, দৌলতখান, বরিশাল জেলার বাখেরগঞ্জ, বাবুগঞ্জ, পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলায় এ প্রকল্পের আওতায় ৭২ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ১০০ কৃষক এবছর সূর্যমুখীর আবাদ করেছে। এ বিষয়ে মনপুরা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আকাশ বৈরাগী বলেন, কলাতলীর চরের চারিদিকে কোন বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের লবণাক্ত পানি ভেতরে ঢুকে। ফলে আমনের মৌসুমে শুধু আমন ধান ছাড়া কোন ফসল হয়না। ওই চরে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা কৃষকদের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছে। উপকূলের লবণাক্ত এসব জমিতে সূর্যমুখীর উৎপাদন বাড়াতে পারলে একদিকে যেমন অনাবাদি জমির পরিমাণ কমবে, অন্যদিকে দেশে ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।