টিপ পরায় নারীকে হেনস্থা: সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড়
অনু সরকার
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০১:৫৪ পিএম, ৪ এপ্রিল ২০২২ সোমবার
প্রতীকী ছবি
রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের প্রভাষক লতা সমাদ্দার থানায় অভিযোগ দিয়ে বলছেন, কপালে টিপ পরার কারণে পুলিশের একজন সদস্য তাকে হেনস্তা করেছেন।
লতা সমাদ্দার অভিযোগ করেছেন, শনিবার সকালে কর্মস্থলের দিকে হেঁটে যাওয়ার সময় পুলিশের পোশাক পরা একজন ব্যক্তি তাকে 'টিপ পরছোস কেন' বলে কটুক্তি করেন।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, সেই সময় তিনি প্রতিবাদ জানালে তার গায়ের ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন পুলিশের পোশাক করা ওই ব্যক্তি।
এর প্রতিবাদের সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সোমা দেব লিখেছেন, আমি টিপ পরবো, কার কী?
সমাজকর্মী জানাতুন আরা হক লিখেছেন, আমার অধিকার বলেই আমি শুধুটিপ পরি তা নয়, আমি বাংলার সংস্কৃতিকে ধারণ করি। আমি ওহাবী মুসলিম নই, আমি জন্মসূত্রে ইসলাম ধর্মে পরিচিত, এবং বাংলাদেশের নাগরিক, বাঙালি জাতিসত্তায় আমাকে চেনা যায়। তাই হিজাব পরার যে সংস্কৃতি বাংলাদেশে আজ চলমান তাকে আমি অধিকার মানতে নারাজ।এটা ধার করা, চাপিয়ে দেয়া তাই যে সকল আতেল বুদ্ধিজীবীরা, টিপ পরার অধিকারের সাথে হিজাব পরা বা খোলার অধিকারকে সমকক্ষ বানাচ্ছে, তাদের ভেতরে বাঙালি সংস্কৃতি ধারণ না করতে পারার দৈন্যতা দেখতে পাই।
কবি শান্তা মারিয়া লিখেছেন, দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকি, পোশাক প্রাচ্যের বা পাশ্চাত্যের হোক কপালে টিপ থাকে সব সময়েই। অনেকে বিদেশে আমাকে জিজ্ঞাসা করে কপালে এই ‘স্টিকার’টি কিসের? আমি বলি এটা আমার বাঙালিত্বের পরিচয়। বিশেষ করে চীনে এই টিপ আমার ব্র্যান্ডিং। অনেকে আবার বলে ‘এটা কি বিন্দি?’ আমি বলি হিন্দিভাষায় বিন্দি হলেও বাংলায় এটা টিপ’। আয় আয় চাঁদমামা টিপ দিয়ে যা.. বাংলার চিরন্তন লোকজ ঐতিহ্য।
আমি টিপ পরি, টিপ হোক প্রতিবাদ।
সাংবাদিক লাবন্য লিপি লিখেছেন, চাঁদকে ডেকেছিলাম খোকার কপালে টিপ পরিয়ে দিতে। চাঁদ প্রথমে মায়ের কপালে এঁকে দিলো লাল টিপ। তারপর খোকার কপালে দিলো কাজলের টিপ;
যেন পুলিশের নজর না লাগে!
ফেসবুক ব্যবহারকারী ফারাহ জেবিন শাম্মী ওই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে লিখেছেন, কোনদিন নামাজ পড়েন না, জীবনে কোনদিন মসজিদেও যাননা। স্মার্ট লাইফ লিড করেন, মদ, ঘুষ সবই খান কিন্তু হিজাব নিকাবের বাড়াবাড়ির কথা আসলে তারাও পোশাকের স্বাধীনতা এবং ধর্ম পালনের স্বাধীনতার কথা বলে তাদের পক্ষ নেন।
তিনি আরও লিখেছেন, আর তারা হয়ত জানেন না আজকাল রাস্তাঘাটে, বিভিন্ন জায়গায় হিজাব না পরা, টিপ পরা নারীদের নানা কটূক্তির শিকার হতে হয়। অনেক সময় গালি গালাজ।
লেখক কাজী নুসরাত শরমীন লিখেছেন, টিপ আমার সংস্কৃতির অংশ। লাল টিপ আমার কাছে পতাকার লাল বৃত্তের মত। আমি সাধারণত লাল টিপই পরি। এর একটা অর্থ আছে আমার কাছে। এই লাল টিপে আমি আমার সংস্কৃতিকে ধারণ করি। আমার ইতিহাসকে ধারণ করি।সর্বোপরি আমাদের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের আত্মত্যাগকে ধারণ করি। এটা আমার কাছে দেশপ্রেমের অংশ। আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, তাই যেকোন ভাবে দেশ, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সাথে এই যুথবদ্ধতাই আমার কাছে দেশপ্রেম। সন্তানের রক্ত মাটিতে লেগে আছে বলে যে মা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কখনো জুতো পরেননি, লাল টিপ আমাকে তাঁর কথা মনে করিয়ে দেয়। এই টিপ আমার কাছে অনেক অর্থপূর্ণ। দেশের ক্ষতি হয় এমন কোন চিন্তা মনে কখনো স্থান দেইনি। কেবলমাত্র টিপ নয়, একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে এ দেশের সংস্কৃতির প্রতিটি টুকরো টুকরো অংশকে আত্মায় ধারণ করাই আমার কাছে দেশপ্রেম।
অবন্তী নাগ প্রমী লিখেছেন, সিস্টেম যদি টিপ পরার পেছনে লাগে, তবে দিনরাত টিপ পরেই থাকবো।
সাবিনা ইয়াসমিন মাধবী নিজের ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, একজন নারীকে রাস্তায় বিভিন্ন ভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত আমি নিজেও হই। তাই বলে পুলিশের পোশাক পরা একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে নারীকে হয়রানি? এতো বড় দুঃসাহস? আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।