ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬, নভেম্বর ২০২৪ ২১:৪১:৪৬ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

মৃত্যুর ২৯ বছর: এখনো ভক্তদের হৃদয়ে দিব্যা ভারতী

বিনোদন ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:৫৫ এএম, ৫ এপ্রিল ২০২২ মঙ্গলবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

নব্বই দশকের প্রথম ভাগে উল্কার মতো বলিউডে এসেছিলেন, আবার উল্কার মতোই চলে যান। আজও তার কথা মনে করে চলচ্চিত্র বোদ্ধারা। যার নাম উচ্চারিত হলেই অনেকটা হতাশা ও আক্ষেপ ভেসে উঠে বলিউড পাড়ার লোকজনের চোখে মুখে। যার কথা বলছি তিনি হলেন দিব্যা ওম প্রকাশ ভারতীয়। অর্থাৎ দিব্যা ভারতী। আজ তার ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল মাত্র ১৯ বছর বয়সে দুনিয়ার মায়া ছেড়ে চলে যান সেই সময়ের অন্যতম আলোচিত এই অভিনেত্রী। 

বর্তমান প্রজন্মের অনেক তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীরা সেইভাবে নাও চিনতে পারে তাকে। কারণ দিব্যা গত হয়েছে ২৯ বছর আগে। দিব্যা সম্পর্কে জানতে হলে একটু পেছনের দিকে তাকাতে হবে। ১৯৯২ সালে ‘বিশ্বাত্মা’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন দিব্যা। এর আগে ১৯৯০ সালে ‘বাবলি রাজা’ ছবি দিয়ে রূপালী জগতে তার বিচরণ ঘটে। অর্থাৎ এই তেলেগু ছবির মাধ্যমে তার যাত্রা শুরু হয়। যদিও বিদ্যার জন্ম মুম্বাইয়ের জুহুতে। বলিউড নয়, সেই সময় একের পর এক হিট ছবি উপহার দেন তেলেগু ইন্ড্রাস্ট্রিতে। অভিনয় করেন ‘নিলা পেনি’, ‘না ইল্লে না সরগম’, ‘রাউডি আল্লাডু’, ‘এসেম্বলি রাউডি’ ও ‘ধর্মাক্ষেত্রম’ ছবিতে। তেলেগু দর্শকদের কাছে এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেন যে দিব্যার নামে তামিলনাড়ুতে মন্দির উদ্বোধন করা হয়। 


১৯৯২ সালে বলিউডের ‘বিশ্বাত্মা’ ছবিতে বিদ্যার বিপরীতে ছিলেন সানি দেওল। সেই বছরের ২ জানুয়ারি মুক্তি পায় এ ছবিটি। ছবিটি আলোচনায় চলে আসে তার অভিনয় ও গানগুলো দিয়ে। বিশেষ করে ‘সাত সামুন্দর’ গানটি দর্শকদের হূদয়ে আজও জায়গা করে আছে। এমনকি এ গানটির সুর ও কথা নকল করে বাংলাদেশের একটি ছবিতে সালমান শাহ ও সোনিয়ার একটি গানে চিত্রায়িত হয়। গানটি ছিল ‘নীল সাগর পার হয়ে’। এরপর একের পর এক ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হতে থাকেন দিব্যা। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার লরেন্স ডি সুজার রোমান্টিক ছবি ‘দিল কিয়া কাসুর’র মধ্যে তার বিপরীতে থাকেন নায়ক পৃথবী। ১৯৯২ সালের মার্চে মুক্তি পাওয়া ডেভিড ধাওয়ানের ‘শোলে ওর শাবনাম’। এতে তার বিপরীতে ছিলেন গোবিন্দ। কিন্তু টার্নিং পয়েন্ট ছিল শাহরুখ খানের বিপরীতে ‘দিওয়ানা’ ছবিটি। সেই বছরের অন্যতম ব্যবসা সফল ছবি হয় এটি। শাহরুখ খানও পুরস্কার আদায় করে নেন সেরা অভিষেক নায়ক হিসেবে। এ ছবিটির যে গানটি এখনও সবাইকে আন্দোলিত করে সেটি হল ‘অ্যায়সে দিওয়ানে হি....।’ এর পরপরই একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার শুরু হয় দিব্যার। ১৯৯২ এবং ১৯৯৩ এর প্রথমার্ধে তিনি ১৪টি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন যা আজ পর্যন্ত বলিউডে অভিষেক হিসেবে তার রেকর্ড হয়ে আছে।

জীবিত অবস্থায় দিব্যার সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি হল- ‘খাতরিয়া’। এছাড়া মৃত্যুর পর আরও ৩টি ছবি মুক্তি পায় তার। এর মধ্যে একটি ছবিতে তার চরিত্রকে দৃশ্যায়ন করেন অভিনেত্রী রাম্বা। এই ৩টি ছবি অন্য অভিনেত্রীকে দিয়ে ডাবিং করানো হয়। এছাড়া তার হাতে ছিল আরও বেশ কয়েকটি ছবি। যেমন লাডলা (মৃত্যুর পর শ্রীদেবীকে নেয়া হয় অনিল কাপুরের বিপরীতে), মোহরা (মৃত্যুর পর রাভিনাকে নেয়া হয় অক্ষয় কুমারের বিপরীতে), আন্দোলন (তার মৃত্যুর পর রাভিনাকে নেয়া হয় সঞ্জয় দত্তের বিপরীতে)। 

১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল রাত ১১.৪৫ মিনিটে মুম্বাইয়ের তুলসি অ্যাপার্টমেন্টের ৫ তলার ব্যালকোনি থেকে পড়ে যান দিব্যা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। ২ দিন পর অনুষ্ঠিত হয় তার শেষকৃত্য। বলিউডের বড় বড় তারকারা যোগ দেন তার শেষকৃত্যে। অমরেশ পুরি, হেমা মালিনী, ববিতা, কারিশমা কাপুর, সাইফ আলী খান, সঙ্গিতা বিজলানী, শ্রীদেবী, মনিষা কৈরালা ও আশা পারেখের মতো প্রখ্যাত তারকাদের দেখা যায় সেখানে। কিন্তু দিব্যার মৃত্যু নিয়ে থেকে যায় নানা কৌতূহল ও প্রশ্ন। কেউ কেউ বলেছেন এটি দুর্ঘটনা না, হয়তো হত্যা। এমনকি তার স্বামী সাজিদ নাদিওয়ালার বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠে। কেউ কেউ আবার আঙ্গুল তোলেন মাফিয়া ডনদের দিকে। বাদ যাননি সমসাময়িক মাধুরী দিক্ষিত, জুহি চাওলা ও মনিষা কৈরালার মতো নায়িকারা। সমালোচকরা বলতেন, দিব্যার মৃত্যুতে এ তিন নায়িকার স্থান পুনরায় পাকা হয়। বিষয়টি সত্য মিথ্যা যাই হোক না কেন, সে সময় যথেষ্ঠ বেগবান হয় এ গুঞ্জনটি। ১৯৯৮ সালে মুম্বাই পুলিশের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে বলা হয়, দিব্যার মৃত্যুটি ছিল দুর্ঘটনাজনিত।

আমাদের দেশে প্রয়াত অভিনেতা সালমান শাহর মৃত্যু যে রকম রহস্যে ঘণীভূত, দিব্যার মৃত্যুটিও আজও সেই রকম। দিব্যা ভারতী যে আজও কতটা জনপ্রিয় তা সাম্প্রতিক এক জরিপে আবারও প্রতীয়মান হয়েছে। ভারতের একটি কোম্পানি ইউটিউবের উপর জরিপ চালায়। সেখানে দেখা যায় ৯০ দশকের যে গানগুলো মানুষ এখনও খোঁজে বা দেখে সেগুলোর মধ্যে দিব্যা ভারতী অভিনীত চলচ্চিত্রের গানগুলো অন্যতম। এসব গানের মাঝে দিব্যা ভারতী বেঁচে থাকবেন সেটাই ভক্তদের প্রত্যাশা।