পুতির কাজে সাথী স্বাবলম্বী
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০৬:১৯ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৮:৩৬ পিএম, ১০ মার্চ ২০১৮ শনিবার
টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলার দড়িহাতীল গ্রামের সুমাইয়া ইসলাম সাথী পুতির ব্যাগ তৈরি করে আজ স্বাবলম্বী। সাথী অন্যান্য মেয়েদের কাছে আজ এক উদাহরণ।
ঘরে বসে না থেকে আধুনিক যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে পুতির ব্যাগ তৈরি কর আয় করছেন তিনি। একই সাথে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করছেন অন্যদের। তিনি নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন ট্রেনিং সেন্টার ‘সাথী পুতির ব্যাগ তৈরির স্কুল’।
সাথীর স্বামী শফিকুল ইসলাম গ্রামের পল্লী চিকিৎসক। সাথী সন্তান পালনের পাশাপাশি একদিকে রং-বেরংয়ের পুতি দিয়ে মেয়েদের ভ্যানিটি ব্যাগ, পার্টস (হাত ব্যাগ) ও ফুলদানি তৈরি করে বিক্রি করছেন অপরদিকে আগ্রহী নারীদের প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন। একই সঙ্গে সংসারে অর্থনৈতিক সহযোগীতা করছেন।
সূত্র : বাসস
মধুপুর থানা মোড় থেকে চাপড়ি রোডের তালুকপাড়া নামক পাকা রাস্তার পশ্চিম পাশে গোয়ালা বাড়িতে ‘সাথীর পুতির ব্যাগ তৈরির স্কুল’ চোখে পড়বে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে পুতির ব্যাগের কাজ ও প্রশিক্ষণ। সুমাইয়া ইসলাম সাথীকে ঘিরে আঁখি খাতুন, আমিনা খাতুন, রাহিমা বেগম, নার্গিস আক্তার, হাজেরা বেগম, লিজা খাতুন, তানিয়া আক্তার, নুরজাহান বেগমসহ ১০-১৫ নারী কাজ করছেন। সাথী দেখিয়ে দিচ্ছে আর অন্যরা সে অনুযায়ী পুতি গাঁধছেন। তারা ভ্যানিটি ব্যাগ ও পার্টস তৈরির কাজ শিখছেন। কেউ পুতি গাঁধছেন, কেউ পাতলা কাপড় লাগাচ্ছেন। আবার কেউ ব্যাগের মধ্যে জিপার লাগাচ্ছেন।
‘সাথীর পুতির ব্যাগ তৈরির স্কুলে’ গিয়ে কথা হয় উদ্যোক্তা সুমাইয়া ইসলাম সাথীর সাথে। সাথী জানান, ৫-৬ বছর আগে ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে পুতির ব্যাগ তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেই ঘরে বসে কাজ শুরু করেন। এ কাজে আস্তে আস্তে সফলতাও আসতে থাকে। সাথীর এ কাজে সার্বিক সহযোগিতা করেন তার স্বামী শফিকুল ইসলাম।
তিনি ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ঘাটাইল ও মধুপুর থেকে ভ্যানিটি ব্যাগ ও পার্টস তৈরির সরঞ্জাম পুতি, প্লাস্টিকের সুতা, পাতলা কাপড় ও জিপার কিনে এনে দেন। তৈরিকৃত ভ্যানিটি ব্যাগ ও পার্টস আশপাশের গ্রামের মেয়েরা তা কিনে নেয়। অবশিষ্ট ভ্যানিটি ব্যাগ ও পার্টস মধুপুরের বিভিন্ন কসমেটিক্সের দোকানে পাইকারি বিক্রি করেন। প্রতিটি ভ্যানিটি ব্যাগ ৫শ’ টাকা থেকে এক হাজার টাকা এবং প্রতিটি পার্টস ২শ’ টাকা থেকে ৫শ’ টাকায় বিক্রি করা হয়। খরচবাদে সাথীর প্রতি মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় হচ্ছে।
সাথী আরও জানান, পুতির ব্যাগের কাজ শিখলে নিজের সংসারও চলে অপরদিকে অবসর সময়টুকু কাজে লাগিয়ে বাড়তি আয় করাও সম্ভব। সাথীকে দেখে ঐ গ্রামের অনেক মেয়েরা আজ পুতির ব্যাগের কাজ শেখার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তারা অবসর সময়টুটু অবহেলায় না কাটিয়ে পুতির ব্যাগ তৈরির কাজে লাগাচ্ছেন।
প্রশিক্ষণার্থী আবিদা সুলতানা আঁখি জানান, পুতির ভ্যানিটি ব্যাগ ও পার্টস তৈরির কাজ শিখলে পরিবারের মেয়েদের ব্যাগের চাহিদা মিটবে। যা বাজার থেকে অধিকমূল্যে কিনতে হতো। তাছাড়া নিজে ব্যাগ তৈরি করতে পারি। এটা আত্নীয়-স্বজনরা জানলে তারাও ব্যাগ তৈরি করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করবেন।
এ বিষয়ে মধুপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আমিনা আক্তার জানান, আজকের মেয়েরা বাবা বা স্বামীর সংসারের বোঝা নয়। তারা অনেকেই আত্মকর্মস্থানে নিজেদের নিয়োজিত করছেন। সাথীর মতো আত্ননির্ভরশীল কাজ করলে সমাজ থেকে বাল্যবিয়ে ও নারী নির্যাতন কমে যাবে।