সফল উদ্যোক্তা আফসানা ও ইশরাতের গল্প
অনলাইন ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৬:৩৩ পিএম, ১৮ মে ২০২২ বুধবার
প্রতীকী ছবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আফসানা আফরিন এবং বরিশালের মেয়ে ইশরাত জাহান। আফসানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। পাশাপাশি তিনি একজন ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা। রান্না করেন। রান্না করা খাবার অনলাইনে বিক্রি করেন।
রান্না করা তার শখ। সেই শখ থেকে এখন তার আয় হচ্ছে। ৮ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করেছিলেন আফসানা। ফেসবুকে তার ‘অবসরের দিনলিপি’ আ্যালবাম খুব জনপ্রিয়। বর্তমানে পাঁচজন কো-ওয়ার্কার নিয়ে কাজ করছেন আফসানা।
অবসরের দিনলিপিতে পাওয়া যায় ফুড আইটেম। নবাবী সেমাই, মিষ্টি, নিমকি, পিঠা, মুগ পাকন পিঠা, গরুর কালাভুনা,স্পাইসি চিকেন, পোলাও রোস্ট, লাঞ্চবক্স ইত্যাদি, যার মূল্য ৪৫ থেকে ২ হাজার ১০০ টাকার মধ্যে। ফুড আইটেমের চাহিদা বেশি।
তবে খাবার ডেলিভারি দিতে অনেক সমস্যা। বাংলাদেশে ফুড ডেলিভারি দেয় এমন কোম্পানির সংখ্যা খুব কম। আর ডেলিভারি চার্জ অনেক বেশি, যা ক্রেতাদের অনলাইনে খাবার নিতে নিরুৎসাহিত করে।
চুইঝাল নির্বাচিত ১০০ রান্না বইয়ে আফসানার একটি রেসিপি স্থান পেয়েছে। জাতীয় দৈনিক সংবাদ পত্রের লাইফ স্টাইল পাতায় তার রান্নার রেসিপি প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া ‘কুকআপস্ জিরোক্যাল ডেজার্টস কনটেস্ট-২০১৯’-এ শীর্ষ ১৬’র মধ্যে ছিলেন তিনি।
আফসানা পরিবেশ সুরক্ষায়ও কাজ করেন। তেলের বোতল, চিপসের প্যাকেট, পানির বোতল, দইয়ের হাঁড়ি আমরা ফেলে দেই। অথচ আফসানা এগুলোতে বাগান করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন।
এ বিষয়ে আফসানা বলেন, আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে চাইলেই প্লাস্টিকের ব্যবহার শুন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা যাবে না। বিকল্প না আসা পর্যন্ত প্লাস্টিকের ব্যবহার থাকবেই। তবে রিইউজ করে কিছুটা হলেও দূষণ কমানো সম্ভব। অর্থনৈতিক ক্ষতি লাঘব করা যায়।
গত একবছরে আফসানা অসংখ্য গাছ লাগিয়েছেন। মাত্র তিন থেকে ছয়শ টাকার মধ্যে সুন্দর ছোট একটি বাগান করা যায়। নিত্য নতুন আইডিয়া, উদ্ভাবনী চিন্তায় আফসানার জুড়ি নেই। ২০১৯ সালের বিশ্ব পরিবেশ দিবসে পুরস্কার পান তিনি।
আফসানার মতই আরেকজন গল্প, তিনি বরিশালের মেয়ে ইশরাত জাহান। ছোটবেলা থেকেই তার কাগজ দিয়ে এটা-সেটা বানানোর ঝোঁক। বিভিন্ন ধরনের ফুল, নৌকা, প্রজাপতি, পাখি, বিড়াল, মাছ, ব্যাঙ তৈরি করেত পারতেন। আশপাশের সবাই তা মুগ্ধ হয়ে দেখতেন। ছোটবেলার এ শখ বড়োবেলায় আর শখ নেই। শখ থেকে সাফল্য এসেছে আবার আয়ের উৎসও।
কাগজ দিয়ে ব্যতিক্রমী সব জিনিস বানাচ্ছেন তিনি। স্নাতক শেষ করেছেন কিছু দিন আগে। পড়াশুনার পাশাপাশি তার ‘পার্পল’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মা-বাবার সঙ্গে বরিশাল থাকেন তিনি। ফেলনা সব বস্তু দিয়ে প্রথম স্ক্রাপবুক বানান তিনি। জুতার বাক্স দিয়ে বানানো হয় মূল কাঠামো।
ইশরাত জানালেন, তার স্ক্রাপবুকের ৭০ শতাংশ জিনিসই ফেলনা। যেমন পুরনো জুতার বাক্স, পুরনো ক্যালেন্ডারের কাগজ ইত্যাদি। তার অবাক করা কাজ হলো, এই স্ক্রাপবুকের ভিডিওটি ফেসবুকে আপলোড করতেই তুমুল সাড়া পড়ে।
তিনি জানালেন, ইউটিউবে ইশারতের ‘পার্পল হ্যান্ডিক্রাফট’ নামে একটি চ্যানেল আছে। ব্যতিক্রমী সব কাজের টিউটারিয়াল আছে সেখানে। পার্পল দিয়ে ইশারত পুরাপুরিভাবে ব্যবসা শুরু করেন ২০১৭ সাল থেকে।
ইসরাত যে সব জিনিস বানান সেগুলো হলো, মোমের ওপর ছবির সঙ্গে ছোট একটা বার্তা অথবা উইস টেস্ট, রিং বুক, ফোল্ডিং স্ক্যাপ বুক, ফোল্ডিং কার্ড, ইভেন্ট/পার্টির জন্য প্রোপস, বার্থডে হ্যাট, বার্থডে ক্রাউন, ব্যানার, পেইন্ট ব্যাকড্রপ ফ্লোয়ার, কেক টপার, যে কোন দাওয়াতপত্র (জন্ম দিন, বিয়ে, গায়ে হলুদ, পার্টিসহ যে কোন সামাজিক অনুষ্ঠানের কার্ড), বার্থডে এনিভার্সারি, ফ্রেন্ডশিপ, মাদার্সডে, সরি কার্ড, থ্যাংকইউকার্ড, ঈদ কাড, এক কথায় যে কোন ধরনের কার্ড। বিভিন্ন ডিজাইনের মোম, কাগজের স্টিকার ইত্যাদি। তবে বেচা বিক্রির পুরাটাই অনলাইনে।
ইশরাত জানালেন, ফেসবুক পেইজে অর্ডার নেয়া হয়। কেউ-কেউ ইউটিউব ভিডিও দেখেও অর্ডার করেন। ছবি দেয়ার ব্যপারে ব্যবহার করা হয় হোয়াটসআ্যাপ, মেইল। ডেলিভারি বরিশারের বাইরে হলে কুরিয়ারে করা হয়।
আয় কেমন হচ্ছে, প্রশ্নশুনে মুচকি হাসির রেখা মিলল ইশরাতের মুখে।
হাসি মুখেই তিনি বললেন, পেপার ক্রাফটে লাভ অন্য সব ক্রাপটিংয়ের থেকে ভালোই। চাকরির পাশাপাশি এ কাজ করে বাড়তি আয় সম্ভব। শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনার পাশাপাশি এ কাজ করতে পারে। তারাতো অনলাইনে বেশি সময় কাটায় এসব নিয়ে একটু স্টাডি করলে সমস্যা কোথায়?
নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে ইশারত বলেন, নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী আমার কাজের নিদর্শন রেখে যেতে চাই তরুণ সমাজের জন্য।