বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি নারীকে গণধর্ষণের ঘটনায় ১১ জনের সাজা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০১:২৬ পিএম, ২১ মে ২০২২ শনিবার
ফাইল ছবি
ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি নারীকে গণধর্ষণ, অত্যাচার এবং সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে ছড়ানোর অপরাধে ১১ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে বেঙ্গালুরুর এক স্থানীয় আদালত। শুক্রবার আলোচিত ওই ঘটনায় অভিযুক্ত তিন নারীসহ ওই ১১ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন থেকে নয় মাসের কারাগারের সাজার ঘোষণা দেন বেঙ্গালুরুর অতিরিক্ত ‘সিটি সিভিল এন্ড সেশন’ আদালতের বিচারক এন. সুব্রামন্যা।
দোষী সাব্যস্ত চাঁদ মিয়া ওরফে সবুজ, মহম্মদ রফিকাদুল ইসলাম ওরফে হৃদয় বাবু, মহম্মদ আলামিন হোসেন ওরফে রফসান মন্ডল, রাকিবুল ইসলাম ওরফে সাগর, মহম্মদ বাবু শেখ, মহম্মদ ডালিম ও আজিম হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাগারের সাজা দেয়া হয়েছে। তাদের সহযোগী তানিয়া খান’কে ২০ বছরের কারাগারের সাজা শোনায় আদালত। এই গ্যাং’এর সদস্যদের সমর্থনের অভিযোগে এবং অবৈধভাবে বসবাসের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত মহম্মদ জামালকে ৫ বছরের কারাগারের সাজা দেওয়া হয়। সবকিছু জানা সত্ত্বেও অপরাধ স্বীকার না করার কারণে অন্য দুই নারী- নুসরত ও কাজলকে ৯ মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটে কর্নাটক রাজ্যের রামামূর্তি নগর পুলিশ থানার অধীন কনক নগর এলাকায়। গত ২০২১ সালের ১৮ মে নির্যাতনের ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায় চার পুরুষ এক নারীর ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছিল, আক্রান্ত ওই নারী উত্তরপূর্ব ভারতের কোনো রাজ্যের বাসিন্দা। আসাম পুলিশের পক্ষ থেকে আক্রান্ত ও অভিযুক্তদের ছবি দিয়ে টুইট করার পাশাপাশি তাদের সন্ধান দিলে পুরস্কারেরও ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে আসাম পুলিশের তরফে আরেকটি টুইট করে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ পুলিশ ও বেঙ্গালুরু সিটি পুলিশের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে যে আক্রান্ত নারী ও অভিযুক্তরা সকলেই বাংলাদেশি। অভিযুক্তদের বেঙ্গালুরু পুলিশ গ্রেফতার করেছে।’
এরপর তদন্তের জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়। অভিযুক্তদের খোঁজে বেঙ্গালুরুসহ সংলগ্ন রাজ্যগুলিতেও অভিযান চালায় বেঙ্গালুরু পুলিশ। তদন্তে নেমে ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে মোট ১২ জনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে ১১ জনই বাংলাদেশি নাগরিকের প্রত্যেকেই অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে এবং বেঙ্গালুরুতেই বসবাস করছিল। বাকিজন বেঙ্গালুরু বাসিন্দা।
জানা যায়, কাজের লোভ দেখিয়ে ওই বাংলাদেশি নারীকে পাচার করে প্রথমে বেঙ্গালুরুতে নিয়ে আসা হয়। যদিও নিজের বুদ্ধির জোরে ওই দলের হাত থেকে পালিয়ে কেরালায় চলে যায় সে। কিন্তু দলের সদস্যরা ওই নারীর পিছু ধাওয়া করে তাকে ফের কেরালা থেকে বেঙ্গালুরুতে নিয়ে আসে। তারপর এই সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ ও নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ। এরপর অভিযুক্তদের মামলা দায়ের করা হয়।
আদালতের নির্দেশ নিয়ে শুক্রবার বেঙ্গালুরু পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (পূর্ব) ভীমাশঙ্কর গুলেদ জানান, ‘দ্রুত ন্যায়বিচারের জন্য যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে তদন্ত এগিয়েছে এবং তদন্তে স্বচ্ছতা আনতে বিজ্ঞানের সহায়তা নেওয়া হয় যেমন ডিএনএ অ্যানালিসিস, ইলেকট্রনিক প্রমাণ, মোবাইল ফরেনসিক, ফিঙ্গার প্রিন্ট, ভয়েস স্যম্পলিংসহ তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। এমনকি ২৮ দিনের মাথায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ১০১৯ পাতার চার্জ গঠন করা হয়।
আলোচিত এই মামলাটির দ্রুত ন্যায়বিচারের জন্য কর্নাটক সরকারের পক্ষ থেকে ভীরানা তিগাড়ি-কে বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটরকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বেঙ্গালুরু সিটি পুলিশের এসিপি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি স্পেশাল ট্রায়াল মনিটরিং টিম গঠন করা হয়। বিচারকের সামনে মোট ৪৪ জন সাক্ষীর বয়ান রেকর্ড করা হয় এবং তিন মাসের কম সময়ের মধ্যে গদ বছরেরই জুলাই মাসে চার্জ গঠন করা হয়। আর এক বছরের মধ্যে শুনানি শেষে অভিযুক্তদের সাজাও ঘোষণা করা হলো।’ /