ডা. অদিতি সরকার স্মরণে সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৯:৪০ পিএম, ২৩ আগস্ট ২০২২ মঙ্গলবার
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা মেডিকেল কলেজের গ্যালারি-১ এ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ শিশু বিভাগ ও বাংলাদেশ শিশু চিকিৎসক সমিতির যৌথ উদ্যোগে ডা. অদিতি সরকার স্মরণে সচেতনতামূলক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।
মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে চিকিৎসক অদিতি সরকারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। নীরবতা পালন শেষে ডা. অদিতি সরকারের উপর নির্মিত ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। চিকিৎসক অদিতি সরকারের স্মরণে বক্তব্য রাখেন চিকিৎসক অদিতি সরকারের মা সবিতা রায়।
সভায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ শিশু বিভাগ ও বাংলাদেশ শিশু চিকিৎসক সমিতির প্রতিনিধি, ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেতৃবৃন্দ এবং কর্মকর্তারসহ মোট ৩০০ জন উপস্থিত ছিলেন।
সভা সঞ্চালনা করেন শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নাজনীন আক্তার ও ডা. আবু সাঈদ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ইফ্ফাত আরা শামসাদ, বিভাগীয় প্রধান, শিশু বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ- তিনি বলেন, আজকের এই সভার উদ্দেশ্য হলো ডা. অদিতি সরকারকে স্মরণ করে তার জীবন থেকে শিক্ষা নেয়া আমরা যাতে একজন আরেক জনরে প্রতি সসমর্মি হয়, পাশে দাঁড়াই, সচেতন হয়ে মনোবল না হারায়। সেইসাথে সকল বাঁধা বিপত্তি থাকুক না কেন সকলে মিলে সামনের দিকে এগিয়ে যাবো এবং সুন্দর জীবন ও ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবো।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বক্তব্যে ডা. অদিতি সরকারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন, ‘দীর্ঘ নারী আন্দোলনের ফলে অদিতি সরকাররা তৈরি হচ্ছেন এবং সমাজ প্রগতিতে অবদান রাখছেন। কিন্তু বিদ্যামন পুরুষ তান্ত্রিক সামাজিক, সাংস্কৃতি পরিবেশে নারীরা বৈষম্য, বঞ্চনা, সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। এখনও নারীর মানবাধিকার, সমঅধিকার, মর্যাদার বিষয়ে পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্র গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করছে না। যা ফলে নারীর যাপিত জীবন বিভিন্নভাবে বিপন্ন হচ্ছে। হত্যা এবং প্ররোচণার মাধ্যমে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের জন্য আমাদের সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।’
সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মো. টিটো মিয়া, অধ্যক্ষ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ; ডা. সুরাইয়া পারভীন শোভা, শিশু বিশেষজ্ঞ; ডা. মো: রাসেল চৌধুরী, শিশু বিশেষজ্ঞ; ডা. মোর্শেদা শিউলি, শিশু বিশেষজ্ঞ; ডা. প্রদীপ কুমার, শিশু বিশেষজ্ঞ; অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার, সিনিয়র শিক্ষক, শিশু বিশেষজ্ঞ, সহসভাপতি, কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ; সিনিয়র শিক্ষক ও শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নাজনীন আখতার বানু, মনরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেখলা সরকার, অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। এছাড়াও সিনিয়র শিক্ষক ও শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লুৎফুল কবির, অধ্যাপক ডা. মো: আব্দুর রউফ, অধ্যাপক ডা. সুলির্মল রায়, অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম, প্রফেসর মো. জাহিদ হোসেন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হকসহ প্রমুখ বক্তা বক্তব্য রাখেন।
সভায় অন্যান্য আলোচকবৃন্দ বলেন, ‘নারীকে একই সাথে তার পেশা, সংসার, পড়াশুনা সব কিছু চালিয়ে যেতে হয়। সবাই তার কাছে তার সর্ববোচ্চ সেবা চায়। কিন্তু নারীরও যে চাহিদা থাকতে পারে তার জন্যও যে সময় প্রয়োজন সেটা কেউ বিবেচনা করে না। ডা. অদিতি সরকারের মত মেধাবী সদা হাস্য উজ্জ্বল প্রা শক্তি ভরা মানুষদের এভাবে নিরবে নির্ভৃতে চলে যাওয়া মেনে নেয়া যায় না।’ বক্তরা বলেন, ‘আমাদের পরিবারে সময় দিতে হবে। সেভাবেই সহকর্মীসহ যোদ্ধাদের, সহপাঠিদের সাথে নিজেদের আবেগ অনুভূতি শেয়ার করতে হবে। এক অপরের সহমর্মী হতে হবে। মানসিক বিকাশে সহযোগিতা করতে হবে এবং প্রয়োজনে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ও সাইকোলজি সোশ্যাল কাউন্সিলরের সহযোগিতা নিতে হবে। নারী-পুরুষ সম্বিলিতভাবে সহিংসতার প্রতিরোধ করতে হবে। পরিবারে, সমাজে এবং রাষ্ট্রে নারী-পুরুষের সমতাবৃদ্ধি করতে হবে।; বক্তারা আরো বলেন, আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়। জীবনে দু:খ-কষ্ট থাকবে। বিপন্নতা থাকবে তবে সে বিষয়ে নিজেকে সচেতন হতে হবে এবং এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে হবে সামনের দিকে পথ চলতে হবে। তরুণ প্রজন্ম নিজেরা সচেতন হবে এবং অন্যদের সচেতন করবে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।’
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘আজ আমরা একত্রিত হয়েছি কেন নারী বিপন্নতা শিকার হচ্ছে। গত এক বছরে ১২১ জন নারী আত্মহত্যা করেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মেয়েরা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। নারীর মৃত্যু যে বিপন্নতা কেন আমরা এটাকে বিপন্নতা বলছি আমরা একজন নারীকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে দেখেতে পারছি না। আজকে ২১ বিংশ শতাব্দীতে এসেও নারীর মাববাধিকার প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। জেন্ডার বৈষম্য করা যাবে না। সব পুরুষেরই উচিত জেন্ডার বিষয়ে ধারণা নেয়া। আমরা এখন যুগের সাথে জ্ঞান-বিজ্ঞানে মানুষ অনেক এগিয়ে। নারী-পুরুষের মাঝে পরষ্পরকে জায়গা দিতে হবে ও বুঝতে হবে। এখন সময় এসছে সমাজকে নতুন করে চেনার, নতুন করে ভাবার, নিজেকে নতুন করে প্রস্তুত করা। অদিতির মৃত্যু আমাদের সবাইকে একটা সচেতনতামূলক বার্তা দিয়ে গিয়েছে আমাদের সমাজকে বদলাতে হবে।’