... তবু এভাবে বাঁচতে চাই না
উম্মুল ওয়ারা সুইটি
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০১:৪৯ পিএম, ৪ এপ্রিল ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০৫:০৫ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০১৮ বুধবার
কাল দুপুরে একটি বিশেষ কাজে গিয়েছিলাম জিগাতলা। বিকেল পাঁচটায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ অফিসে অ্যাপয়েন্টমেন্ট রয়েছে। একঘন্টা হাতে সময় আছে। ধানমন্ডি লেকে ঢুকলাম। একটু হেঁটে লেক পারে গিয়ে বসলাম। আমার থেকে ২/৩ ফুট দূরেই বসে আড্ডা দিচ্ছে চার তরুণী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
বিউটি হত্যা ও ধর্ষক বাবুল মিয়ার গ্রেফতার নিয়ে কথা বলছে তারা। নারী নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলছে।
সেই আড্ডা থেকে একজন বললো, বাবুলকে গ্রেফতারের দরকার কি ছিলো, ওকে কি ক্রসফায়ারে দিলে হতো না? এখন তো মামলা চলবে, রিমান্ড এটা, সেটা কত কি?
আরেকজন বললো, ক্রসফায়ার তো অন্য বিষয়। সন্ত্রাসীরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর অনেক সময় অ্যাটাকের চেষ্টা করে, তখন তারা বাধ্য হয়ে গুলি চালায়। ধর্ষকদের ক্ষেত্রে তো তা হবে না। আইন মতো বিচার কাজ এগোবে।
তৃতীয় একজন বললো, এটা তো আমরা সবাই জানি। বিচার কাজে অনেক সময় লাগে। প্রতি দিন যেভাবে ধর্ষণ বাড়ছে, ছোট বোন, পরিবারের কন্যাশিশু আর কিশোরী-তরুণীদের নিয়ে পরিবারগুলো উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় থাকে। এভাবে তো চলতে পারেনা।
এভাবে আইন ও বিচার এবং ধর্ষক বাবুল মিয়াকে কি করা উচিত তাই নিয়ে বিতর্ক-আলোচনা চলতে থাকলো ওদের মধ্যে। এক পর্যায়ে চার তরুণী হতাশ ও ক্ষিপ্ত হয়ে গেলো।
ওরা প্রায় সবাই বলতে লাগলো, দেখবি বাবুল মিয়ার কিছুই হবে না। একদিন আইনের মারপ্যাঁচে সে বেরিয়ে যাবে। কিংবা আমরাও আর খবর রাখতে পারবো না। আর এদিকে তো প্রতি দিন কত মেয়ে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে? কতজন বাবুলের খবর রাখে?
হঠাৎ একজন উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বললো, এই এতো কথা বলিস না তোরা। চল কিছু করি।
একজন তিরস্কারের ভঙ্গিতে বললো, মানববন্ধন, সমাবেশ না কান্না কর্মসূচি? এসবে কিচ্ছু হবে না। ওই ধর্ষকরা এইসব মিনমিনে কর্মসূচির ধারও ধারে না। তোরা এতোক্ষণ বলছিলি। আমি শুনছি। এসব বলে কোনো লাভ নেই। যা কাজ আমাদেরই করতে হবে। একটা ধর্ষককে পেলে নিজের হাতে টুকরা টুকরা করবো। একে সবার সামনে ঝুলিয়ে পাথর নিক্ষেপ করতে হবে। আসলে এই ধর্ষক নামক পশুগুলোকে পেলে যে কি করবো, আমি ভাবতে পারি না। মেয়েটি খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ে।
অন্য তিন বান্ধবী বলে, তুই কি আইন নিজের হাতে তুলে নিবি?
সে তখন বললো, হ্যাঁ নেবো, আইন নিজের হাতে তুলে নেবো। একটা ধর্ষককে মেরে আমি বিচারের মুখোমুখি হতে চাই। কিন্তু এতো অনিরাপদহীনভাবে বাঁচতে চাই না।
এভাবে ওরা কথা বলতে বলতে এক সময় শান্ত হলো। চলেও গেলো।
আমি দূরে বসে তাকিয়ে রইলাম ওদের চলে যাওয়া পথের দিকে।
উম্মুল ওয়ারা সুইটি, সিনিয়র সাংবাদিক