ঢাকা, শুক্রবার ২২, নভেম্বর ২০২৪ ৪:০১:৩৪ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

রোজা লুক্সেমবার্গের নির্বাচিত রচনা: অনুবাদ: অদিতি ফাল্গুনী

(ভূমিকা: পিটার হুদিস এবং কেভিন বি. এন্ডারসন)  

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:১৩ পিএম, ৩১ আগস্ট ২০২২ বুধবার

রোজা লুক্সেমবার্গের নির্বাচিত রচনা: অনুবাদ: অদিতি ফাল্গুনী

রোজা লুক্সেমবার্গের নির্বাচিত রচনা: অনুবাদ: অদিতি ফাল্গুনী

পর্ব- ১৮: প্রাচীন গ্রিকগণ: ইনকা সাম্রাজ্যের এই অনবদ্য সংগঠন একারণেই গুরুত্বপূর্ণ যে এই সাম্রাজ্যের সংগঠন আমাদের ধ্রুপদী প্রাচীন যুগের সমধর্মী অন্য নানা সভ্যতার সামাজিক সংগঠনগুলোকে বোঝার চাবিকাঠি যোগায়। বিশেষত: গ্রিক ইতিহাসের সীমারেখায় যারা দাঁড়িয়ে, তাদের জন্য প্রাচীন গ্রিক সমাজের সংগঠন বুঝতে হলে ইনকা সাম্রাজ্যের সাংগঠনিক পঠন কাজে লাগবে। 

উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক, আমাদের হাতে যদি লিখিত ইতিহাস মারফত এমন একটি প্রতিবেদন দেয়া হতো যেখানে দেখা যাচ্ছে যে ডোরিয়ান শাসকদের দ্বারা শাসিত ক্রিট দ্বীপের বিজিত, পরাধীন জনতার তাদের উতপাদিত পুরো ফসলই শুধুমাত্র পরিবার সমেত নিজেদের খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার অংশটুকু বাদ দিয়ে শাসকদের হাতে তুলে দিতে হতো, তাহলেই শুধু আমরা ইনকা সাম্রাজ্যের সাথে ক্রিট দ্বীপের শাসন ব্যবস্থার মিল বুঝতে পেতাম!

মূলত: বিজিতদের দেয়া এই ফসল থেকেই মুক্ত শাসক ডোরিয়ানদের গোষ্ঠিগত খানা-পিনা বা ভোজ অনুষ্ঠানের খরচ বহন করা হতো। স্পার্টায় আবার ‘রাষ্ট্রীয় ক্রিতদাস‘ বা ‘হেলটে‘রা ছিল। রাষ্ট্র থেকেই এই ‘হেলট‘ বা দাসদের বড় খামারের মালিকদের কাছে সরবরাহ করা হতো শ্রমিক হিসেবে। 

আপাত:ভাবে এই বিষয়গুলো রহস্যময় মনে হতে পারে। এবং হেইডালবার্গের বুর্জোয়া পন্ডিত অধ্যাপক ম্যাক্স ওয়েবার এই উতসুক ও ঐতিহাসিক হস্তান্তরকরণগুলোকে ব্যখ্যা করার জন্য সমসাময়িক পরিস্থিতি এবং ধারণাগুলোর দৃষ্টিকোণের উপর ভিত্তি করে একটি কৌতূহলী অনুমান প্রস্তাব করেছেন।

এখানে (স্পার্টায়- রোজা ল্যুক্সেমবার্গ) শাসিক জনতার হাল অনেকটা রাষ্ট্রীয় দাসত্ব বা বন্ধনে থাকা মানুষের মতই। কৃষিতে কে কতটুকু অবদান রেখেছেন সেই প্রেক্ষিত থেকে যোদ্ধাদের ভরণপোষণের বিষয়টি আলোচনা করা হয়। এই আলোচনা অংশত: হতো কোন একক ব্যক্তি কর্তৃক সম্মিলিতভাবে বিষয়টি উল্লেখের মাধ্যমে আর অংশত: জমির কিছু অংশে ক্রিতদাসদের ফলানো ফসলের উপর ব্যক্তি কতটা নির্ভর এবং কতটুকু তার বৈধ পাওনা তা‘ নিরূপণের মাধ্যমে। কালের বিবর্তনের সাথে সাথে উত্তরাধিকারের বিষয়টিই মুখ্য হয়ে ওঠে বা গুরুত্ব পেতে থাকে। 

ভূমির নতুন ধরণের বন্টণ ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সমধর্মী নানা বন্টণকে ঐতিহাসিকভাবেই অনুশীলনযোগ্য বলে মনে করা হতো এবং অনুশীলন হয়েওছে। স্বাভাবিকভাবেই, এই নয়া বণ্টণ ব্যবস্থা ঠিক খামারজমির বণ্টণ বোঝাতো না (এখানে স্বাভাবিকভাবে শব্দটি ঠিক একজন বুর্জোয়া অধ্যাপক যেভাবে ব্যবহার করেন, সেই অর্থে এখানে ব্যবহৃত হচ্ছে না- রোজা ল্যুক্সেমবার্গ) বরং ভূমির খাজনা বণ্টণের একটি বিশেষ পদ্ধতি বোঝাচ্ছে। 

খুঁটিনাটি যাবতীয় নানা অনুষঙ্গের উপরেই সামরিক বিবেচনা বিশেষত: সামরিক জনসংখ্যার রাজনীতি নির্ভরশীল...এমন সামরিক রাজনীতির নাগরিক-সামন্ত চারিত্র্য স্বভাবগতভাবেই নিজেকে প্রকাশ করে, যেমন, একজন মুক্ত নাগরিকের জমিতে ভূমিদাসদের যে সামান্য ভূমি বসবাস করার জন্য দেয়া হতো, সেই ভূমিতে বসবাসকারী ভূমিদাসরা কিছু সামরিক সুবিধাদি পেতেন: এই ভূমিদাসেরা ক্লেরোস গঠন করতেন এবং ক্লেরোসের কাজ ছিল এই সামরিক পরিবারগুলোর ভরণপোষণ করা (বিদ্যায়তনিক বক্তব্য হতে নিয়মিত বক্তব্যে অনূদিত: এই খামারজমিগুলো গোটা সম্প্রদায়ের সম্পত্তি এবং মালিকের মৃত্যুর পর বিক্রি বা বণ্টণ করা যাবে না। 

অধ্যাপক ওয়েবার এই বিষয়টিকে একটি জ্ঞানী পদক্ষেপ হিসেবে ব্যখ্যা করেন যা ‘সম্পদের বিভাজনকে প্রদর্শন করে বা দেখায়‘ এবং ‘সমাজের যোদ্ধা শ্রেণির জন্য ভূমির সুরক্ষায় কার্যকরী।‘- রোজা ল্যুক্সেমবার্গ)। এভাবেই স্পার্টার সামাজিক সংগঠন যোদ্ধাদের জন্য মেস বাড়ির মত গণভোজনের টেবিল, ‘সিসিতিস‘ বা যুবকদের জন্য গণভোজনের ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্র কর্তৃক শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থায় পরিণতি লাভ করেছিল, যাতে এই শিশু থেকে কিশোর বা তরুণ সবাইকে যোদ্ধা হিসেবে গড়ে তোলা যায়।

(: ম্যাক্স ওয়েবার, ‘Agrargeschichte.I.Agraverhaltnisse im Altertum,’ In Hand-vorterbuch der Staatswissenchaften, 2nd ed., vol.1 , Jena, 1898, পৃষ্ঠা ৬৯- রোজা ল্যুক্সেমবার্গ)।

হেক্টর বা একিলিসের মত বীর যুগের গ্রিকরা যদিওবা হালের প্রুশিয়ান (জার্মান) রীতির অছিয়তনামার আওতাতীন সম্পত্তি এবং বার্ষিক বৃত্তিতেই খুশি ছিলেন, স্পার্টীয় সমাজব্যবস্থার গণ ভোজনাগারে ‘শ্রেণি উপযোগী‘ শ্যাম্পেন পানের ব্যবস্থা, জাতীয় শিক্ষা অর্জনের সুযোগপ্রাপ্ত ও বিকাশমান স্বাস্থ্যের নগ্ন, তরুণ বালক ও বালিকা সমেত গোটা স্পার্টীয় ব্যবস্থাই যেন বার্লিনের নিচে গ্রস-লিকটারফেল্ডের কাছে একটি কারাগারপ্রতিম প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। 

(চলবে)