ঢাকা, শুক্রবার ২২, নভেম্বর ২০২৪ ১:১৭:১০ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

গ্রামে বসেই ফ্রিল্যান্সিংয়ে মাসে আয় ৬০ হাজার টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:৩৩ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ সোমবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

‘অর্থ নয়, আগে নিজেকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। মূলত এ পেশায় ভালোভাবে কাজ শিখে নিজেকে বিশ্ববাজারে যোগ্য করে তুলতে হবে। বিদেশিদের কাজ করতে হলে ইংরেজিতে অধিক দক্ষতা থাকতে হবে। তাহলেই অনলাইনে কাজের অভাব হবে না।’ 
এভাবেই কথাগুলো বললেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউপির বেনুপাড়া গ্রামের ফ্রিলান্সার তৃষ্ণা দিও। তিনি ওই গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গারো সম্প্রদায়ের রবার্ট রেমা ও জলি দিওর কন্যা। 

তৃষ্ণা দিও জানান, দুইভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে চাকরির আশায় বসে না থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে গ্রামের বাড়ির ঘরে বসেই প্রতিমাসে আয় করছেন কমপক্ষে ৬০ হাজার টাকা। 

তিনি ২০১৯ সালে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসা প্রশাসন বিষয়ে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) সম্পন্ন করে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে মানবসম্পদ বিভাগে চাকরি নেন। তবে কাজের ধরণের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেননি। 

তাছাড়া রাজধানীতে নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে বসে চাকরি করা তার ভালো লাগেনি। তাই কিছুদিন পর চাকরি ছেড়ে চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে। নতুন চাকরির জন্য গ্রামে থেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত আবেদন পাঠাতে থাকেন। এতে কোন সাড়া পাননি তিনি। এ সময় তার এক বন্ধুর কাছে জানতে পারেন ফ্রিল্যান্সিং করেও আয় করা যায়। 

তাই দেরি না করে ভর্তি হন ময়মনসিংহের নকরেক আইটি ইনস্টিটিউটে গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্সে। প্রতি সপ্তাহে দুদিন ক্লাস করতে হতো। তিনি নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি বাজার থেকে হালুয়াঘাট উপজেলা হয়ে ময়মনসিংহে যেতেন ক্লাস করতে। আবার ক্লাস শেষে বাবার সঙ্গে  ফিরতেন নিজ বেনুপাড়া গ্রামে। এভাবে তিনি কোর্সটি সম্পন্ন করেন।

তৃষ্ণা দিও আরো জানান, প্রশিক্ষণ নেয়ার প্রায় ছয় মাস পর ৮৬ ডলারের একটি কাজ পেয়ে যাই। কাজটি অত্যন্ত যত্ন ও মনযোগ সহকারে শেষ করি। কাজের মান ভালো হওয়ায় ওই গ্রাহকের মাধ্যমে আরও বেশ কয়েকটি কাজ পাই। এখন আমি বিভিন্ন ধরনের পোস্টারের নকশা, বিজনেস কার্ড, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা, পরিচয়পত্র, রেস্তোরাঁর খাবারের তালিকা, প্রচারপত্র ইত্যাদির নকশা করছি। 

শুরুতে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ পেতে বা করতে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। দেশের এক গ্রাহক আমাকে দিয়ে একটি কাজের নকশা ১৭ বার পরিবর্তন করেছিলেন। পরে কাজটি তার পছন্দ হয়৷ তবে এতে আমার অভিজ্ঞতা বেড়েছে। আর এভাবেই ধীরে ধীরে ভালো মানের দেশি বিদেশি বড় বড় কাজের অর্ডার পেতে থাকি। ফলে আয়ের পরিমাণও বাড়ে। 

তিনি বলেন, আমেরিকার একটি প্রতিষ্ঠানে সরাসরি কাজের প্রস্তাব পেয়েছিলাম। স্পনসরও তৈরি ছিল। কিন্তু আমার বাবা বললেন, গ্রামে বসেই যদি ভালো আয় করতে পারো, তাহলে বিদেশে গিয়ে কী হবে? আমিও ভেবে দেখলাম কেন যাবো আমার গ্রাম ছেড়ে বিদেশে। প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে গ্রামেই থেকে গেলাম। বর্তমানে আমি প্রতি মাসে কমপক্ষে ৬০ হাজার টাকা আয় করি। 

গত আগস্ট মাসে আমার আয় হয়েছিল ৬৫ হাজার টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে আরো বেশি হবে বলে জানান। তবে তিনি বলেন, লোডশেডিং না থাকলে তার আয় আরো বাড়তো। 

নিজের পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, ভবিষ্যতে গ্রামের ছেলে মেয়েদের ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে চাই। এছাড়া বর্তমানে তিনি ভিডিও এডিটিং এর অরেকটি কোর্সে ভর্তি হয়েছেন বলে জানান। 
 
তৃষ্ণার বাবা রবার্ট রেমা বলেন, সন্তানের সফলতায় সব বাবার মতো আমিও গর্বিত। তরুণ তরুণীদের প্রতি আমার আহ্বান, চাকরি না পেলে হতাশ হওয়া যাবে না। নিজেকে যোগ্য করে তুললে চাকরিই খুঁজে বের করবে প্রার্থীকে। 

নালিতাবাড়ীর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীনেত্রী ক্লোডিয়া নকরেক কেয়া বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মেয়েরা এখন কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই। উচ্চতর পড়ালেখা করে তৃষ্ণা দিও নিজ গ্রামের ঘরে বসেই মোটা অংকের টাকা উপার্জন করছেন। তার এ সফলতায় আমরা আনন্দিত হয়েছি। সে এখন বেকার তরুণ তরুণীদের জন্য আইকন স্বরূপ।