ঢাকা, সোমবার ২৫, নভেম্বর ২০২৪ ৬:৪৭:৪১ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

হাসপাতালের কেবিনে কবি হেলাল হাফিজের জন্মদিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৪:২৯ পিএম, ৭ অক্টোবর ২০২২ শুক্রবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’- এই দুটো চরণই তাকে চিনিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট। এমন আরও অনেক স্লোগানধর্মী চরণ রয়েছে তার অসংখ্য কবিতায়। আর এসব স্লোগানের জন্ম দিয়ে তিনিও ঢুকে পড়েছেন কবিতা পাঠকদের মনে। অচেনা অজানা অনেকের মনেই নোঙর ফেলেছেন। তিনি হেলাল হাফিজ। আজ এই কবির ৭৪তম জন্মদিন। ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বড়তলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হেলাল হাফিজ।

‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কবিতার বইটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে জ্বলে ওঠে কবি হেলাল হাফিজ এর নাম। বইটি সর্বত্র তুমুল আলোড়ন তোলে। ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর অসংখ্য সংস্করণ হয়েছে। ওই গ্রন্থটির ১২টি সংস্করণ প্রকাশিত হলেও এরপর গ্রন্থ প্রকাশের ক্ষেত্রে তার নিস্পৃহতা দেখা যায়। ২৬ বছর পর ২০১২ সালে আসে তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’।

হেলাল হাফিজ বাংলাদেশের একজন আধুনিক কবি যিনি স্বল্পপ্রজ হলেও বিংশ শতাব্দীর শেষাংশে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

দ্রোহ ও ভালবাসার কবি হেলাল হাফিজ অসুস্থ হয়ে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সেখানেই কাটছে তার ৭৪তম জন্মবার্ষিকী।

শুক্রবার জন্মদিনের সকালে সাহিত্যের ছোটকাগজ ‘নান্দিক’ সম্পাদক কবি ইসমত শিল্পীসহ কাছের কয়েকজন মিলে কবির জন্মদিন উদযাপন করেন।

এসময় কবিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান কবি ইসমত শিল্পী। এছাড়া কবিকে কবিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান শেখ সেলিম, সমকাল পত্রিকার পক্ষে রিক্তা রিচি। পরে হাসপাতালের কেবিনে ডাক্তার নার্স সকলে মিলে কেক কেটে কবির জন্মদিন উদযাপন করেন। ইসমত শিল্পী তার সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ `ধ্যান এবং অন্যান্য' উপহার দেন কবি হেলাল হাফিজকে।

এ প্রসঙ্গে ইসমত শিল্পী  বলেন, কবি অসুস্থ থাকায় হাসপাতালের কেবিনেই স্বল্প আয়োজনে জন্মদিন উদযাপন হয়েছে। এসময় হাসপাতালের কেবিনে ডাক্তার-নার্সসহ সকলে মিলে কেক কাটা হয় বলেও জানান তিনি।

হেলাল হাফিজ শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি জানান, সকালে কবির শারীরিক অবস্থা ছিল আগের মত। কবি শারীরিক এবং মানসিকভাবেও দুর্বল হয়ে পড়েছেন। দুদিন আগে একটু ভালো ছিল।

এদিকে কবির জন্মদিন উপলক্ষে আনন্দ সন্ধ্যা ও কবির কবিতা নিয়ে রচিত ‘ফুল ও ফুলকি’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার বিকাল ৫টায় ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ৫ম তলায় অনুষ্ঠানটি হবে। শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি আবৃত্তি হবে কবি হেলাল হাফিজের কবিতা। বইটি লিখেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী।

১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণ করা কবি হেলাল হাফিজের বাবার নাম খোরশেদ আলী তালুকদার। মায়ের নাম কোকিলা বেগম।

১৯৬৫ সালে নেত্রকোনা দত্ত হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৭ সালে নেত্রকোনা কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পাস করেন। ওই বছরই কবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ১৯৭২ সালে তিনি তৎকালীন জাতীয় সংবাদপত্র দৈনিক ‘পূর্বদেশে’ সাংবাদিকতায় যোগদান করেন। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন দৈনিক পূর্বদেশের সাহিত্য-সম্পাদক। ১৯৭৬ সালের শেষ দিকে তিনি দৈনিক ‘দেশ’ পত্রিকার সাহিত্য-সম্পাদক পদে যোগদান করেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক ‘যুগান্তরে’ কর্মরত ছিলেন।

যৌবনের জয়গান গেয়ে ‘পরিপুষ্ট প্রেমিক আর প্রতিবাদী’ কবি হয়ে আছেন বেনোজলে ভেসে না-যাওয়া হেলাল হাফিজ। তার কালজয়ী কবিতা ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ আজও তারুণ্যনন্দিত। ১৯৬৯-এ গণ-অভ্যুত্থানের টালমাটাল দিনে রচনা করেছিলেন ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’। ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’ এই একটি মাত্র কবিতার গুণে তিনি হয়ে ওঠেন প্রকৃতপক্ষে স্বপ্ন ও জীবনের মেলবদ্ধ কবি। স্বপ্ন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, নাকি জীবিতের মধ্যে স্বপ্নরা বেঁচে থাকে? এই স্বপ্ন আর জীবনকে সুঁই-সুতা বানিয়ে কবিতার পরতে পরতে যে অমোঘ শিল্পকর্ম রচনা করেছেন হেলাল হাফিজ, তা কি কেবল একজন কবির নিছক খেয়াল, নাকি অন্য কিছু? যাকে নিয়ে, যার কবিতা নিয়ে এত কৌতূহল, তিনি কবিতার ঘরে খিল লাগিয়ে ভক্তকুলের কাছ থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখেন সুদীর্ঘকাল। হয়তো খ্যাতি ও অখ্যাতির টানাপোড়েনে, হয়তোবা নিজেকে নিজে উতরাতে পারা না-পারার এক অদ্ভুত আতঙ্কে। হতে পারে স্ব-আরোপিত হতাশা কিংবা গোপন কোনো অভিমানে এই নিভৃত জীবন বেছে নেন স্বপ্নচারী মানুষটি।

প্রথম বইয়ের আকাশছোঁয়া পাঠকপ্রিয়তা ও ভালোবাসা থেকে জন্ম নেওয়া ভয় আড়ালবাসে নিয়ে যায় এ বোহেমিয়ান কবিকে। আর অভিমান তো রয়েছেই। অব্যক্ত সে অভিমান ছাপিয়ে তার বুকের মাঝে জমে আছে দীর্ঘকাল না-বলা কথা। স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ, দুঃখ-কষ্ট, অপ্রাপ্তির বেদনাকে নিজের ভেতরে আত্মস্থ করে সেসব আবার সবাইকে বলার জন্য পুনরায় লেখায় মনোনিবেশ করেছেন কালোত্তীর্ণ কবিতার এ জনক।