হালখাতার ঐতিহ্য
ফিচার ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০৮:২৯ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ০৫:৩৯ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০১৮ সোমবার
অতীতে জমিদারকে খাজনা প্রদানের অনুষ্ঠান হিসেবে ‘পূণ্যাহ’ প্রচলিত ছিলো। বছরের প্রথম দিন প্রজারা সাধ্যমতো ভালো পোশাকআশাক পরে জমিদার বাড়িতে গিয়ে খাজনা পরিশোধ করতেন। তাদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো। জমিদারি প্রথা উঠে যাওয়ায় ‘পূণ্যাহ’ বিলুপ্ত হয়েছে। তবে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় নববর্ষে হালখাতার আয়োজন করে আজও।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হিসাবনিকাশ, পাওনা টাকার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে সাধারণত বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনই হালখাতা অনুষ্ঠিত হয়। এক অর্থে নতুন বছরের শুরুতে পূর্বের সব দেনা পাওনা মিটিয়ে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়াকেই হালখাতা বলা হয়।
বাংলা সনের প্রথম দিন দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার এ প্রক্রিয়া পালন করা হয়। ব্যবসায়িরা এদিন তাদের দেনা পাওনার হিসাব সমন্বয় করে হিসাবের নতুন খাতা খোলেন। এজন্য ক্রেতাদের আগের বছরের সকল পাওনা পরিশোধ করার কথা বিনীতভাবে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।
হালখাতায় অংশ নেওয়াদের মিষ্টিমুখ করানো হয়। আসল হিসাবটি দেনা পাওনার হলেও এর মাধ্যমে ব্যবসায়ি ও ক্রেতাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়। নতুন লাল খাতায় আবার শুরু নতুন বছরের হিসাবের সূচনা। দিনটি ব্যবসায়িদের কাছে অন্যতম আনন্দের দিন। ব্যবসায়ি সম্প্রদায় হালখাতার আয়োজন করে আগের রীতি অনুসরণ করে।
সম্রাট আকবরের রাজত্বকাল থেকেই হালখাতা পহেলা বৈশাখের মূল ভিত্তি, অলংকার হিসেবে বিবেচিত করা হত। আগে জমিদারদের খাজনা প্রদানের অনুষ্ঠান হিসেবে ‘পূণ্যাহ’ প্রচলিত ছিল। জমিদার প্রথা বিলুপ হওয়ার সঙ্গে ‘পূণ্যাহ’ বিলুপ্ত হলেও হালখাতার প্রচলন হয়।
এ উপলক্ষে নববর্ষের দিন তাদের মিষ্টিমুখ করান ব্যবসায়িরা। আগে একটি মাত্র মোটা খাতায় ব্যবসায়িরা তাদের যাবতীয় হিসাব লিখে রাখতেন। এই খাতাটি বৈশাখের প্রথম দিন নতুন করে হালনাগাদ করা হতো। হিসাবের খাতা হালনাগাদ করার এ রীতি থেকেই উদ্ভব হয় হালখাতার।
রাজধানীর পুরান ঢাকার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ছোটবড় প্রায় সব দোকানেই হালখাতার আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি তারা রংবেরংয়ের কার্ডেরও ব্যবস্থা করেছেন। দোকানের অবয়বে আনা হয়েছে নতুনত্ব। পুরোনো সব ময়লা আবর্জনা চিরতরে পরিষ্কার করে নতুনভাবে দোকান সাজানোর মধ্যেও ব্যবসায়িরা খুজে পান অন্য এক আনন্দ।
এ আনন্দের প্রভাব অনেক বেশি। ভাগাভাগি করে নেন ক্রেতার সঙ্গে। মিষ্টি, দই দিযে বরন করে নেন। এদেশের অধিকাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানই বৈশাখের দিন হালখাতার আয়োজন করে থাকেন। হোক ব্যবসায়িক হেতু, হালখাতার দাওয়াত খেতে কিন্তু অনেকেরই দাওয়াতের প্রয়োজন পড়ে না। কারণ এটি একটি সার্বজনীন ঐতিহ্য।
একসময় বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিলো হালখাতা। এ উপলক্ষে দোকানে দোকানে মিষ্টি বিতরন করা হতো। পাশাপাশি থাকতো সুগন্ধি পানের আয়োজন। অনেকে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে মিষ্টান্ন পাঠাতেন। হালখাতার হাল আগের মতো না থাকলেও চিরায়ত এ অনুষ্ঠানটি কিন্তু হারিয়ে যায়নি এখনও। যদিও এখন কেবল স্বর্ণালঙ্কারের দোকানেই এ প্রথা পালিত হতে দেখা যায় বেশি। বিশেষ করে ঢাকার আদি ব্যবসায়ী পরিবারে মহাসমারোহে পালিত হয় এ রীতি।
পুরান ঢাকার বাজারগুলোতে লাল মলাটের খাতা খুলে বসেন ছোট ছোট দোকানিরা। নতুন বছরের শুরুতেই ব্যবসায়িরা টাকা পরিশোধের তাগিদ না দিয়ে হালখাতার দাওয়াত দেন। এ উপলক্ষে অনেকে বাহারি কার্ডের ব্যবস্থা করেন। কেউবা মুখে মুখেই সারেন দাওয়াত পর্ব। পুরান ঢাকার হিন্দু পরিবারগুলো পূজার শুভক্ষণ অনুযায়ী লাল মলাটের নতুন খাতা খোলে। বর্তমানে হালখাতার খাবারের আয়োজনে মিষ্টির পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে অন্যান্য খাবার। ক্ষীর, হালিম, কোমল পানীয় থেকে শুরু করে অনেকে বিরিয়ানি কিংবা তেহারির ব্যবস্থাও করে থাকে হালখাতায়।