স্তন ও জরায়ু মুখের ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয়
অনলাইন ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০১:৪৫ পিএম, ১৫ অক্টোবর ২০২২ শনিবার
ফাইল ছবি
বিশ্বব্যাপী মরণব্যাধিগুলোর মধ্যে অন্যতম ক্যানসার। বাংলাদেশেও এটি মৃত্যুহারের জন্য দায়ী রোগগুলোর তালিকায় রয়েছে। তাই ক্যানসার যাতে প্রাথমিক পর্যায়েই প্রতিরোধ করা যায়, সে জন্য এর উপসর্গ সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা রাখতে হবে। তবে আশার কথা হলো প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগ শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করলে জটিলতা এড়ানো যায়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, স্তন এবং জরায়ু মুখের ক্যানসারে আক্রান্ত নারীদের ম্যামোগ্রাফি এবং রেডিওথেরাপির মতো কিছু ডায়গনিস্টিক এবং চিকিত্সা সেবা দেয়া সম্ভব। বিশেষ করে প্রাথমিক অবস্থার ক্যানসার মোকাবিলা করার জন্য এসব সেবা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু এই চিকিৎসাপদ্ধতি অনেক ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে প্রতি বছর লাখো নারীর মৃত্যু হয়।
স্তন ক্যানসার
নারীদের অন্যতম ক্যানসার হলো স্তন ক্যানসার। যে কোনো বয়সের নারীই স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে মাঝ বয়সী নারীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকিও বাড়ে। সাধারণত পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। পারিবারিক ইতিহাস না থাকলেও স্তন ক্যানসার হতে পারে। এ ছাড়া বিআরসি এ-১ এবং বিআরসি এ-২ জিন দু’টির বিবর্তন বা মিউটেশনের কারণেও স্তন ক্যানসার হতে পারে।
স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে সর্বপ্রথম যে জিনিসটির প্রয়োজন, তা হলো নারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। নিয়মিত ব্রেস্ট স্ক্রিনিং করতে হবে। ২০ বছর বয়স থেকে প্রত্যেক নারীর উচিত স্তনের সুস্থতা সম্পর্কে সচেতন হওয়া। এজন্য প্রতি মাসে মাসিক শেষ হওয়ার ৫ম থেকে ৭ম দিনের যে কোনো দিন তাকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বা গোসলের সময় স্তন ও বগলের নিচের অংশ পরীক্ষা করতে হবে এবং যে কোনো সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ৪০ বছর বয়স থেকে প্রত্যেক নারীর বছরে একবার ম্যামোগ্রাম নামের বিশেষ পরীক্ষাটি করাতে হবে। সম্ভব না হলে স্তনের আল্ট্রাসনোগ্রাম করা যেতে পারে। এছাড়া, বছরে একবার চিকিৎসক দিয়ে স্তন পরীক্ষা করাতে হবে। নিয়ন্ত্রিত ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, নিয়মিত স্তন পরীক্ষা এবং নির্দেশনা অনুযায়ী ম্যামোগ্রাম করলে স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ এবং প্রাথমিক অবস্থার রোগ নির্ণয় করা সম্ভব।
জরায়ু মুখে ক্যানসার
যৌন সংস্পর্শ জরায়ু মুখের ক্যানসার ছড়ানোর প্রধান কারণ। যৌন সক্রিয় প্রতিটি নারীই তাই এই ঝুঁকির আওতাভুক্ত। প্যাপ টেস্ট নামের একটি পরীক্ষার মাধ্যমে জরায়ু মুখের কোষের পরিবর্তন নির্ণয় করা হয়। জরায়ু থেকে কোষ সংগ্রহ করে, এই পরীক্ষা করা হয়। জরায়ু কোষে যে কোনো ধরনের পরিবর্তন ধরা পড়লেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্রুত সুনিদির্ষ্ট চিকিৎসা শুরু করতে পারেন, যাতে ভবিষ্যতে রোগীর ক্যানসারে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা না থাকে।
তাই যৌন সক্রিয় সকল নারীর দৈহিক মিলন শুরুর তিন বছর পর থেকে বছরে একবার প্যাপ টেস্ট করা প্রয়োজন। যদি পরপর তিনটি পরীক্ষার ফলাফলে কোনো সমস্যা চিহ্নিত না হয়, সেক্ষেত্রে প্রতি তিন বছরে একবার প্যাপ টেস্ট করা যেতে পারে। মেনোপজ অথবা জরায়ুর আংশিক অপসারণের পরেও প্যাপ টেস্ট অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। তবে সত্তরোর্ধ নারীদের জন্য যদি বিগত দশ বছরে পর পর তিনটি পরীক্ষার ফলাফলে কোনো সমস্যা না থাকে, তাহলে তাদের আর প্যাপ টেস্ট করার প্রয়োজন নেই। গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্যাপ টেস্ট করা যেতে পারে।
জরায়ু মুখের ক্যানসার কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। হিউম্যান প্যাপিলোমা নামক ভাইরাস এই রোগের কারণ। সাধারণত অধিকাংশ নারীই জীবদ্দশায় একাধিকবার এইচপিভি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়। একজন নারীর সহজাত প্রতিরোধ ক্ষমতা বা কনডমের ব্যবহার কখনোই এই ইনফেকশনের বিরুদ্ধে স্থায়ী প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করতে পারে না। সম্প্রতি জরায়ু মুখ ক্যানসার প্রতিরোধে অতি কার্যকর টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। পর পর তিন ডোজ টিকা, নিয়মিত প্যাপ টেস্টের মাধ্যমে স্ক্রিনিং, চিকিৎসকের পরামর্শ এবং সাবধানতা জরায়ু মুখের ক্যানসার প্রায় সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করতে পারে।
বিশ্বব্যাপী সার্বজনীন স্বাস্থ্য কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা এবং এক্ষেত্রে স্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের জন্য নারীদের স্তন ক্যানসার এবং জরায়ু মুখের ক্যানসার চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষত নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশে নারীদের জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যানসার চিকিৎসায় সার্বিক সহায়তা করা প্রয়োজন।
সূত্র: ডয়চে ভেলে