ঢাকা, শুক্রবার ২২, নভেম্বর ২০২৪ ২:০০:২৯ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

সফল উদ্যোক্তা মানিকছড়ির আমেনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:০৬ পিএম, ১৮ অক্টোবর ২০২২ মঙ্গলবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার পশ্চাৎপদ জনপদ ছদুরখীল এলাকার দরিদ্র কৃষক মো. মফিজ মিয়া ও গৃহিণী মোর্শেদা বেগমের মেয়ে আমেনা আক্তার। পরিবারের আর্থিক অনটনের কারণে নিজ স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে কলেজ পড়ুয়া আমেনাকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে।

কল্পনা জল্পনায় স্বপ্ন এঁকে ছিলেন শিক্ষিকা হবার। মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েছেন কেবলই। ইচ্ছের বিরুদ্ধেই বিয়ে হয়ে যায় আমেনার। 

সময়টা ছিল ২০২০ সাল। স্বামীর সংসারে এসে ধীরে ধীরে বিসর্জন দিতে হয় তার কিশোরী বয়সের স্বপ্নগুলো। স্বামী ছিলেন ভবঘুরে। বিয়ের পরই কর্মহীন স্বামীকে নিয়ে তার জীবনে শুরু হয় নতুন অধ্যায়। কিন্তু এ সংসার বেশি দিন করতে পারেননি তিনি। স্বামীর পরিবারে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে বিয়ের মাত্র এক বছরের মাথায় বাবার বাড়িতে চলে আসতে হয় অভাবী পরিবারের কলেজ পড়ুয়া আমেনাকে।

শুরু হয়ে যায় অভাবী পরিবারের টানাপোড়ন। পাঁচ বোনের মধ্যে পঞ্চম আমেনা। বাকি বোনদের বিয়ে হয়ে যায়। বাবা হয়ে পড়েন অসুস্থ, আমেনার জীবনে নেমে আসে অন্ধকারের ছায়া। একাকিত্ব পেয়ে বসে আমেনাকে। কিছু দিন যেতে না যেতেই আবারও শুরু হয়ে যায় বিয়ের গুঞ্জন। আমেনা সাফ জানিয়ে দেন, এখন আর বিয়ে করবেন না। 

আমেনা আক্তার বলেন, নিজের ওপর একটা জেদ তৈরি হলো। ভাবতে লাগলাম, সবাইকে কাজের মাধ্যমে জবাব দিবো, কিছু করে দেখাবো। নিজের শক্তি সঞ্চয় হতে শুরু করলো, প্লান করি অনলাইন বিজনেস করার। কিন্তু কি নিয়ে শুরু করবো ভেবে পাচ্ছিনা! হঠাৎ দেখা হলো এক শুভাকাঙ্ক্ষীর সাথে, তিনি আমাকে অনুপ্রেরণা ও কিছু আইডিয়া দিলেন। তার পরামর্শক্রমে ২০০ টাকা পুঁজি নিয়ে নিজের জন্য সামান্য আচার তৈরি করি এবং সামাজিক মাধ্যমে তা শেয়ার করি। এরপরই শুরু হয় বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্ডার আসা। 

আমেনা বলেন, এভাবেই অল্প পুঁজিতেই নিজ চেষ্টা আর পরিশ্রম দিয়েই আমার এ উদ্যোক্তা পথের যাত্রা শুরু। এখন কাজ করছি- ঘরোয়াভাবে বিভিন্ন উপায়ে বানানো আচার, নিজের তৈরি হেয়ার অয়েল, খাগড়াছড়ির বিখ্যাত হলুদ ও চিংড়ি শুটকির বালাচাও। এছাড়াও ৪টি গরুর ক্ষুদ্র পরিসরে একটি খামার রয়েছে আমার।

আয়ের প্রসঙ্গে আমেনা জানান, গরুর খামার করার আগে আয়ের পরিমাণটা বেশিই ছিল। তবে খামারটি করায় অর্থের কিছু অংশ খরচ হয়ে যাওয়াতে আয় কমে এখন প্রতিমাসে ৩০ হাজার টাকার মত আয় করছি। তবে আয়ের পরিমাণ আশা করছি খুব দ্রুতই বৃদ্ধি পাবে। 

অর্জন সম্পর্কে জানতে চাইলে জীবনযুদ্ধে জয়ী এই নারী বলেন, জীবনে বড় ধাক্কা খাওয়ার পর হতাশাময় দিন পার করছিলাম। বাঁচার জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করেছিলাম। কিন্তু কিভাবে বাঁচবো, কি করবো- তা বুঝতে পারছিলাম না। সে অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি উদ্যোক্তা প্লাটফর্মে প্রিয় মেন্টের ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের ইউটিউব লাইভে যুক্ত হওয়ার সুবাদে পরিচিত হই এবং নিজের উপজেলাতে ২০২১ সালে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়ীতা এওয়ার্ড লাভ করি। 

এছাড়াও ২০২২ সালের দিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আমার উদ্যোগ ও কাজে খুশি হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ৫০ হাজার টাকা উপহার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ঘর উপহার দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। 

আমেনা আক্তার বলেন, ইতোমধ্যে বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে আমার উদ্যোক্তা জীবনের গল্পটি ইউনিলিভারের রিন নামক নারী ওয়েবসাইটে ছবিসহ সকল তথ্য জমা দেয়া হয়েছে। আল্লাহর অশেষ কৃপায় আমি সবার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। জীবনের প্রতিটা মুহুর্তে হেরেছি, শিখেছি। তারপরও থেমে যাইনি, লেগে থেকেছি।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে মানিকছড়ির এই জয়ীতা বলেন, বাঙ্গালীয়ানা নামে একটি ব্র্যান্ড তৈরি করতে চাই। বাংলাদেশসহ দেশের বাহিরেও আমার কোম্পানির শাখা-প্রশাখা থাকবে। যেখানে কাজ করবে অংখ্য নারী ও পুরুষ। তাই এখন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে কাজ করে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। যার ফলে, গরুর খামারের নাম দেয়া হয়েছে বাঙ্গালীয়ানা এগ্রো ফার্ম।