অভিবাসী নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে: সিডব্লিউসিএস
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৭:৩৭ পিএম, ২৩ অক্টোবর ২০২২ রবিবার
ফাইল ছবি
নারী অভিবাসীদের নিরাপত্তা ও সহায়তার জন্য প্রয়োজনে আলাদা প্রকল্প হাতে নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে সেন্টার ফর উইমেন অ্যান্ড চিল্ড্রেন স্টাডিজ (সিডব্লিউপিস)।
রবিবার (২৩ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে সিডব্লিউপিএসের আয়োজনে এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় আয়োজিত অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান সংস্থার নির্বাহী সদস্য ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ফরিদা ইয়াসমিন।
তিনি বলেন, আমরা যা তথ্য পাচ্ছি, সে অনুযায়ী সৌদি আরবে আমাদের নারীরা সবেচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। মিডিয়াকে আমি অনুরোধ করব, এই অবস্থা থেকে আমরা উন্নতি করতে পারছি কিনা তা মনিটরিং করার জন্য। একই সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোন প্রক্রিয়া আরও সহজ করা দরকার। তাহলে সরকারি উদ্যোগগুলো চমৎকারভাবে কাজ করবে। প্রোটেকশন, প্রিভেনশন, প্রভিশন এই তিনটি পি সরকার পালন করছে কিনা সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে নারী অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার বিষয়ক নিবন্ধ যৌথভাবে প্রস্তুত করেন সিডব্লিউসিএস ও অভিবাসী কর্মী কল্যাণ ফাউন্ডেশন (ওকাফ) এর চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুব এলাহি।
মাহবুব এলাহি বলেন, বিএমইটি স্ট্যাটিস্টিক ডাটা অনুযায়ী, ১৯৯১ সাল থেকে ২০২২ এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০ লাখ ৮৬ হাজার ২৫০ জন নারী অভিবাসী হয়েছেন। জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর ২০২২ পর্যন্ত অভিবাসী হয়েছেন ৮৫ হাজার ৭৯৪ জন নারী। আমাদের নারী শ্রমিকরা যদি স্কিলড হয়ে যায়, তাহলে আরও বেশি উপার্জন করতে পারে। শুধু যাওয়া নয়, পাশাপাশি তাদের ফিরে আসার পথটাও মসৃণ হওয়া দরকার।
সিডব্লিউসিএসের সভাপতি প্রফেসর ইশরাত শামীম বলেন, যে সকল নারী শ্রমিক নিজেদের এবং দেশের জন্য বিদেশে গিয়ে বিভিন্ন দালাল চক্রের হাতে পড়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে দেশে ফিরে আসেন সে সকল নারী শ্রমিক এবং অভিবাসী নারীদের সম্বন্ধে ভালোভাবে জেনে তাদের সম্পর্কে ইতিবাচক এবং একই সাথে তাদের সাফল্যের কথা মিডিয়াতে তুলে ধরতে হবে।
তিনি আরো বলেন, নির্যাতনের শিকার অভিবাসী নারীদের পাশাপাশি, সফল নারীদের গল্পও তুলে ধরবেন। এর মাধ্যমে অন্য নারীরাও বুঝতে পারবে আসলে যাওয়ার পথটা কি হবে। যদি আপনারা দালালদের ওপর নির্ভর হয়ে যান, তাহলে বিপদ হবে। দালালরা কখনো এই কথা বলবেন না। ওরা বলে আপা, সঠিক ইনফরমেশন আমরা জানি না। কাজেই এই ব্যাপারে সঠিক ওয়েটা আপনারা তুলে ধরবেন এটাই প্রত্যাশা।
মিডেলিস্ট দেশগুলোতে যেতে কিন্তু বেশি টাকা লাগে না। তবুও অভিবাসী নারীরা দালালের খপ্পরে পরে দেশে ফিরে এলে তাদের সম্পর্কে অনেক নেতিবাচক ধারণা সবার মধ্যে কাজ করে।
সেসব ক্ষেত্রে মিডিয়ার ভূমিকা হলো, তাদের সঠিক তথ্য তুলে ধরা এবং তাদের কথা শুনে সঠিক তথ্যগুলো জনসাধারণকে জানানো।
জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর ২০২২ পর্যন্ত ৮৫ হাজার ৭৯৪ জন নারী অভিবাসন করেছেন বলেও জানান তিনি। তবে এই অভিবাসন নারীদের যে সমস্যা তার মধ্যে অন্যতম হলো তাদের বিদেশে যাওয়া থেকে আসা পর্যন্ত এসব নারী শ্রমিকরা কোনভাবেই ভালো যাতায়াত ব্যবস্থা পাচ্ছে না। দেশে আসার পর তারা কোন লোন পাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
এছাড়া বিদেশ থাকাকালীন সময় এ অভিবাসী নারী শ্রমিকরা সঠিক বেতন মজুরি পায় না বলেও জানা যায়।
জানুয়ারি থেকে অক্টোবর ২০২২ পর্যন্ত মিডিয়ার স্কেনে উঠে এসেছে বিদেশ ফেরত নারী অভিবাসীদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি উদ্বেগ, নারী অভিবাসন বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমের প্রচার, অভিবাসী সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, বিদেশ ফেরত নারী অধিবাসীর অবস্থা, কোভিড ১৯ এর প্রভাব কোলে নেয়া উদ্যোগ, নারী অধিবাসের জন্য ন্যায় বিচারের আহ্বান, গন্তব্য দেশে নারী অধিবাসীদের হয়রানি ও নির্যাতন, ইতিবাচক মিডিয়া রিপোর্টিং উপস্থাপন করেছেন, এবং এ সম্পর্কে আরো নেতিবাচক রিপোর্ট উপস্থাপন করা উচিত বলে মনে করেন আইনজীবী ফরিদা ইয়াসমিন।
তিনি আরো বলেন, নারী শ্রমিকদের নিরাপদ অভিবাসনের সরকারের সকল সংস্থা আই এনজিও, এনজিও ও সিভিওদের কার্যক্রম ও সেবা- পরিষেবা তুলে ধরার জন্য তা নারী শ্রমিকদের নিরাপদ অভিবাসন সহজ ও সমর্থক করবে বলে তিনি আশা করেন।
বাংলাদেশ অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক শেখ রুমানা বলেন, নতুন নিয়ম হয়েছে অভিবাসীদের ট্রেনিং ২ মাস করাবে। বাচ্চা-কাচ্চা ফ্যামিলি রেখে একজন নারীর জন্য এত দীর্ঘ ট্রেনিং কষ্টকর। এক মাসের কোয়ালিটি ট্রেনিং করালেই যথেষ্ট। এজন্য ট্রেইনারদের আরও বেশি ট্রেনিং করাতে হবে।
এক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের অভিবাসন কে সার্থক ও সফল করতে ‘সিডব্লিউসিএস’ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন।
যার মধ্যে রয়েছে,
১. ইতিবাচক শব্দচয়ন।
২. অভিবাসীদের মর্যাদাকে সম্মান করা।
৩. ঘৃণা এবং অপমানজনক শব্দ এগিয়ে চলা।
৪. নির্ভরযোগ্য সূত্রের সাথে যোগাযোগ স্থাপন।
৫. ইতিবাচক ও নেতিবাচক সংবাদ প্রচারের ভারসাম্য বজায় রাখা।এবং ৬. সাক্ষ্যপ্রমাণ ভিত্তিক রিপোর্ট প্রচার করার জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আশা ব্যক্ত করেন।
‘সিডব্লিউসিএস’ এর আজকের সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইসরাত শামীম।