ঢাকা, সোমবার ২৫, নভেম্বর ২০২৪ ৬:৩৯:৩৫ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

সম্প্রীতির উৎসব পালন হোক বাংলার ঘরে ঘরে: সেলিনা হোসেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:২৯ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বাংলার প্রতিটি ঘরে সম্প্রীতির উৎসব পালন করা উচিৎ। সম্প্রীতির মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে জনগণকে উজ্জীবিত করতে হবে। সব জাতি, ধর্ম, লিঙ্গের মানুষকে শ্রদ্ধার সাথে দেখা প্রতিটি ব্যক্তির নৈতিক দায়িত্ব। 
আন্তর্জাতিক সহনশীলতা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত সম্প্রীতির উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন।  
ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ভেপেলপমেন্ট (আইইডি), একশনএইড বাংলাদেশ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ), দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন, ব্রিটিশ হাইকমিশন, অ্যাম্বাসি অব ডেনমার্ক ঢাকা, নরওয়েজিয়ান অ্যাম্বাসি ঢাকা এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশের উদ্যোগে যৌথভাবে গতকাল বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। 
অনুষ্ঠানে  সংসদ সদস্য এরোমা দত্ত বলেন, বাংলাদেশের জন্ম সম্প্রীতির ভেতর দিয়ে, যেখানে সব জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও ভাষার মানুষ একত্রে দেশকে স্বাধীন করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে সহনশীলতা কমে গেছে। কোথায় হারিয়ে গেল আমাদের বাউল, গম্ভীরা ও পুতুল নাচের ঐতিহ্য। আমরা কেবল পহেলা বৈশাখে একত্রিত হই, অন্য সময় শুধু বিচ্ছিন্নতা ও দূরত্বের মধ্যে থাকি। সত্যিকার অসাম্প্রদায়িক দেশ ও বহুজাতির দেশ গঠন করতে প্রতিদিন আমাদের সম্প্রীতির আলোচনা ও সংলাপ চলমান রাখতে হবে। 

স্বাগত বক্তব্যে ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি ভ্যান নুয়েন বলেন, বাংলাদেশের সমৃদ্ধময় সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং জাতিগত বৈচিত্র্যময়তার সুদীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। অনেক দশক ধরে এই দেশ বৈচিত্র্যের মধ্যে একসাথে বসবাসের মূল্যবোধকে ধারণ করেছে। 
উদ্বোধনী পর্বের প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান সম্প্রীতির উৎসব আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমাদের দেশ চিরকালই সকল জাতি ও ধর্মের মানুষের মিলন ক্ষেত্র ছিল। সময়ের পরিক্রমায় কিছু বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠী ও অপশক্তি নানাভাবে আমাদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সম্প্রীতির মর্মমূলে আঘাত হানে। এই অনুষ্ঠান অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদবার্তা।
বাংলাদেশে নরওয়ের দূতাবাসের মিশন প্রধান সিজলে ফিনস ওয়ানবো বলেন, নরওয়ে সবসময় বৈচিত্র্য ও সম্প্রীতিকে গুরুত্ব ও মর্যাদার সাথে বিবেচনা করে। বাংলাদেশও ভারসাম্য ও সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে মানবিকতা, সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে ইতিবাচক ধারা বজায় রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। আমাদের সবার ব্যক্তি ও সামষ্টিকভাবে সহনশীলতাকে এগিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।  
বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনের উন্নয়ন পরিচালক ম্যাট ক্যানেল বলেন, বাংলাদেশে সহনশীলতা ও সম্প্রীতির সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অসহিষ্ণুতা, সংঘাত ও মৌলবাদিতা বেড়ে চলেছে। সবার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিতকল্পে যুক্তরাজ্য সব সময় রাজনৈতিক সংলাপ চলমান রাখতে সহায়তা করছে।   
বাংলাদেশে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি এস্ট্রাপ পিটারসন বলেন, সহনশীলতা আমাদের সবার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বমানবতার স্বার্থেই সম্প্রীতি ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির প্রতি সম্মান ও মর্যাদা দান আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।  
দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ বলেন, এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি ও সংস্কৃতি চর্চার মিলন ক্ষেত্র ছিল। বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের মানুষের মধ্যে প্রাণবন্ত সংলাপের ধারা অব্যাহত ছিল। বর্তমান এই দুঃসময়ে সম্প্রীতির বাংলাদেশ তৈরিতে সবার সাথে প্রীতিপূর্ণ সংলাপের ধারা ফিরিয়ে আনা অতি প্রয়োজনীয়। 
একশনএইড বাংলাদেশের ইয়াং পিপল প্রকল্পের ম্যানেজার নাজমুল আহসান বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্ম একটি রূপান্তর প্রক্রিয়ার মধ্যে যাচ্ছে। তাদের সামনে ভার্চুয়াল জগৎ ও বাস্তব জগৎ। এই দুই জগতের সমন্বয় খুবই জরুরি। 
আইইডির নির্বাহী পরিচালক নুমান আহম্মদ খান বলেন, সামাজিক মাধ্যমকে ধারাবাহিকভাবে ঘৃণামূলক বক্তব্য ও গুজব ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, সংখ্যালঘু এবং বিপদাপন্ন/দুর্বল মানুষের প্রতি ঘৃণা ও সহিংসতার আহ্বান জানানো হচ্ছে। সংখ্যালঘু এবং বিপন্ন মানুষের প্রতি ক্রমবর্ধমান উসকানি, বৈষম্য, ঘৃণা, অসহিষ্ণুতা এবং সহিংসতা প্রতিরোধে আমাদের সবাইকে বৈচিত্র্যের প্রতি ব্যাপক মর্যাদা এবং শ্রদ্ধা প্রদর্শন উৎসাহিত করা প্রয়োজন।