নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য অভিনব আয়োজন
অনলাইন ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০৪:৩৭ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ১১:০৯ পিএম, ২৮ এপ্রিল ২০১৮ শনিবার
নিঃসঙ্গতা মানুষকে কুড়ে কুড়ে খায়। বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সে ঘর-সংসার থাকার পরও মানুষ যখন একা হয়ে যান তখন অনেকের কাছে এটি বড় কষ্টকর। শুধু বাংলাদেশ বা ভারতিয় উপমহাদেশেই নয়, পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে এ সমস্যা প্রকট আবার ধারণ করেছে।
জীবনের প্রয়োজনে বাবা-মাকে ছেড়ে সন্তান চলে যান দূর থেকে বহু দূরে। পুরোনো স্মৃতি আক্রে বৃদ্ধ মা-বাবা নিঃস অবস্থায় বাড়ির পাহারা দেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে জীবনসঙ্গি হারিয়ে শেষ বয়সে এ সব মানুষগুলো আরো বেশি একা হয়ে পরেন। বৃদ্ধ বয়সে নিঃসঙ্গতা মানুষকে চূড়ান্ত অবসাদের দিকে ঠেলে দেয়।
এ সমস্যা মোকাবেলার জন্য ব্রিটেনের একটি শহরে অভিনব এক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সঙ্গ দেয়াই এর মূল উদ্দেশ্য। ইংল্যান্ডের পশ্চিমে ফ্রোম নামের ছোট্ট এক শহরে এটি চালু হয়েছে।
সু নামে এক বৃদ্ধা তার বাড়িতে একা থাকেন। তিনি ঘরের বাইরে যেতে পারেন না। ঘরে থাকতে থাকতে তিনি যখন বিরক্ত তখনই তার জীবনে এলো এক সুসংবাদ। তাকে দেখতে বাড়িতে একজন অতিথি আসছেন। আর এটি-ই এই অভিনব উদ্যোগের একটি অংশ।
এ শহরের একজন বৃদ্ধ বলেন, আমাকে নানা ধরনের মানুষ দেখতে আসে। এটিই আমার দরকার। এটি আমাকে আত্মবিশ্বাস দেয়। আমি তখন ভাবতে পারি যে, পৃথিবীতে ভালো কিছু আছে।
তিনি বলেন, বৃদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনও বদলে যায়। ছেলেমেয়েরাও আমাদের ছেড়ে চলে যায়।
তিনি বলেন, নিঃসঙ্গ জীবন কেমন সেটি কেউ ব্যাখ্যা করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। একা থাকতে থাকতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। নিঃসঙ্গ মানুষকে সংস্পর্শ দিতে স্থানীয় একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক চিকিৎসক এ কাজ শুরু করেন। সেখানে মানুষের নিঃসঙ্গতা যেভাবে বেড়ে যাচ্ছিল তাতে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।
হেলেন কিংস্টন নামে ওই চিকিৎসক বলেন, আপনি যদি বিচ্ছিন্ন হয়ে যান এবং কারও সঙ্গে আপনার যোগাযোগ না থাকে, তখন আপনি নিজেকেও ঠিক রাখতে পারবেন না।
২০১৩ সালে চিকিৎসক হেলেন চিন্তা করেন কীভাবে বৃদ্ধ মানুষকে নিঃসঙ্গতা দূর করা যায়। নিঃসঙ্গ মানুষের চাহিদা নিরূপণ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হতো। হেলথ সেন্টারে নিঃসঙ্গ বৃদ্ধদের জন্য একটি কক্ষ রাখা হয়েছে। সেখানে সবাইকে একত্রিত করে প্রতিদিন নানা ধরনের কর্মকান্ড করানো হয়। এতে তাদের সময় কাটে এবং পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ে।
শুধু তাই নয়, চিকিৎসক হেলেন বলেন, তারা একটি কমিউনিটি গড়ে তুলেছেন, যেখানে প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ আছে, যারা বৃদ্ধদের সময় দেন। প্রত্যেকে প্রতি বছর ২০জন বৃদ্ধের সঙ্গে কথা বলেন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ১০ হাজার বৃদ্ধকে পুরো বছরে সময় দেওয়া যায়।
বৃদ্ধা সু বলছেন, একদিন আমাকে ফোন করে বলা হল একজন আমাকে দেখতে আসবেন। আমার যে কী আনন্দ হয়েছিল বলে বোঝাতে পারব না। এর পর থেকে কেউ না কেউ নিয়মিত বৃদ্ধা সু’র বাসায় আসতে থাকেন এবং তার খোঁজখবর নেন। তখন থেকে সু শারীরিকভাবেও সুস্থ হয়ে ওঠেন।
সূত্র : বিবিসি