টাঙ্গাইলে আফ্রিকান মহৌষধী ‘ননী ফল’ চাষ
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৮:১৮ পিএম, ১ ডিসেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার
ফাইল ছবি
ননী ফলের রস খেলে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা নিরময় হওয়ায় অনেকে এটাকে পেইন কিলার বলে অভিহিত করে থাকেন। এটা মূলত আফ্রিকা অঞ্চলের ফল। তবে ফলটি ক্রান্তীয় অঞ্চল অর্থাৎ ভারত উপমহাদেশেও জন্মায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘মরিন্ডাসিট্রিফলিয়া’। ননী গাছে বারো মাস ফল ধরে। যশোর, মেহেরপুর, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় এ ফলের জনপ্রিয়তা রয়েছে। দেশের আবহাওয়া ননী ফল গাছ চাষের উপযোগী। তাই অনেকেই ননী ফলের বাণিজ্যিক চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন।
বর্তমানে এ ফল বাজারে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এর একটি চারা ৪০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। ননী গাছের পাতা ও ফল মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির এক মহৌষধ। যদিও এখন পর্যন্ত এ ফলটি খুব বেশি পরিচিতি পায়নি। বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য ও ভেষজ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ননী ফলের রস বা জুস বোতল ভর্তি করে বাজারজাত করছে। ননী ফলে ভিটামিন এ, সি, ই, বি, বি-২, বি-৬, বি-১২, ক্যালসিয়াম, আয়রণ, ফলিক এসিড, প্যাণ্টোথেনিক এসিড, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক, কপার, অন্যান্য মিনারেলসহ প্রায় ১৫০টিরও বেশি ওষুধি গুণে পরিপূর্ণ রয়েছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। ননী ফলের রসে উচ্চ রক্তচাপ কমে, শারীরিক শক্তি বাড়ে, প্রদাহ ও হিস্টামিন প্রতিরোধ করে। ননী ফল খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কবিরাজী ও হাকিমী চিকিৎসাসূত্রে ননী ফল ও গাছের সঙ্গে পরিচিত হন বাবুল আহমেদ। বিস্তারিত জানতে তিনি ভারতে অনুষ্ঠিত ভেষজ উদ্ভিদ বিষয়ক কর্মশালায় অংশ নেন। ফলটির গুণাগুণ জানতে পেরে তিনি ননীগাছ চাষে আগ্রহী হন। সেই আগ্রহ থেকে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার পৌলী এলাকায় দুই বছর আগে ৩৫ শতাংশ জমি ভাড়া নিয়ে কিছু চারা কিনে ননী ফল গাছের বাগান করেন। এক বছর যাবত ফল আসতে শুরু করায় তিনি সফলতা পেতে শুরু করেছেন। তার বাগান দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লোক আসছে। যাওয়ার সময় গাছের চারা ও ফল কিনে নিয়ে যান।
উদ্যোক্তা বাবুল আহম্মেদ জানান, তার বাড়ি বরিশালের মুলাদী উপজেলায় হলেও একজন হাকিমের মাধ্যমে তিনি ২০ বছর যাবত এলেঙ্গায় এসে ব্যবসা শুরু করেন। দুই বছর আগে পৌলী এলাকায় ৩৫ শতাংশ জায়গা ২০ বছরের জন্য ভাড়া নিয়ে ননী ফলের বাগান শুরু করেন। বাগানের এক পাশে ননী গাছের নার্সারিও গড়ে তুলেছেন তিনি। বাকি অংশে ৬ ফুট দূরত্ব রেখে ননী গাছ রোপন করেছেন। ছোট-বড় মিলিয়ে তার বাগানে ২৮০টি পরিণত ননী ফল গাছ আছে। ৭০টিতে ননী ফল ধরেছে।
বাবুল আহাম্মেদ জানান, প্রথমে তিনি অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তিনি ননী ফল ও গাছের গুণাগুণের কথা জানতে পারেন। ভারতের কলকাতার ঝাউতলা নামক স্থানে ভেষজ উদ্ভিদ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হওয়ার খবর পেয়ে তিনি সেখানে গিয়ে অংশ নেন। দেশে ফিরে বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে ৫০টি ননী গাছের চারা কিনে এনে রোপণ করেন।
ননী গাছের বাগান দেখতে আসা হাসান মিয়া জানান, তিনি এ ফলের নাম আগে কখনো শোনেননি। ইন্টারনেট থেকে জানতে পারেন ননী ফল ও গাছের পাতা গ্যাস্ট্রিক ও চর্ম রোগের কাজ করে- তাই আগ্রহ নিয়ে বাবুল আহাম্মেদের বাগান দেখতে এসেছেন। যাওয়ার সময় একটা গাছ ও কিছু ফল কিনে নিয়ে যাবেন বলে জানান তিনি।
বাগান দেখতে আসা ফুলচান মিয়া, আনছের আলী, নয়ন সিকদার সহ আরও কয়েকজন জানান, ননী ফল সম্পর্কে জেনে তারা ৬-৭ বন্ধু পাশের এলাকা থেকে এসেছেন। এর আগে তারা এই ফলের খোঁজ করেও পাননি। এই ফল এলার্জি ও হাড়ের জয়েণ্টের ব্যথায় খুব উপকারী, উনার বাগান থেকে ননী ফল কিনতে এসেছেন।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আহসানুল বাশার জানান, বাবুল আহাম্মেদ তাদের একজন ভালো উদ্যোক্তা। তার চাষকৃত ননী ফল গাছে এবার ফল ধরেছে। এই ফল বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এই ফল খাওয়ার পদ্ধতি খুব সহজ। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। তারা এগুলো সংগ্রহ করে নিজেরাই জুস তৈরি করে খাচ্ছে। গুণাগুণের দিক থেকে ননী ফল ক্যান্সার প্রতিরোধক। পুরাতন বাতের ব্যথা নিরাময়ে এই গাছের ফল ও পাতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
তিনি আরও জানান, দেশে ভেজষ গাছ কমে যাচ্ছে। নিজেদের স্বার্থে ভেজষ গাছ লাগানো দরকার। ভেজষ উদ্ভিদে বাবুল আহাম্মেদের মতো উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসতে শুরু করেছে এটা আশার কথা।