জীবনের ৬১ বসন্ত পার করলেন সুবর্ণা মোস্তফা
বিনোদন ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১১:০৪ এএম, ২ ডিসেম্বর ২০২২ শুক্রবার
ফাইল ছবি
আশির দশকে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফা। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিনয়ের আঙিনায় মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছেন এই কিংবদন্তি অভনেত্রী। অভিনয় জগতের এই উজ্জ্বল নক্ষত্রকে নাট্যজগতের অনেকেই আইকন মানেন।
আজ এই গুণী অভিনেত্রীর জন্মদিন। জীবনের ৬১ বসন্ত পার করে এবার ৬২-তে পা দিলেন। বিশেষ এই দিনটিতে সহকর্মীসহ ভক্ত অনুরাগীরা নানা মাধ্যমে শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত করছেন। তবে এই দিনে বিশেষ কোন আয়োজন নেই তার। ঘরোয়া আয়োজনেই নিজের জন্মদিন পালন করবেন এই অভিনেত্রী।
চলতি বছর সুবর্ণা মুস্তাফার ক্যারিয়ারে যুক্ত হয়েছে কয়েকটি সাফল্যের পালক। অভিনয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য এই বছরই একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী। এরপর ঢাকা থেকে সংরক্ষিত নারী আসনে হয়েছেন আওয়ামী লীগের এমপি।
প্রখ্যাত অভিনেতা গোলাম মুস্তাফার মেয়ে সুবর্ণা মুস্তাফা ১৯৫৯ সালের ২ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা রাজধানী ঢাকাতেই। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। শৈশব থেকে বাবার অনুপ্রেরণাতেই সংস্কৃতির প্রতি ঝোঁক তৈরি হয়। নিজেকে জড়িয়ে নেন মডেলিং আর অভিনয়ের সাথে।
প্রথম দিকে মঞ্চে কাজ করলেও আশির দশকে টিভিতে অভিষেক ঘটে তার। মঞ্চ ও টিভি- দুই মাধ্যমেই জনপ্রিয়তা পান সুবর্ণা। ১৯৯০ সালে বিটিভিতে প্রচার হওয়া হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে বরকত উল্লাহর পরিচালনায় ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের মাধ্যমে তার জনপ্রিয়তা আরো বেড়ে যায়। ওই নাটকে আসাদুজ্জামান নূরের করা কালজয়ী চরিত্র বাকের ভাইয়ের নায়িকা মুনা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সুবর্ণা। সেই চরিত্র দিয়ে তিনি বাজিমাত করেছিলেন। তারপর নিয়মিতভাবেই তাকে হুমায়ূন আহমেদের নাটকে কাজ করতে দেখা যায়। তার মধ্যে দারুণ জনপ্রিয়তা পায় ‘আজ রবিবার’ নাটকটি।
সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী পরিচালিত ‘ঘুড্ডি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ১৯৮০ সালে বড় পর্দায় সুবর্ণার অভিষেক ঘটে। নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রে সাফল্য পেলেও তিনি নিয়মিত গড়পড়তা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি। কিছু জীবন ঘনিষ্ঠ চলচ্চিত্রে তার উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে মূলধারার কিছু সিনেমাতেও তার উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। আর ১৯৯২ সালে মুক্তি পাওয়া হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত মুস্তাফিজুর রহমানের ‘শঙ্খনীল কারাগার’ ছবি দিয়েও দর্শকদের মনে দোলা দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে আসাদুজ্জামান নূর ও ডলি জহুরের ছোট বোনের চরিত্রে অভিনয় করেন সুবর্ণা। ‘নয়নের আলো’ সিনেমাতে তার অভিনয় সব শ্রেণির দর্শককে নাড়া দিয়েছিল। ১৯৮৩ সালে ‘নতুন বউ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পান।
সুবর্ণা মুস্তাফা ব্যক্তিজীবনে ভালোবেসে দাম্পত্য গড়েছিলেন প্রয়াত অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদির সাথে। সেই সংসার ২০০৮ সালে ভেঙে গেলে তিনি পুনরায় বিয়ে করেন নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার বদরুল আলম সৌদকে। সুখেই কাটছে এই সংসার।
গুণী এই অভিনেত্রীর জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে কয়েকজন অভিনয় শিল্পী তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।
জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেতা মাসুদ আলী খান বলেন, আমার খুউব ভালো বন্ধু গোলাম মুস্তাফার মেয়ে সুবর্ণা মুস্তাফা। তাকে জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। সুবর্ণা একজন সংসদ সদস্যও। তার কাছে আমাদেরও প্রত্যাশাও অনেক। সুবর্ণা বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনের একটি উজ্জ্বল নাম। আমি সবসময়ই তার সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করি।
বরেণ্য অভিনেতা, নির্মাতা আফজাল হোসেন বলেন, একজন সুবর্ণা মুস্তাফা অভিনয়ে শুরু থেকেই পরিণত। সুবর্ণা মুস্তাফার মতো একজন শিল্পীর অভিনয়ে আনলিমিটেড ক্ষমতা থাকে। কিন্তু তা থাকলেও আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে শিল্পীদের অসহায়ত্বও থাকে। একটা সময় গেছে যখন সুবর্ণার অভিনয় দেখে দর্শক আনন্দিত হয়েছে। সুবর্ণাও কাজে নিয়মিত ছিল। কিন্তু এখন সময়টা এমন হয়ে গেছে যারা অভিনয়ে অভিজ্ঞ, আরও বেশি পরিপূর্ণ তাদের নিয়ে দর্শকের মনে রাখার মতো কাজ হয় না।
তিনি আরো বলেন, এটা যে কত বড় দুঃখজনক এবং কতটা হতাশার তা আসলে বলে বুঝানোর মতো নয়। আমি চাই সুবর্ণা মুস্তাফার অভিনয়কে দর্শক মনে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আরও ভালো ভালো কাজ হোক।
নন্দিত অভিনেত্রী ডলি জহুর বলেন, সুবর্ণার সঙ্গে আমার হৃদ্যতা আন্তরিকতা সবসময়ই বেশ ভালো। এখন আসলে আগের মতো তার সঙ্গে দেখাও হয় না, যোগাযোগটাও কম। তবে তাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি।
তিনি বলেন, বাবার কলম, অক্টোপাস থেকে শুরু করে শঙ্খনীল কারাগার-সিনেমা, একসঙ্গে আমরা অনেক কাজ করেছি। কত কত যে মধুর মধুর স্মৃতি আমাদের। সুবর্ণার মনটা অনেক বড়। তার জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা, দোয়া।