সাইবার নির্যাতনের শিকার দেশের ৫৯ শতাংশ শিশু
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১১:০৬ এএম, ২১ ডিসেম্বর ২০২২ বুধবার
সাইবার নির্যাতনের শিকার দেশের ৫৯ শতাংশ শিশু
দেশে সাম্প্রতিক সময়ে শিশু-কিশোরদের ইন্টারনেট আসক্তি আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ৫ থেকে ১৮ বছর বয়সসীমায় মোবাইল ব্যবহারকারীর হার ৫৫.৮৯ শতাংশ। এদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ শিশুই সাইবার নির্যাতনের শিকার।
এ ছাড়া ৫৬ শতাংশ কিশোর এবং ৬৪ শতাংশ কিশোরী অনলাইনে শিকার হচ্ছেন যৌন নিপীড়নের। সম্প্রতি ‘অনলাইনে শিশু নির্যাতন’ শীর্ষক এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের তত্ত্বাবধানে এই গবেষণা পরিচালিত হয়।
গ্রামীণ এলাকার ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৪৬০ জন শিশুর ওপর পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা যায়, বর্তমানে দেশের প্রায় ৩৩ শতাংশ শিশু ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তাদের মধ্যে কমপক্ষে একটি, দুটি বা তিনটি সাইবার নির্যাতনের শিকার হয় যথাক্রমে ৫৯ শতাংশ, ৩৮ শতাংশ এবং ২৬ শতাংশ শিশু। সাইবার দুনিয়ায় শিশুরা বেশি ৩৫ শতাংশ শিকার হয় উৎপীড়ন, উপহাস, গুজব কিংবা অপমানের। অসৎ উদ্দেশ্যে বেনামে যোগাযোগের শিকার ২৯ শতাংশ, যৌননিপীড়নমূলক বার্তা বা মন্তব্যের শিকার ১১ শতাংশ এবং যৌনতাপূর্ণ ছবি বা ভিডিওর মাধ্যমে ১৭ শতাংশ শিশু উৎপীড়নের শিকার হয়।
সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সরকারের নীতির কারণে, ইন্টারনেট ব্যবহারের হার অনেক বেড়েছে। কিন্তু ইন্টারনেট সম্পর্কে কম জ্ঞান এবং সঠিকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারার কারণে, অপরাধীরা ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইমো এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শিশুদের নির্যাতন করছে।
২০২১ সালে বাংলাদেশের শহর-গ্রামের নবম ও দশম শ্রেণির ৪৫৬ জন শিক্ষর্থীর উপর পরিচালিত অপর গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৬ শতাংশ কিশোর এবং ৬৪ শতাংশ কিশোরী ইন্টারনেটে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। শহরে শিশুদের মধ্যে ইন্টারনেটে যৌন নিপীড়নের ঘটনা গ্রামীণ শিশুদের চেয়ে দেড় গুণ বেশি। বিশেষ করে যেসব শিশু ফেসবুক, টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং চ্যাটরুম ব্যবহার করে, তাদের ইন্টারনেটে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
এ বিষয়ে মানসিক স্বাস্থ্যকর্মী ডা. ইশরাত সিদ্দিকী বলেন, যে কোনো পূর্ণাঙ্গ মানুষের ভিত্তি হলো শিশু বয়স। এমন বয়সে কোনো শিশুর মনে ক্ষত তৈরি হলে পরবর্তী জীবনে সেই ঘটনার নেতিবাচক প্রভাব তার ওপরে পড়বে। এতে ওই শিশু মারাত্মক মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকবে; যা থেকে তার পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার সৃষ্টি হতে পারে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩)-এর ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে মিথ্যা বা অশ্লীল কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে, যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয় অথবা রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়, তাহলে এগুলো হবে অপরাধ। এর শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদ- এবং সর্বনিম্ন ৭ বছর কারাদ- এবং ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা।
জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ বলছে পরিচালিত ‘বাংলাদেশের শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা’ শীর্ষক একটি জরিপে দেখা গেছে, ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ছেলেরা ৬৩ শতাংশ ও মেয়েরা ৪৮ শতাংশ। শিশুরা ইন্টারনেটে যে দুটি কাজ বেশি করে তা হলো- অনলাইন চ্যাটিং (বার্তা আদান-প্রদান) ও ভিডিও দেখা। বর্তমানে শিশুরা প্রতিদিন গড়ে ৩৩ শতাংশ সময় অনলাইন চ্যাটিংয়ে ও ৩০ শতাংশ সময় ভিডিও দেখায় ব্যয় করছে। ৭০ শতাংশ ছেলে ও ৪৪ শতাংশ মেয়ে অনলাইনে অপরিচিত মানুষের বন্ধুত্বের অনুরোধ গ্রহণ করে।