বাল্যবিয়ে রোধে অপ্রতিরোধ্য কৃষ্ণাঙ্গ শেরি জনসন
সালেহীন বাবু
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ১১:০৮ পিএম, ২৮ এপ্রিল ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ০৬:০৮ পিএম, ১ মে ২০১৮ মঙ্গলবার
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কালো চামড়ার এক দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নারী শেরি জনসন। দীর্ঘ সংগ্রামের পর তার কণ্ঠ এখন প্রকম্পিত হয় আদালতের দেয়ালে দেয়ালে। বাল্যবিয়ে রোধের তার কণ্ঠ ধ্বনিত হচ্ছে আমেরিকায়।
মাত্র ৮ বছর বয়সে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন তিনি। ১০ বছর বয়সেই গর্ভবতী হয়ে পড়েন। স্কুল জীবনের যবনিকা টানেন সে বছরই। পরে বয়স যখন ১১, তখন জোরপূর্বক সেই ধর্ষকের সঙ্গেই বিয়ে দেওয়া হয় তাকে। বড় হয়েছেন দুর্বিষহ জীবন নিয়ে। গোটা জীবনজুড়ে তাকে নিয়ে ছিল বিতর্ক, অপবাদ আর গঞ্জনা। এরপর চলে গেছে অনেক বছর। তার বয়স এখন ৫৮।
এখন তিনি ক্যাপিটল ভবনের করিডোর ধরে হেঁটে যান আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। তার দু চোখে উপচে পড়ে ক্ষোভ আর প্রতিজ্ঞা। ২০১৮ সালে মার্কিন আইনসভার সেশনে এক শীতের সকালে শেরি দেখা করলেন স্টেট সিনেটর লরেন বুকের সঙ্গে। এই সিনেটর বাল্যবিবাহ বাতিল বিলের একজন পৃষ্ঠপোষক। তার সঙ্গেই একসঙ্গে এই কাজে এগোবেন শেরি।
নিজের শৈশবে যে অত্যাচার ও দুঃস্বপ্ন তাকে বয়ে চলতে হয়েছে তা যেন আর কোনো শিশুর ভাগ্যে না আসে তার জন্যে বিগত ৫ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন শেরি। তিনি মার্কিন মুলুকের আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে কাজ করছেন। ২০১৪ সালে একবার ১৬ বছরের কম বয়সীদের বিয়ে প্রতিরোধে একটি বিল উঠেছিল ফ্লোরিডা হাউজে। কিন্তু পরে এটা সিনেটের কোথাও পৌঁছেনি। কিন্তু শেরির কণ্ঠ এখন বধিরের কান অবধি পৌঁছেছে। এর আগ পর্যন্ত তার জন্যে সমস্ত দরজাই বন্ধ ছিল।
গত বছর তার দেখানো পথে হাঁটতে শুরু করেছে টেক্সাস এবং ভার্জিনিয়া। নতুন আইনে তারা আর ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে দিতে পারবে না। কাজ করে যাচ্ছেন শেরি। এখন তার কাজের কোনো সীমা নাই, ব্যস্ততাও কখনও শেষ হবার মত নয়।
সিনেট অফিস ভবনের ২০২ নম্বর স্যুইট থেকে যেদিন শেরিল বেরিয়ে আসছিলেন, সেদিন তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন লরেন। সাইথ ফ্লোরিডার এই ৩৩ বছর বয়সী সিনেটর বুঝতে পারছিলেন, কালো চামড়ার নির্যাতিত সেই শিশুটি আজ মার্কিন মুলুকের ভবিষ্যত প্রজন্মের জীবন বাঁচিয়ে দিলেন।
পাতলা, শক্ত কোঁকড়ানো চুলে ঢাকা ৫৮ বছর বয়সী শেরি জনসন যে আসলেও সব আঘাত সহ্য করা নারী। এখন তো তার বাধ ভেঙেছে। এখন শুধু প্রতিরোধের পালা।